পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্নর দল * ఏt চোখমুখের ভাবে ও গলার স্বরে গল্পের সত্যতা সম্বন্ধে অবিশ্বাস জাগে নাই—কিন্তু ট্রামে উঠিয়াই মনে হইল— কি মনে হইল তাহা আর না-ই বা বলিলাম ক্ষ ডাইনী অফিস থেকে ফিরে দেখলুম স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে। চমকে গেলুম খুবই-ভয়ও পাইনি যে তা নয়। বিজুকে তো কখনও ভরসন্ধ্যেবেলা এমন করে সংসারের কাজকৰ্ম্ম ফেলে শুতে দেখিনি। মেয়ের আবার কি বিপদ হোল ? ভয়ে ভয়ে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলুম, “ব্যাপার কি বিজু ?” বিজু কোন উত্তর দিলে না। তার কপালে হাত দিয়ে দেখলুম জর হয়েছে কি না। না, শরীরে উত্তাপ তো স্বাভাবিক। তবে ? স্ত্রীর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ডাকলুম, “বিজু!” এতক্ষণ পর বিজু কথা বল্লে, “কদিন থেকে বলছি এ অলুক্ষণে বাড়িটা বদলে ফেলে, বদলে ফেলো । তা যদি কথা কানে করবে। কলকাতায় কি আর বাড়ি আছে " সত্যি বটে বিজু ক'দিন থেকে বাড়ি বদল করবার জন্য তাগাদা করছে ; কিন্তু বাড়ি বদল করা তো আর সোজা কথা নয়। ভুক্তভোগী মাত্রেই জানে। সুতরাং কথাটা তেমন গ্রাহ করিনি। বললুম, “এ বাড়ি কি দোষ করেছে ?” ব্যস বিজু যেন ফেটে পড়ল, “দোষ করেছে –চারিদিকে সব ডাইনী। একটা মেয়ে নিয়ে যাওবা ঘর কচ্ছি, তা যদি ওদের সহি হয় !" “ডাইনী !" আমি ওসব অন্ধ বিশ্বাসকে প্রশ্রয় দিই না কানেও । “তা বিশ্বাস হবে কেন ? দেখ দিখি আজ দুপুরের থেকে শানি কিছু মুখে করছে না। যা খাচ্ছে তাই তুলে ফেলছে।" আমার মাথা ঘুরে গেল। শানি আমার আড়াই বছরের মেয়ে। তার ওপর ডাইনী বুড়ীর কোপ গিয়ে পড়ল কোন দুঃখে । বিজু তখনও বলে চলেছে, “আচ্ছ ওদের কি চক্ষুলজ্জাও নেই একটুও "ি আমি বল্লুম, “তা ডাইনীকে কোথায় দেখলে শুনি ?” “ঐ ওখানে " অঙ্গুলি সম্বেতে বিজু পাশের বাড়ির একটা ঘর দেখিয়ে দিলে। তার সন্দেহ দেখে আমার সর্বাঙ্গ রী রী করতে লাগলো। আমি অস্ফুট স্বরে বল্লুম, “কমলা ?” “হ্যা গো হ্যা ! বিশ্বাস হয় না ?" “আশ্চর্য্য ।” "আশ্চৰ্য্য কিছুই নয়। কদিন থেকে দেখছি ওর ঐ সোহাগ আদর—পোড়াকপালীর কপাল যখন পোড়া তখন অপরের কাচ্চাবাচ্ছার ওপর নজর দেওয়া কেন ?" আমি বিজুর প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পায়লুম না। মাসখানেকের কথা মনে পড়ল । একদিন ঐ পাশের বাড়ির ঘরটার কমলা চীৎকার করে উঠলে, “ওরে শোভা রে, তুই কোথায় গেলি রে ? আমার এমনি করে ফাকি দিলি কেন রে ?”

  • তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প, জন্ম ও মৃত্যু। বিভূতি-রচনাবলী ৫ম খণ্ড দ্রষ্টব্য