পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্নর দল ∶ bሥጫ অথচ আগেই বলেছি আমার একদিকে বরাকর নদীর জ্যোৎস্না-ওঠা শিলাবিস্তৃত পাড় আর একদিকে ফাক মাঠ। আসনে বসে পৰ্য্যন্ত আমি সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি—মাঠের দিকে। নদীর দিক থেকে আমার কাছে কারো আসা সম্ভব নয়—মাঠের দিক থেকে কেউ এলে আমার দৃষ্টি এড়ানোর কথা নয় । মেয়েটি যেখানে দাড়িয়ে, সেখানে আধ সেকেও আগেও কেউ ছিল না আমি জানি, আধ সেকেণ্ড পরেই সেখানে জলজ্যান্ত একটি রূপসী মেয়ের আবির্ভাব আমার কাছে সম্পূর্ণ ইন্দ্রজালের মত ঠেকল ব'লেই আমি চমকে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে সেই মৃদু মধুর সুগন্ধ ! আমার সারা দেহ-মন অবশ আচ্ছন্ন হয়ে উঠল ।“আমার জ্ঞানও বোধ হয় ছিল তার পর আর এক সেকেও । তার পরে কি ঘটল আমি আর কিছুই জানি না। যখন আমার আবার জ্ঞান ফিরে এল তখন ভোর হয়ে গিয়েছে। উঠে দেখি সারা-রাত সেই পঞ্চমুণ্ডির আসনেই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। নৈশ শীতল বায়ুতে বাইরে সারারাত পড়ে থাকার দরুণ গায়ে ব্যথা হয়েছে, গলা ভার হয়েছে। উঠে ধীরে ধীরে মন্দিরে চলে এলাম । এসে আবার শুয়ে পড়লাম । আমার মনে হ’ল আমার জর হবে, শরীর এত খারাপ । পরদিন সারাদিন কিছু না খেয়ে শুয়েই রইলাম আর কেবলই কাল রাত্রের কথাটা ভাবি । মেয়েটি কে ? কি ক’রে অমন নিঃশব্দে অতর্কিতে ওখানে এল ? এ তো একেবারে অসম্ভব। অসামান্ত রূপসী যে মেয়েটি, অজ্ঞান হয়ে পড়বার পূৰ্ব্বে ওই কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই তা আমি দেখে নিয়েছিলুম। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লামই বা কেন, এরও তো কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ খুজে পেলাম না! অথচ সেই কথা নিয়ে মনের মধ্যে তোলপাড় করাও সারাদিন আমার ঘুচল না। বিকেলের দিকে সাধুবাবাজী গাড়োয়ালী জমিদার-বাড়ি থেকে ফিরলেন । আমার জন্তে লাড্ড, কচৌড়ি এবং একটা মোট স্বতি চাদর এনেছেন–র্তার নিজের জন্তে জমিদার-বাড়ি থেকে ভাল একখানা পশমী আলোয়ান দিয়েছে । আমায় বললেন—শুয়ে কেন ? ওঠ—জিনিসগুলো রেখে দাও— অতিকষ্টে উঠে সাধুর হাত থেকে পুটুলিটা নিলাম। তিনি আমার দিকে চেয়ে বললেন— কি হয়েছে ? --অমুখ-বিসুখ নাকি ? কিছু জবাব দিলাম না । সাধু স্নান করতে গেলেন এবং এসে জমিদার-বাড়ির কাও কি রকম তারই সবিস্তারে বর্ণনা করতে লাগলেন । আমায় বললেন—তোমার কি হয়েছে বল তো ? অমন মনমরা ভাব কেন ? বাড়ির জন্তে মন-কেমন করছে বুঝি ? বলেছি তো বাবা, তোমরা ছেলে-ছোকরা, এপথে কি নামলেই নামা যায় রে বাপু ! বড় কঠিন পথ । সেই রাত্রে আমার খুব জর এল। কত দিন ঠিক জানি নী—অজ্ঞান অচৈতন্ত রইলাম । জ্ঞান হ'লেই দেখতাম সাধু শিয়রে বসে আছেন। বোধ হয় তারই সেবাযত্নে এবং দয়ায় সেবার ক্রমে সেরে উঠলাম। সেরে উঠে একদিন গাছতলায় বসেছি দুপুরের পরে, সাধু বললেন—ছেলেছোকরা কিনা, কি কাণ্ডট বাধিয়ে বসেছিলে বাপু ? এবার তো বাচতে নী—অতিকষ্টে বাচাতে হয়েছে। আচ্ছা বাপু, পঞ্চমুণ্ডির আসনে কি জঙ্গে গিয়েছিলে সেদিন রাত্রে ? আমি তো অবাক । কি ক’রে জানলেন ইনি ? আমি তো কোন কথাই বলি নি । হঠাৎ আমার সন্দেহ হ'ল, সেই অদ্ভুত মেয়েটির সঙ্গে নিশ্চয়ই সাধুর ফিরে এসে দেখা হয়েছে, সে-ই বলেছে। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন—ভাবছ আমি কি ক’রে জানলাম, না 7.আরে