পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী رالا لا রাত তখন প্রায় দশট, আমি খেতে বসেছি। বিজু আমায় দুধের বাটিটা এগিয়ে দিতে দিতে বলে, “পাতের গোড়ার একটু জল দাও।” আমি বল্লুম, “কমলা কাদছে না ?” “আগে পাতের গোড়ায় জল দাও দিকি ৷” সত্যি কমলা কাদছে সারা মাতৃ-হৃদয় মথিত করে কন্যার বিচ্ছেদ বেদনায় । দু'মাস আগে শোভা এসেছিল মর্ত্যলোকে আর আজ চলে গেল মায়ামমতার পাশ ছিন্ন করে । হয়ে পৰ্য্যস্ত মেয়েট রোগে রোগে ভূগেছে। সৰ্ব্বাঙ্গে তার ঘা—বড় বড় দাগ দাগ । পুজের গন্ধে কাছে যাওয়া যায় না। কিন্তু কমলা সমস্ত ঘৃণা তুচ্ছ করে শোভার সেবা করেছে দুহাতে । তার ফলে নিজের গারেও স্থানে স্থানে ঘা হয়েছে—সে সব গ্রাহ করেনি একটুও । সারা হৃদয় নিয়োজিত করেছে তার প্রাণসদৃশ শোভাকে আরোগ্য করবার প্রচেষ্টায়। বড় বড় ডাক্তার কবিরাজ দেখানো হোল—রোজা এসে ফোড় কাটলো—অসংখ্য দেবতার কাছে মানত করা হোল । চেষ্টার কোন ত্রুটি রইলে না ; কিন্তু সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ প্রতিপন্ন করে রাত দশটায় শোভা মহানিদ্রায় আক্রান্ত হোল। মা বুকের ওপর লুটিয়ে পড়ে শতবার নাড়াচাড়া করে তাকে সজাগ করবার চেষ্টা করলে—বিনিয়ে বিনিয়ে তার প্রস্থানের জন্যে অনুশোচনা করলে সারারাত্রি প্রায় । - সে ঘটনার মাসখানেক পর কমলা নাকি শানিকে দেখে একদিন কেঁদে ফেলে—বুকের একটা গভীর দীর্ঘনিঃশ্বাস চাপতে পারেনি। তার নিঃশ্বাসের শব্দে আমার স্ত্রীর চিত্ত বিচলিত হয় । আস্তে আস্তে খুকিকে নিয়ে সরে আসে পাশের ঘরে । আমি তখন অফিসের হিসেবপত্র মেলাচ্ছি। বিজু আমার পাশে এসে বসলো। আমি চশমাট আস্তে আস্তে চোখ থেকে খুলে বলি, “কিছু বলবে নাকি ?” “না এমন কিছু নয় ।” আমি হাসি, বলি, “ত, ঐ এমন সামান্ত কিছুই শুনি না কেন ?" "সত্যি, তোমার আবার এ সবে বিশ্বাস হয় না।" “আ, কৌতুহলই তো বাড়িয়ে দিচ্ছ কেবল " “তুমি এ বাড়ি বদলাও।” "কারণ ?” “কমলা রোজ রোজ শানির পানে তাকিয়ে ফোস ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলবে আর কাদবে। বাছার আমার অকল্যাণ হবে তাও বুড়ো মাগী ভুলে যায় ।” “পাগল!" আমি হাসতে লাগলুম। “ঐ তো! তুমি সব কথা উড়িয়ে দাও কেবল। কপাল যখন পোড়া তখন অপরের ছেলেমেয়েদের ওপর নজর দেওয়া কেন বাপু ?” বিজু আমার কাছ থেকে চলে যায়—আমি ওসব বিশ্বাস করি না বলেই হয়তো। আমার মাথার মধ্যে বিজুর সেই শেষ কথা কেবল ভাসতে লাগলো, কপালপোড়া’ । বাস্তবিকই কি কমলার কপাল পোড়া—বিধাতাপুরুষ তার প্রতি অপ্রসন্ন ? এই রুগ্ন মেয়ে প্রসব করবার জন্তে দোষী কে ? কমলা ? একটুও নয়। আমি জানি কমলার স্বামীর দুরারোগ্য সিফিলিস রোগ বৰ্ত্তমান। একথাও জানি যে, সেই মহাপুরুষ প্রায়ই রাত্রিবেলা বাড়ি ফেরেন না। বাপ-ঠাকুরদা অনেক পয়সা জমিয়ে গেছে। তাই ব্যয় করে সে ফুরিয়ে উঠতে পারছে না। তবুও লোকে দোষ দেবে কমলাকে। আমার স্ত্রী অন্ধ-বধির, সে অকারণ পুরুষদের প্রতি সৰ্ব্বদাই সদয়, কমলার স্বামীর দোষ সে দেখে না। কারণ পুরুষ পুরুষের শক্র,