পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃষ্টি-প্রদীপ * জানে কি ? ওইটুকু ছেলে গল টিপলে দুধ বেরোয়, উনি আবার আমার শাস্তর বোঝাতে আসেন ! শিখবি কোথেকে, তোর মা তোদের কি কিছু শিখিয়েচে, না কিছু জানে ? পয়সা রোজগার করেচে আর দু-হাতে উড়িয়েচে তোর বাবা—মদ খেয়ে খিরিস্টানি কোরে— বুড়ী বললে—মোলোও সেই রকম। যেমন-যেমন কৰ্ম্মফল তেমন-তেমন মিত্যু! দশেধক্ষ্মে দেখলে সবাই, যে কক্ষের যে শাস্তি—ঘর থেকে মড়া বেরোয় না, ও-পাড়ার হরিদাস না এসে পড়লে ঘরের মধ্যেই পড়ে থাকতো— to বাবার মৃত্যু সম্পর্কে এ কথা বলতে আমার রাগ হ'ল। তার মরণের পরে এখন তার কথা ভেবে আমার কষ্ট হয়, যদিও সে কথা কাউকে বলিনে। বললাম—ভাল মরণ আর মন্দ মরণ নিয়ে বাহাদুরি কি দিদিমা ? এই তো মাঘ মাসে ওই তেঁতুলতলায় যাদের বাড়ি, ওই বাড়ির সেই বুড়ো গাঙ্গুলীমশায় মারা গেলেন, তিনি তো খুব ভালমানুষ ছিলেন সবাই বলে, পুকুরের ঘাটে এক বেলা দাড়িয়ে দাড়িয়ে আহ্নিক করতেন, তবে তিনি পেনসন আনতে গিয়ে ও-রকম ক'রে সেখানে মারা গেলেন কেন ? সেখানে কে তার মুখে জল দিয়েচে, কে মড়া ছু রেচে, কোথায় ছিল ছেলেমেয়ে, ও-রকম হ’ল কেন ? আমার বোকামি, আমি ভেবেছিলাম ঠিকমত যুক্তি দেখিয়ে’বুড়ীকে তর্কে হারাবে, কিন্তু তার ধরনের ঝগড়ায় মজবুত পাড়াগায়ের মেরে যে অত সহজে হার মেনে নেবে, এ ধারণা করাই আমার ভুল হয়েছিল । সে যুক্তির পথে গেলই না । —মরুক বুড়ে গাঙ্গুলী, তবুও খবর পেয়ে তার ছেলেজামাই গিয়ে ভাকে এনে গঙ্গার দিয়েছিল, তোর বাবার মত দোগেছের মাঠে ডোবার জলে আধ-পোড়া ক’রে ফেলে রেখে আসেনি ! আমি সব জানি, আমায় ঘাটাসনে, অনেক আছিানাড়ির কথা বেরিয়ে যাবে। কাঠ জোটেনি, খেজুরের ডাল দিয়ে পুড়িয়েছিল, সব শুনেচি আমি । দোগেছের মাঠে সন্দের পর লোক যায় না, সবাই বলে এখনও ভূত হয়ে— 戰 কথা সবই সত্যি, শেষেরটুকু ছাড়া। ঐটুকুর ওপরই জোর দিয়ে বললাম—মিথ্যে কথা, বাবা কখখনো—তার যুক্তির অকাট্যতা প্রমাণ করবার জন্যে এমন একটা কথা বলে ফেললাম যা কখনো কারুর কাছে বলিনি বা খুব রেগে মরীয়া না হয়ে উঠলে বলতামও না এদের কাছে । বললাম—জানেন, আমি ভূত দেখতে পাই, অনেক দেখেচি, বাবাকে তা হলে নিশ্চয়ই দেখতে পেতাম, জানেন ? চা-বাগানে থাকতে আমি কত— এই পৰ্য্যন্ত বলেই আমি চুপ করে গেলাম। দিদিমা খিলখিল ক'রে হেসেই খুন –হি হি, এ ছোড়াও পাগল ওর বাপের মত—হি হি—শুনেচে বউম, হি হি—কি বলে শুনেচে একবার— জ্যাঠাইমা বললেন—যা এখান থেকে এই মুড়ির বাটি তুলে ধুয়ে নিয়ে আর পুকুর থেকে এখানটা গাড়ীর জল দিয়ে ঘুরে দে। আমার কাপড়খানাও কেচে নিয়ে আয় আমনি, তোর সঙ্গে কে এখন সন্দে অবধি অক্কো করে ? তবে বলে দিচ্ছি, হিন্দুর ঘরে হিন্দুর মত ব্যাভার না করলে এ বাড়িতে জায়গা হবে না। পষ্ট কথায় কষ্ট নেই। কই আমাদের বুলু, তুষ্টি, হাবু কি সতীশ তো কখনো এমন করে না, যা বলি তখুনি তাই তো শোনে, কই এক দিনের জন্যেও তো— দিদিমা বললেন—ওমা ; বুলু, হাবু, সতীশের কথা বলেন, তারা আমার বেঁচে থাক, সোনার চাদ ছেলেমেয়ে সব । তারা হিন্দুয়ানির যা জানে ওর মা তা জানে না তো ও ! সে দিন সতীশকে বলছি, সতু দাদাভাই, তেলের ভাড়টা বাইরের উঠোনে নিযু কলুকে দিয়ে এসে