পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্নর দল ૨૦ ૪ আর ঐ রক্তের গন্ধটা তাজা রক্তের গন্ধ । যেদিন বাতাস ওই কোণ হইতে বয়, সেদিন রক্তের গন্ধটা আসে। ভয়ে সনোহে বুধীর বুক উড়িয়া যায়। সাখী ছোট খুকী “কতদিন তোমাদের সাথে দেখা হয় নাই, বন্ধু হিসাবে আসিয়া এ বিপদ হইতে উদ্ধার করে । এমন বিপদে জীবনে কখনো সে পড়ে নাই । এই সব সাত পাঁচ ভাবিয়া বুধীর রাত্রে ভাল ঘুম হইল না। এদিকে সকাল বেলা হইতেই চারিধারে বিকট আওয়াজ শুরু হইল। বুধীর সঙ্গেই একটি অল্পবয়স্ক প্রতিবেশী আজ কয়েক দিন ধরিয়া আছে, প্রথম প্রথম বুধী তাকে পছন্দ করিত না। সে যেন একটু বেশী চাল দেখাইতে চায়—বুধী পাড়াগেয়ে বলিয়া যেন তাহাকে আমল দিতেই চাহিত না । কিন্তু এ ভয়ঙ্কর নির্বান্ধব . চাল কদিন খাটে । শীঘ্রই তাহার অল্পবয়স্ক প্রতিবেশীটিকে সমস্ত চাল বিসর্জন দিতে হহল । একদিন বুধী দেখিল সে কাদিতেছে! বুধীর মনে কষ্ট হইল। আহা ছেলেমাহুষ ! তাহার প্রথম সন্তান এতদিন ওই বয়সের হইয়াছে—বড় হইলে বুধী তাহাকে আর দেখে নাই! কে জানে কোথায় গিয়াছে ! বাচিয়া আছে কি না তাই বা কে জানে ? 蟾 সহানুভূতি প্রকাশ করিবার উপায় নাই। বুধীর ইচ্ছা হইল সঙ্গীটির সে গা চাটে । কিন্তু দু'জনের মধ্যে তারের বেড়া । বুধী তবুও তাহাকে যতদূর সম্ভব সাস্তুনা দিয়াছিল সেদিন । ছেলেমানুষ, বেশ নধর গড়ন, তবুও এই ভয়ানক স্থানে পেট ভরিয়া না থাইতে পাইয়া রোগ হইয়া গিয়াছে । সেই হইতে দু'জনে বেশ ভাব । আজ সকালে উঠিয়া বুধী তাহার দিকে চাহিয়া দেখিল, সে আবার থাইতেছে। ছেলেমানুষ, খাইবার লোভই বেশী । খাওয়া শেষ করিয়া তাহার তরুণ বন্ধু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিয়া উঠিল—হাম্বা-আ-অ । বুধী বলিল—চুপ করে। ছি, মন খারাপ করে না। কিন্তু তাহার নিজের মন দিয়া তো বুঝিতেছে, কি দারুণ অশাস্তিতে কাটিতেছে এখানে, তবুও ছেলেমানুষকে মিথ্যা সাম্ভনা দেওয়াও ভালো । বুধী বলিল—খাও খাও। যা পড়ে আছে, ও দুটি খেয়ে ফেল। এমন সময়ে দুজন যমদূতের মত লোক তাহদের কাঠরায় ঢুকিল । বুধীদের কাঠরায় তাহারা প্রায় জন কুড়ি আছে। এই কুড়ি জনের অধিকাংশই প্রৌঢ়বয়স্ক । একজন তো আছে, বৃদ্ধের দলে তাকে অনায়াসেই ফেলা চলে । এদের মধ্যে বুধীর বন্ধুটি অল্পবয়স্ক এবং বেশ নধর দেখিতে। যমদূতের মত লোক দু'টি তাহার গায়ে কি একটা ছাপ মারিয়া চলিয়া গেল—কাঠরায় আরও দু'টি প্রৌঢ় সঙ্গীর গায়েও তাহারা ছাপ দিল। একটু পরে দু'জন লোক আসিয়া কাঠরায় ঢুকিল এবং ছাপমারা সঙ্গীগুলিকে দড়ি খুলিয়া কোথায় যেন লইয়া গেল । সকাল গড়াইয়া দুপুর, দুপুর গড়াইয়া বৈকাল হইয়াছে। বুধীর তরুণ বন্ধু ফিরিল না। ছাপ-মারা সঙ্গীদের কেহই ফিরিল না। বুধীর মনে ভয়ানক সন্দেহ হইল—সেই সঙ্গে কি একটা অজানা ভয়ে ওর গলা পৰ্য্যস্ত শুকাইয়া উঠিল। সেই রক্তের গন্ধ-টাটকা তাজা রক্তের গন্ধএখানে কোণাকুণি হাওয়া বহিলেই যেটা পাওয়া যায়—সেই গন্ধের কথা হঠাৎ মনে আসিতেই ভয়ে আতঙ্কে বুধীর সর্বাঙ্গ শিহরিয়া উঠিল। ভরে মরীয়া হইয়া সে গলার দড়িতে এক হেঁচক টান মারিতেই সেটা গেল ছিড়িয়া ।