পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)సిరి বিভূতি-রচনাবলী সামলাতে পারা বড় কঠিন । সাধুজী আমার মন্ত্র দিলেন এবং বললেন—বাবা, এ জায়গা থেকে তোমায় চলে যেতে হবে। তোমায় এখানে আমি আর রাখতে পারি নে। এক জায়গায় দু-জন সাধকের সাধনা হয় না। বেশ ভাল। আমিও তা চাই নে। আমার ভয় ছিল, হয়তে সাধুজীও মাতু পাগলীর মত হিপনটিজিম জানে, এবং খানিকটা অভিভূত ক’রে যা-তা দেখাবে আমায়। তারপর— আমি তারানাথের কথায় বাধা দিয়া বলিলাম—কেন, আপনি যে স্বচক্ষে পঞ্চমুক্তির আসনে কি মূৰ্ত্তি দেখেছিলেন তখন তো সাধু সেখানে ছিলেন না ? —তারপর আমার টাইফয়েড জর হয় বলি নি ? হয়তো পঞ্চমুণ্ডির আসনে যখন বসে, তখনই জর আসছে, সে-সময় জরের পূর্বাবস্থায় অসুস্থ মস্তিষ্কে কি বিকার দেথে থাকব— হয়তো চোখের ধাধা। জর ছেড়ে সেরে উঠে এ সন্দেহ আমার হয়েছিল, সত্যি বলছি। যাক সে কথা। তারপর সেখান থেকে চলে গেলাম বরাকর নদীর ধারে আর একটা নির্জন জায়গায় । ওখান থেকে পাঁচ-ছয় মাইল দূরে। একটা গ্রাম ছিল কিছু দূরে, থাকতাম গ্রামের বারোয়ার ঘরে। গ্রামের লোকে যে যা দিত তাই খেতাম, আর সন্ধ্যার পরে নদীর ধারে নির্জনে বসে মন্ত্র জপ করতাম । এই রকমে এক মাস কেটে গেল, দু মাস গেল, তিন মাস গেল। কিছুই দেথিনে। মন্ত্রের উপর বিশ্বাস ক্রমেই যেন কমে যাচ্ছে। তবুও মনকে বোঝালাম–ছ মাস পরে পূর্ণাহুতি ও হোম করার নিয়ম বলে দিয়েছিল সাধুজী। তার আগে কিছু হবে না। ছ মাসও পূর্ণ হ'ল। সাধুজী যেমন বলে দিয়েছিল, ঠিক সেই সব নিয়ম পালন করলাম। পদ্মাসনং সমাস্থায় মৎস্তেন্দ্রনাথ সম্মতম্। আমিযান্নৈঃ পুপঢ়ুপৈঃ সংপূজ্য মধুকুন্দরী বরাকর নদীর তীরে বসে ভাত রণধনুম, কই মাছ পোড়ালুম, আঙটপাতার পাতায় ভাত ও পোড়ামাছের নৈবিছি দিলাম। ডুমুরের সমিধ দিয়ে বালির উপর হোম করে ওঁ টং ঠং ঋং ই ক্ষং মধুমুদর্য্যৈ নমঃ এই মন্ত্রে আহুতি দিলাম। জাতিফুলের মালা নিতান্ত দরকার, কত দূর থেকে খুজে জাতিফুলের মালা এনেছিলাম—তার মালা ও চন্দন আলাদা কলার পাতার রেখে দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদন ক’রে ধ্যানে বসলাম—সারারাত কেটে গেল । বলিলাম—কিছু দেখলেন ? —কা কস্ত পরিবেদনা। ঘি, চন্দন, মিষ্টি কিনতে কেবল কতকগুলো পয়সার শ্রাদ্ধ হয়ে গেল। ধ্যান-জপ-হোমে কিছুই ফল ফললো না। রাগ ক’রে টান মেরে সব নৈবিদ্যি ফেলে দিলাম নদীর জলে। বেট সাধু বিষম ঠকিয়েছে। কোনো ব্যাটার কোনো ক্ষমতা নেই— যেমন মাতু পাগলী তেমনি এ সাধু। তন্ত্রটন্ত্র সব বাজে, খানিকটা হিপনটিজম জানে—তার বলে মুখ গ্রাম্যলোককে ঠকিয়ে খায়। এ-সব ভাবি বটে, জপটা কিন্তু ছাড়তে পারিনি, অভ্যেসমত ক’রেই যাই, ওটা যেন একটা বদ অভ্যেসে দাড়িয়ে গিয়েছিল। এ-ভাবে আরও মাস চার-পাচ কেটে গেল । একদিন সন্ধ্যার পরেই। রাত তখন হয়েছে সবে, আধ ঘণ্টাও হয়নি। আমি একটা গাছের তলায় বসে জপ করছি, অন্ধকার হ'লেও খুব ঘন হয় নি তখনও—হঠাৎ তীব্র কন্তুরীর গন্ধ অঙ্কুভব করলাম বাতালে। বেশ মন দিয়ে শুনে যাও। এক বর্ণও মিথ্যে বলি নি। যা যা