পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किम्लन्न ठिन పిసిన ভিড়ে আর এই গুমট গরমে প্রাণ যে তার বাহির হইয়া গেল ! এত ভিড়ে, এই ঠাসাঠাসির মধ্যে কি ঘুম হয় ? নতুন নতুন অপরিচিত মুখ। কাহাকেও সে দেখে নাই নিষ্ঠুর, লোভাওঁ মুখ, বুধী দেখিলেই বুঝিতে পারে-বুঝিতে পারিয়া বুধীর গা শিহরিয় ওঠে.মনে যে কি দুঃখ আর অস্বস্তি বোধ হয় । সে বেশ বোঝে এখানে কেহ তাহাকে ভালবাসে না, যেমন সেই ছোট খুকী তাহাকে ভালবাসিত, যত্ন করিয়া খাওয়াইত, গলা ধরিয়া কত আদরের কথা বলিত। কোথায় গেল ছোট খুকীটা ? কেন তাহাকে এখানে আনা হইয়াছে। কেন আনা হইয়াছে তাহা সে বুঝিতেই পারে না। কেবল সে এইটুকু জানে কতদিন ধরিয়া দীর্ঘ, কঠিন পথ বাহিয়া তাহাকে এখানে আসিতে হইয়াছে—সঙ্গে বহু সঙ্গী ছিল, কিন্তু অপরিচিত, কারে সঙ্গে বুধীর আলাপ হয় নাই তেমন, আলাপ করিবার মত মনের অবস্থাও তাহার ছিল না । কেহ যত্ন করিয়া তাহাকে খাওয়ায় নাই। এখানকার খাবার মুখে দেবার উপায় নাই। কেমন যেন ভ্যাপসা গন্ধ, ভাল আস্বাদ তো নাই-ই ভাল গন্ধ পৰ্য্যন্ত নাই খাবারের। বুড়ী তাহাকে যত্ন করিয়া খাওয়াইত, একথা অস্বীকার করিতে পারিবে না । হয়তো সে ছোট খুকীর মত ভালবাসিত না অতটা—কিন্তু সন্ধ্যার সময় পেট পুরিয়া খাইবার ব্যবস্থা করিতে কখনও ক্রটি করে নাই । সত্যি, এ যে কোন জায়গায় আসিয়াছে, তাহার আদৌ কোনো ধারণাই নাই। এমন অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর জায়গা তার অভিজ্ঞতার বাহিরে ছিল এত দিন। কি হটগোল, নানারকম নতুন নতুন বিকট বিকট শব্দ জায়গাটাতে ! তাহার মন আরও পাগল হইয়া উঠিল এ শব্দে ও আওয়াজে । জীবনে কখনো এত অদ্ভুত ধরনের সব আওয়াজ সে শুনে নাই। অথচ তাহার বয়স কম হয় নাই। বুধীর জীবন কাটিয়াছে এই বিত্র জায়গা হইতে বহু দূরে। কত দূর তাহার ঠিক ধারণা নাই, কিন্তু মোটের ওপর বহু বহু দূরে অন্ত এক স্থানে, যেখানে অবারিত সবুজ মাঠ আছে, অপূৰ্ব্ব স্বভ্রাণে ভরা কোমল সরস ঘাসে ঢাকা । কি মুন্দর স্বাদ সে ঘাসের ! মাঠের ধারে কলস্বনা নদী, নদীর কিনারায় জলের ধার পর্য্যস্ত নানা জাতীয় ঘাসের ও জলজ শাকের বন—ঠাণ্ড, নরম, তাজ-কি অপূৰ্ব্ব তাদের সুগন্ধ। স্বাদ তো আছেই ভাল কিন্তু সেই নতুন-ওঠা বর্ষা-সতেজ কচি ঘাস ও কলমীলতার তাজা গন্ধের কথা যখনই মনে হয় তখন মনে পড়ে এক হাটু দীর্ঘ, ঘনখাম তৃণরাজির মধ্যে মুখ ডুবাইয়া পেট ভরিয়া সে তৃপ্তির ভোজ— হু হু উন্মুক্ত বাতাস ও দূরপ্রসারী প্রাস্তরের মধ্যে সে মুক্তির আনন্দ—তখন বুধী সত্যই ক্ষেপিয়া যায়—তাহার জ্ঞান থাকে না। মুক্তির জন্ত সে উন্মাদ হইয়া উঠে। জীবনের বহুদিন সেখানে সে কাটাইয়াছে। বহুদিন । কত দিন তাহা সে জানে না । বয়স তো তার কম হয় নাই.. প্রথম জীবনের কথা প্রায় কিছুই তাহার মনে নাই—যা একটু আধটু মনে পড়ে—সব আবছায়া ধেীয়া—কেবল খুব বড় বড় সবুজ মাঠ, তলায় ফল-বিছিয়ে থাকা বড় বড় গাছ, সুপেয় শীতল স্রোতের জল, সাজালের ধোয়ার মৃদু গন্ধ-ভরা আবাসস্থান, এই সব মনে পড়ে। আজকাল কিন্তু বেশী করিয়া মনে পড়ে, ছোট খুকীর কথা-খুকী তাহাকে সত্যই ভালবাসিত । এটা কোন জায়গা ? এক একবার বুধীর মনে হয় হয়তো বা এটা পাউণ্ড ঘর। কিন্তু বুধী জীবনে তো কতবার পাউণ্ড ঘরে কত বিনিদ্র রজনী যাপন করিয়াছে—এ ধরনের পাউণ্ড ঘর তো দেখে নাই ! সেখানে তো বাশের বেড়া ঘেরা খোলা জায়গায় তাহাকে থাকিতে হইয়াছে,