পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯৪ वेिङ्कडि-ब्रानांदलैौ গভীর রাত্রে বাধন ছিড়ে ওদের হাত থেকে লুকিয়ে পালিয়ে সেই একটি রাত মধুমুন্দরী দেবীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। দেবীকে বললাম—আমি এই নদীতীরের তীর্থস্থান ছেড়ে কোথাও যাব না। তিনি নিষ্ঠুর হাসি হেসে বললেন—যেতে হবেই, এই আমার অদৃষ্টলিপি। অদৃষ্টের বিরুদ্ধে তিনি অত বড় শক্তিশালিনী যোগিনী হয়েও যেতে পারেন না। তিনি জানেন, এই রাতের পরে জীবনে তার সঙ্গে আর কখনও দেখা হবে না। আগে থেকে বলে তৈরী ক’রে রাখতে চেয়েছিলেন এই জন্তেই । - দেবী ত্রিকালজ্ঞ, তাকে জিজ্ঞেস করি নি কি ক’রে তিনি একথা জানলেন । হ’লও তাই, বাড়ি আসার পরে সবাই বললে কে কি খাইয়ে পাগল ক’রে দিয়েছে। দিনকতক উন্মাদের চিকিৎসা চলল—বছর খানেক পরে আমার বিয়ে দেওয়া হ’ল । সেই থেকেই আমি সংসারী। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম—আর কখনো মন্ত্র জপ করে তাকে আহবান করেন নি কেন ? —বাপ রে । এ কি ছেলেখেলা ? মারা যাব শেষে ! অন্ত নারী জীবনে এলে তিনি দেখা দেবেন ? সে-চেষ্টাও কখনো করিনি। সে কতকাল হয়ে গেল, সে কি আজকার কথা ? —আচ্ছ, এখন আর তাকে দেখতে ইচ্ছে হয় না ? বৃদ্ধ তারানাথ উৎসাহে, উত্তেজনায় বালিশ বুকে দিয়া খাড়া হইয়া উঠিয়া বসিল । —ইচ্ছে হয় না কে বলেছে ? বললুম তো ঐ তিন মাসই বেঁচে ছিলাম। দেবী এসেছিলেন মানুষী হয়ে । এদিকে যড়ৈশ্বৰ্য্যশালিণী শক্তিরূপিণী যোগিনী, তেজে কাছে ঘোষা যায় না— অথচ কি মানবীই হরে যেতেন, যখন ধরা দিতেন আমায় ! প্রিয়ার মত আসতেন কাছে, আমনই মিষ্টি, অমনই ঠোঁট ফুলিয়ে মাঝে মাঝে অভিমান,বরাকর নদীর ধারের শালবন রাত্রির পর রাত্রি র্তার মধুর হাসিতে জ্যোৎস্নার মত উজ্জল হয়ে উঠতেী—এমনি কত রাত ধরে । এক-এক সময় ভ্রম হত তিনি সত্যিই মাহুৰীই হবেন। বিদায় নিয়ে যাবার সেই রাতটিতে বললেন—নদীতীরের এই তিন মাসের জীবন আমিও কি ভুলবো ভেবেছ ! আমাদের পক্ষেও সুলভ এ নয়, ভেবো না আমরা খুব সুখী। আমাদের মত সঙ্গীহারা, বন্ধুহারা জীব কোথায় আছে ? প্রেমের কাঙাল আমরাও। কত দিন পরে একজন মামুষে আমাদের সত্যিকার চাওয়া চায়, তার জন্তে আমাদের মন সৰ্ব্বদা তৃষিত হয়ে থাকে কিন্তু তাই ব'লে নিজেকে সহজলভ্য করতে পারিনে, আগ্রহ ক'রে যে না চায় তার কাছে যাই নে, সে আমার প্রেমের মূল্য দেবে না, নিজেও আনন্দ পাবে না, যা কিনা পাওয়া যায় বহু চেয়ে পাওয়ার পরে। কিন্তু আমাদের অদৃষ্টলিপি ; কোথাও চিরদিন থাকতে পারিনে—কি ন-কি ঘটে যায়, ছেড়ে চলে যেতে হয় অনিচ্ছাসত্ত্বেও । ক’জন আমাদের ডাকে ? ক’জন বিশ্বাস করে ? স্বর্থী ভেবো না আমাকে । বলিলাম—এত যদি মুখের ব্যাপার তবে আপনি ভয়ঙ্কর বলেছিলেন কেন আগে ? —ব্যাপার ভয়ঙ্কর এই জন্তে যে আমার সারাজীবনটা মাটি হয়ে গেল ঐ তিন মাসের মুথভোগে । কোন দিকে মনই দিতে পারিনে—মধ্যে তো দিন-কতক উন্মাদ হয়েই গিয়েছিলাম, বিয়ের পরেও। তারপর সেরে সামলে উঠে এই জ্যোতিষের ব্যবসা আরম্ভ ক’রে যা হয় একরকম—সেও দেবীরই দয়া । তিনি বলেছিলেন, জীবনে কখনও অন্নকষ্টে আমায় পড়তে হবে না। পড়তে কখনও হয়নি—কিন্তু ওতেই কি আর আনন্দ দেয় জীবনে ? তারানাথ গল্প শেষ করিয়া বাড়ির ভিতরে যাইবার জন্ত উঠিল । আমিও বাহির হইয়া ধৰ্ম্মতলার মোড়ে আসিলাম। এত অদ্ভুত, অবাস্তব জগৎ হইতে বিংশ শতাব্দীর বাস্তব সভ্যতার জগতে আসিয়া যেন হাফ ছাড়িয়া বাচিলাম। যতক্ষণ তারানাথ গল্প বলিয়াছিল ততক্ষণ ওর