পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ' δ& .বিভূতি-রচনাবলী দিতেন—সত্যিকার বাচ বেঁচেছিলাম ঐ তিন মাস। এসব কথাও বলা এখন আমার পক্ষে বেদনাদায়ক। কত বেদনাদায়ক তুমি জান না, আমার জীবনের যা সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ তা পেয়েছিলাম ঐ তিন মাসে । দেবীই বটে, মানুষের সাধ্য নেই অমন ভালবাসা, অমন নিবিড় বন্ধুত্ব দান করা—সে এক স্বৰ্গীয় দান “সে তুমি বুঝবে না, তোমায় কি বোঝাব, তুমি আমায় অবিশ্বাস করবে, মিথ্যেবাদী না হয় পাগল ভাববে। হয়ত ভাবছ এতক্ষণ। তুমি কেন আমার স্ত্রীই আমার কথা বিশ্বাস করে না, বলে, আমার তান্ত্রিক সাধু পাগল ক’রে দিয়েছিল গুণজ্ঞান করে। কিন্তু সে সুখের প্রকৃতি ভীষণ তেজস্কর মদিরার মত । আমাকে তার নেশা দিনে দিনে কেমন যেন অপ্রকৃতিস্থ ক’রে দিতে লাগলো। কিছু ভালো লাগে না । কেবল মনে হয় কখন সন্ধ্যা নামবে বরাকর নদীর শালবনে, কখন দেবী মধুমুন্দরী নায়িকার বেশে আসবেন। সারারাত্রি কোথা দিয়ে কেটে যাবে স্বপ্নের মত, নেশার ঘোরের মত । আকাশ, নক্ষত্র, দিকবিদিকের জ্ঞান লুপ্ত হয়ে যাবে কয়েক প্রহরের জন্তে—কয়েক প্রহরের জন্তে সময় স্থির হয়ে নিশ্চুপ হয়ে স্থাণুর মত অচল হয়ে থেমে থাকবে বরাকর নদীতীরের বনপ্রাঙ্গণে । একদিন ঘটল বিপদ । একটি সাওতালী মেয়ে রোজ নদীর ঘাটে জল নিতে আসে—মুঠাম তার দেহের গঠন, নিকটেই বস্তীতে তার বাড়ি । অনেক দিন থেকে তাকে দেখচি, সেও আমায় দেখচে । সেদিন সে জল নিয়ে ফিরে যাচ্চে। আমায় তাদের বাকী বাংলায় বলে—ছেলে হয়ে হয়ে মরে যায়, তার মাদুলি আছে তোমার কাছে সাধুবাবা ? এমন ভাবে করুণ সুরে বল্লে—আমার মনে দয়া হোল। মাজুলি দিতে জানি একথা বলিনি, তবে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করেছিলাম। তারপর সে চলে গেল। মধুমুন্দরী দেবীকে সেদিন দেখলুম অন্ত মূৰ্ত্তিতে। কি ভ্ৰকুটি-কুটিল দৃষ্টি, কি ভীষণ মুখের ভাব ! সে মুখের ভাব তুমি কল্পনা করতে পারবে না—চণ্ডিকা দেবীর রোষকটাক্ষে যেমন লোলজিহা, করালিনী প্রচণ্ড কালভৈরবী মূৰ্ত্তির স্বষ্টি হয়েছিল—এও যেন ঠিক তাই। সেদিন বুঝলুম আমি যার সঙ্গে মেলামেশা করি, সে মানুষ নয়-মানুষের পর্যায়ে সে পড়ে না। মানবী রাগ যতই করুক সে করালিনী হয় না, পিশাচী হয় না—মানবীই থেকে যায়। ভীষণ পূতিগন্ধে সেদিন শালবন ভরে গেল—প্রতি দিনের মত কস্তুরীর সুবাস কোথায় গেল মিলিয়ে । তারপর এলেন মধুসুন্দরী দেবী—দেখেই মনে হোল এরা দেবীও বটে, বিদেহী পিশাচীও বটে। এদের ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম নেই, সব পারে এরা। যে হাতে নায়িকার মত ফুলের মালা গীথে, সেই হাতেই বিনা দ্বিধায়, বিনা অসুশোচনায়, নিমেষে ধ্বংস ক’রতে এরা অভ্যন্ত । আমার ভীষণ ভয় হোল । পিশাচী মধুমুন্দরী তা বুঝে বল্লে—ভয় কিসের ? বল্লুম-ভয় কই ? তুমি রাগ করেছ কেন ? খল খল অট্টহাস্তে নির্জন অন্ধকার ভরে গেল। আমি শিউরে উঠলাম । পিশাচী বলে—শব চিনতে পারবে ? অন্ধকার রাত্রে সাওতালদের কোনো বৌয়ের শব তোমার সামনে দিয়ে যদি জলে ভেসে যায়—চিনতে পারবে ? তুমি না যদি চিনতে পারে, দুটি শবে জড়াজড়ি ক’রে ভেসে থাকলে অন্ত লোকে সকালে নিশ্চয়ই চিনবে। হাত জোড় করে বল্লুম-দেবি, তোমায় ভালবাসি। ও মূৰ্ত্তি আমায় দেখিও না—আমায় মারো ক্ষতি নেই—কিন্তু অন্ত কোন নিরপরাধিনী স্ত্রীলোকের প্রাণ কেন নেবে ? দয়া করে। বহু চেষ্টায় প্রসন্ন করলুম। তখন আবার ষে দেবী, সে দেৰী । বলেন—সেই সাওতালের