পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)నty বিভূতি-রচনাবলী আমি বিজুর পানে ফ্যাল ক্যাল করে তাকিয়ে রইলুম। সে আমার হাত দুখান চেপে ধরে করুণ স্বরে বললে, “তুমি আজই বাড়ি বদল কর । নয় আমার বাপের বাড়ি রেখে এসে । ও রাক্ষুসী আবার কালই আসবে বলে গেছে।" আমার কানের মধ্যে কে যেন গরম সীসে ঢেলে দিলে, ঘরের মধ্যে আর কোন শব নেই। সব কিছু নিথর নিস্তব্ধ। আমি বিচার করতে বসলুম। শানির অসুখের জন্তে বাস্তবিক দায়ী কে ? কমলা না আমার স্ত্রী ? মিথ্যা একজনের বুকে আঘাত করলে, বিধাতার বিচারালয়ে তার কি কোন শাস্তি নাই ? বিধির বিধান কি নিরর্থক শব্দসমষ্টি মাত্র ? এমন অন্ধকারে নীড় হারিয়ে একটা কাক ক-ক-কণ রবে ডেকে উঠলো। আমি শানির গায়ে কপালে হাত বুলাতে লাগলুম। আমার বেশ মনে পড়লে ক'দিন ধরে শানির অনবরত টক লেবু খাওয়ার কথা । শানির রোগের কারণ দিনের আলোয় প্রকাশিত হোল। ঐ কচি মেয়ে অত অ্যাসিড সহ করতে পারে ? ঠিক সেই মুহূৰ্ত্তে ছাদের ওপর একটি বিড়াল করুণ মুরে বিলাপ করতে লাগলো। সম্প্রতি তার একটি সন্তান মারা গেছে। আমার স্ত্রী চমকে উঠে আমায় অনুরোধ করলে, “আগে বেড়ালটাকে দূর করে এস—আগে ওকে দূর করে দাও।” আমি তার অনুরোধ শুনলুম না। বিজু কঁদিলো ফুলে ফুলে, “তবে আমায় দূর করে দাও । আমি পথের ধুলো—আমি কেউ নয়—আমায় গ্রাহ হয় না একটুও " একটু সুস্থ হয়ে শানিকে ডাক্তারবাড়ি নিয়ে গেলুম। ডাক্তার এক ডোজ ওষুধ দিলে। সেটা খাইয়ে দিলুম যথাসময়ে। বিজু সারারাত্রি মেয়েকে বুকে করে নিয়ে রইলো, আর আমার অবিশ্বাস দেখে দুঃখ প্রকাশ করলে, “বললুম, পীরের কাছ থেকে জলপড়া নিয়ে এস। তা হোল না । ডাক্তার-বছি কি এসব সারাতে পারে ?" কিন্তু বিজুর কথাই মিথ্যা হোল। ডাক্তার আশ্চৰ্য্য রকমে শানিকে নিরাময় করলে। সকাল বেলা শানি আবার তার সহজ সরল পূৰ্ব্ব স্বাস্থ্য ফিরে পেল। আবার সে খেতে লাগলে, হাসতে লাগলো। অফিস যাবার সময় বিজুকে বললুম, “ডাইনীর হাত থেকে যখন শানি রেহাই পেল তখন কমলাকে ক্ষমা করো।" বিজুর যেন অসহ হোল আমার কথ, বললে, “মাইরি বলছি, তুমি আমায় পাগল করে দেবে। কালকের মধ্যে যদি না বাড়ি বদলাও, তা’হলে সত্যি সত্যি আমি বাপের বাড়ি চলে যাবো ।” অগত্য সেই শনিবার দিনই রাত্রে বাড়ি ঠিক করে ফিরলুম। পরের দিন জিনিসপত্র নিয়ে উঠে গেলুম নতুন বাসায়। পরের জন্তে—স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে সংসারের শাস্তি নষ্ট করতে আমি নারাজ । বুধীর বাড়ি ফেরা ঘোর দুঃস্বপ্ন হইতে বুধী জাগিয়া উঠিল। সে একটু ঘুমাইয়াছিল কি ? হয়তো তার খেয়াল নাই। এ কোন ভীষণ জায়গায় তাহাকে আনিয়া ফেলা হইয়াছে ? চারিদিকে বিত্ৰ ইটের দেওয়াল ও ময়লা-ময়লা-“অপরিষ্কার মেঝে । একটু আলো বা হাওয়া আসিবার উপায় নাই। আর কি ভিড় ! এত ভিড়, এত ঠাসাঠাসি বুধীর জীবনে কখনো দেখে নাই—এত