পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किन्नन्न झल ᎼᎽᏄ আর নারী নারীর শত্র । এ হেন কমলা শানি হবার দিন সাতেক পরে প্রায় একটি প্রাণহীন মাংসপিণ্ড প্রসব করে। নিজের ব্যর্থতার বেদনায় মুষড়ে পড়ে কমলা কাদলে, চীৎকার করলো—দু'দিন বিছানা থেকে উঠলো না, খেল না—চোখ ফুলিয়ে ফেললে৷ কেঁদে। তারপর একদিন নজর পড়ল শানির ওপর। শানির পানে তাকিয়ে ওর ব্যর্থতার কথা পুনরায় স্মরণ হোল, পুনরায় যেন কে ওর ক্ষতে আঘাত করলে, নিজের অজ্ঞাতসারে একটি ব্যথিত দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করলে। আমার স্ত্রী শিউরে উঠলো। সে শানিকে নিয়ে সেখান থেকে চলে এল। অযথা সেই দিন থেকে শানিকে কমলা ভালবাসলে । এরপর অনেক মাদুলি ধারণ করে, অনেক গ্রহ উপগ্রহকে ঘুষ দিয়ে অনেক নির্দিষ্ট গাছে ঢ়িল ঝুলিয়ে কমলা আবার অন্তঃসত্ত্বা হলো—আবার সে ক্ষুধিত মাতৃ-হৃদয় দিয়ে অনুভব করল তার গর্ভস্থ ভ্রণের স্বহ্ম সত্তা। আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলুম, “প্ৰভু ওকে আর বঞ্চিত করো না ।" তিনি হয়তো আমার প্রার্থনায় সাড়া দিলেন । কমলার মেয়ে হোল। আবার সে তার পুরোনো হাসি ফিরিয়ে পেল। মেয়েকে মানুষ করতে লাগলো বহু প্রয়াসে। কিন্তু এ খুকীও বঁচিলো না। তার এই পৃথিবীর আবহাওয়াটা সইল না। এ কথা আমি আগেই বলেছি, সেই সঙ্গে আরও বলেছি যে কমলা তার শোক ভুলে আবার আমাদের শানির পানে ফিরে তাকাল, আবার তার বুকে আঘাত লাগলো। সে দু'হাত বিস্তার করে শানির দিকে ছুটে এল। আমার স্ত্রী ভাবতে লাগলো এর হাত থেকে রেহাই পাবার কথা। অগত্য আমাকে বাড়ি বদল করবার জন্তে অনুনয় বিনয় করতে লাগলো খুবই। যেহেতু আমি ওসব অযৌক্তিক কিছু বিশ্বাস করি না—সেই জন্তে আমি তার কথা উপেক্ষা করেছিলুম। যাই হোক, কমলা একদিন জিজ্ঞেস করলে, “শানি কই ভাই ?” আমার স্ত্রী আজকাল বড় একটা শানিকে কমলার সামনে বার করে না । শানি তখন আরামে নিদ্রা যাচ্ছে । আমার স্ত্রী বললে, “শানির অমুখ করেছে ।" আমি পাশেই চেয়ারে বসেছিলাম। স্ত্রীর এই মিথ্যা কথা শুনে চমকে গেলুম। কমলা ভয়াৰ্ত্ত স্বরে বল্লে, “কি অমুখ ভাই ?” “এই সামান্ত জর ” “ডাক্তার দেখাচ্ছে ?” “না। দেখাবো ।" “না ভাই দেরি কোরো না একটুও। ভালো ভাক্তার দেখাও । যে দিনকাল পড়েছে। ফেলে রাখা একটুও উচিত নয়।” ও চলে গেল। ওর গলার স্বর ঈষৎ কম্পিত হোল—আমি বেশ বুঝতে পারলুম। আমি স্ত্রীকে বল্লুম, “এ মিথ্যে বলে কি লাভ ?” “তুমি থামো দিকি " সুতরাং আমি নীরব হই আর স্ত্রী বলে চলে, “পঞ্চাশ দিন বলছি বাড়ি বদল কর, বাড়ি বদল কর। সে কথা যদি গ্রাহ হয় ।” তার পরের দিন দুপুর বেলা কমলা নাকি এসেছিল শানিকে দেখতে । শানির অমুখের খবর পেয়ে সে চুপ করে থাকতে পারেনি। সারাদিন সে খুকীকে কোলে করে ছিল, আমার স্ত্রীর সমস্ত বিপরীত চেষ্টা ব্যর্থ করে। আমি আসবার ঘণ্টা তিনেক আগে এখান থেকে চলে গেছে। আমি অফিস থেকে ফিরে বিজুকে আর শানিকে ঐ অবস্থায় দেখলুম। বিজু বললে, “কি ছাই বেদান খাইয়ে গেল ! তারপর থেকে বাছ আমার কিছু মুখে করছে না।”