পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किल्लल्ल लठन. ২০৩ জীবনপ4–বুৰী যে করিয়াই হউক, তাহার গ্রামে তাহার খুকীর কাছে ফিরিয়া যাইবেই। একটা পথ চলতি গরুর গাড়ি হইতে একটা বিচুলির আঁটি পড়িয়া গেল—বুধী গিয়া সেটা মুখে তুলিয়া লইল। শুধুই একঘেয়ে সবুজ ঘাস খাইতে কি মুখে লাগে ? মাঝে মাঝে এই ধরণের মুখাদ্য থাইয়া মুখ বদলাইয়া লইতে হয় বৈকি! তারপর বুধী সোজা রাস্ত বহিয়া চলিল —একদিন, দু'দিন, তিনদিন। খাদ্যের ভাবনা নাই—দু’ধারে মাঠ সবুজ হইয়া উঠিয়াছে, নববর্ষায় সুন্দর নিবিড় সবুজ ঘাসে ও আউশ ধানের জাওলায় । আমন ধান আজও রোয়া হয় নাই। জলেরও নাই অভাব, রাস্তার দু’দিকের খানায় প্রচুর টাটকা বৃষ্টির জল । যাইতে যাইতে একদিন একটা মজার ঘটনা ঘটিল। একটা গাছতলায় দুপুর বেলা সে বিশ্রাম করিতেছে—একটা ছেলে আসিয়া গলায় দড়ি বাধিয়া তাহাকে লইয়া চলিল হঠাৎ ৷ বুধী তো অবাক । ছেলেটি তাহাকে একটি গ্রামের মধ্যে একটি খড়ের ঘরে—সেখানে লইয়া গিয়া খুঁটির গায়ে বাধিল । বাড়িতে তখন কেহ নাই—ছেলেটিও কোথায় চলিয়া গেল। বুধ লক্ষ্য করিল একজন বৃদ্ধ স্ত্রীলোক ঘরের দাওয়ায় বসিয়া আপন মনে কি বকিতেছে আর দুলিতেছে। বাড়ির উঠানে একটি খেজুর গাছ, একটা পেয়ার গাছ, বাড়ির পেছনে একটা ডোবা । একটু পরে একটা বেী ডোবা হইতে একরাশ বাসন মজিয়া আনিয়া দাওয়ার এক কোণে নামাইয়া বৃদ্ধাকে বলিল—তুমি একটু চুপ করবে কি না সকালবেল, আমি জিগ্যেস করি। বাড়ির সবাই পাগল, পাগলা গারদের মধ্যে থেকে আমার প্রাণ ছাপিয়ে উঠেচে, আর পারিনে বাবু, মরণ হোলেও বচিতাম ! ফের তুমি যদি ওরকম বকবে মা, তবে হাড়িকুড়ি থাকবে পডে, ভাতের পিণ্ডি কে খেতে দেয় দেখবো এখন আজগে ! এই সময় বুধীর দিকে নজর পড়িতে বৌটি বলিল—ছেলেট বুঝি গরুটা এনেচে তা হোলে! বাবা! কাল থেকে কি কম থোশমোদটা করচি ওকে ? গরুটা হারালো, দ্যাথ কোথাও কেউ পন্টে পাঠালে, কি কেউ বেঁধে রাখলে—তা আমার কথা কি কেউ—গরুটারও হাল হয়েচে দ্যাথো— কথা বলিতে বলিতে তাহার সামনে আসিয়া বৌটি বলিয়া উঠিল—এ তে আমাদের নয় । •••কার আবার পরের গরু ধরে এনেচে দ্যাথো ! না, ছেলেটাকে নিয়ে আর পারি নে—এ যেন মনে হচ্চে ও পাড়ার ভুবনের মার গরু—মাগী এসে আমার চোঁদপুরুষ উদ্ধার করবে এখন, যদি টের পায়— বৌটি তার গলার দড়ি খুলিয় তাহাকে কিছু দূর তাড়াইয়া উঠানের বাহির করিয়া দিল —সম্ভবতঃ এই জন্য যে, ভুবনের মা এখন হঠাৎ আসিয়া পড়িলে গরু যে এখানেই বাধা ছিল, ইহার কোন চিহ্ন না পায় । গ্রামের বাহিরে এক জায়গায় প্রকাও বড় একটা গাছ। গাছের তলায় সে একটু দাড়াইল। চারিদিকে মাঠ, কচি কচি আউশের জাওলায় মাঠ ঘন সবুজ, বুধীর ভয়ানক লোভ হইল, মাঠে নামিয়া সে ধান-গাছ খায়—কিন্তু বিদেশ-বিভু ই জায়গা, যদি এখানে পাউণ্ড-ঘরে দেয়—তবে কে আসিয়া পয়সা দিয়া তাহাকে উদ্ধার করিবে ? ন!—সে কোথাও আর আবদ্ধ থাকিতে চায় না । উঃ, বুকের রক্ত হিম হইয়া যায়, এখনও সেই বড় বাড়ি, সেই উচু পাচিল, সেই গরাদওয়াল কাঠর, সেই বিত্র আওয়াজ–সকলের ওপর, সেই রক্তের গন্ধের কথা মনে উঠিল... ! মুক্তির আনন্দ আজ নবযৌবনের সঞ্চার করিয়াছে বুধীর দেহে—সে ভুলিয়া গিয়াছে তাহার বয়েস আঠারো-উনিশের কম নয়—সে প্রৌঢ়, সাত-আটটি সন্তানের জননী, তার ওপরে গত