পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী والسيالا আবছা ভাবে আমার মনের মধ্যে উদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে কেমন একটু ভরও হ’ল। সরে পড়ি বাবা, দরকার কি আমার এ সবের মধ্যে থেকে ? কিন্তু পরদিন রাত্রে এক সময়ে আর শুয়ে থাকতে পারলাম না নিশ্চিস্ত মনে—উঠে যেতেই হ’ল । সেদিন আর একটি জিনিস লক্ষ্য করলাম—মেয়েমানুষটি যখন থাকে, তখন এক ধরণের খুব মৃদ্ধ সুগন্ধ যেন বাতাসে পাওয়া যায়—এ ক'দিনও এই গন্ধটা পেয়েছি, কিন্তু ভেবেছিলুম কোনও বন্ত ফুলের গন্ধ হয়তো । আজ বেশ মনে হ’ল এ গন্ধের সঙ্গে ওই মেয়েটির উপস্থিতির একটা সম্বন্ধ বর্তমান । এই রকম চলল আরও দিন-দশ-বারো । তার পরে সাধুর ডাক এল বরাকর না কোডাৰ্ম্মার এক গাড়োয়ালী জমিদার-বাড়িতে কি শান্তি-স্বস্ত্যয়ন করার জন্তে । সাধুজী প্রথমে যেতে রাজী হন নি, দু-দিন তাদের লোক ফিরে গিয়েছিল কিন্তু তৃতীয় বারে জমিদারের ছোট ভাই নিজে পান্ধী নিয়ে এসে সাধুকে অনেক খোশামোদ করে নিয়ে গেলেন। মনে ভাবলুম এ আর কিছু নয়, সাধুজী সেই মেয়েটিকে ছেড়ে একটি রাত্রিও বাইরে কাটাতে রাজী নন । কিন্তু নিকটে কোথাও বস্তি নেই, মেয়েটি আসেই বা কোথা থেকে ? আর সাধারণ সাওতাল বা বিহারী মেয়ে নয়—আমি অনেকবার দেখেছি সেটিকে এবং প্রত্যেক বারই আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে এ কোন বড় ঘরের মেয়ে, যেমনি রূপসী, তেমনি তার অদ্ভুত ধরণের অতি চমৎকার এবং দামী পরণ-পরিচ্ছদ । হঠাৎ আমার মনে একটা দুষ্ট বুদ্ধি জাগল। আমার মনে হয়েছিল মেয়েটিকে সাধুজীর হয়তো খবর দেওয়ার সুযোগ হয় নি—দেখাই যাক না আজ রাত্রে আসে কি না ? তখন ছিল অল্প বয়েস, তোমরা যাকে বল রোমান্স, তার ইয়ে তখন যে আমার যথেষ্ট ছিল, এতে তুমি আমাকে দোষ দিতে পার না । নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগে রাত্রে সেদিন আমি নিজেই গিয়ে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে রইলাম। মনে ভয়ানক কৌতুহল, দেখি আজ মেয়েটি আসে কি না । কেউ কোন দিকে নেই, নির্জন রাত্রি, মনে একটু ভয়ও হ’ল –এ ধরনের কাজ কখনও করিনি, কোন হাঙ্গামায় আবার না পড়ে যাই ! তখন আমি অপরিণতবুদ্ধি নিৰ্ব্বোধ যুবক মাত্র, তখন ঘূণাক্ষরেও যদি জানতাম অজ্ঞাতসারে ཧྥུ་ཡཱ།”“ সম্মুখীন হতে চলেছি তবে কি আর ছাতিমতলায় এক পঞ্চমুণ্ডির আসনে বলতে যাই ? তাও নয়, ও আমার অদৃষ্টের লিপি । সে-রাত্রির জের আমার জীবনে আজও মেটে নি। আমার মনের শাস্তি চিরদিনের জন্তে হারানোর স্বত্রপাতটি ঘটেছিল সেই কাল রাত্রে—তা কি আর তখন বুঝেছিলাম ! যাক ও-কথা । রাত ক্রমে গভীর হ'ল। পূব দিকের গাছপালার আড়াল থেকে চাদ উঠতে লাগল একটু একটু করে। আমার ডাইনেই বরাকর নদী, দুই পাড়েই শিলাখণ্ড ছড়ানে, তার ওপর জ্যোৎস্না এসে পড়ল। সেই নদীর পাড়েই-ছাতিমতলা ও পঞ্চমুক্তির আসন—আমি যেখানে ব’লে আছি । আমার বা দিকে খানিকট ফাঁকা ঘাসের মাঠ—তার পর শালবন শুরু হয়েছে। হঠাৎ সামনের দিকে চেয়ে আমি চমকে উঠলুম। আমার সামনে সেই মেয়েটি কখন এসে দাড়িয়েছে এমন নিঃশবে, এমন অতর্কিত ভাবে ষে আমি একেবারেই কিছু টের পাই নি ।