পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Se বিভূতি-রচনাবলী তেk? তো বলচে—আমার বিছানার কাপড়, আমি তো ভঁড়ি ছোব না। আমি মনে মনে ভাবলাম যে, স্থাখো শিক্ষের গুণ দ্যাথো—কেমন ঘরে মানুষ তারা । আহা বেঁচে থাকৃ—সব বেঁচে থাকৃ— মনে মনে সতীশের প্রশংসা করতে চেষ্টা করলাম। সতীশ যে স্বীকার করেচে তার কাপড় বাসি, এটা অবিখি প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু বাসি কাপড়ে কিছু ছোয়া যে খারাপ কাজ, এ বিশ্বাস যার নেই, তাকেই বা দোষ দেওয়া যায় কি ক’রে, এ আমি বুঝতে পারিনে। যেমন এখনই আমার মনে একটা প্রশ্ন এসেছে যে, নিমু কলু কি কাচা, ধোয়, শুদ্ধ গরদের জোড় পরে তেল বেচতে এসেছিল ? সতীশের ভেবে দেখবার ক্ষমতা ও বুদ্ধির চেয়ে যদি কারুর বুদ্ধি ও বুঝবার শক্তি বেণী থাকে, তার জন্তে তাকে কি নরকে পচে মরতে হবে ? | R || তিন বছর এখনও হয়নি, আমরা এ গায়ে এসেছি। তার আগে ছিলাম কার্সিয়ঙের কাছে একট চা-বাগানে, বাবা সেখানে চাকরি করতেন । সেখানেই আমি ও সীতা জন্মেছি, ( কেবল দাদা নয়, দাদা জন্মেছে হনুমন-নগরে, বাবা তখন সেখানে রেলে কাজ করতেন ) সেখানেই আমরা বড় হয়েছি, এখানে আসবার আগে এত বড় সমতলভূমি কখনো দেখিনি। আমরা জানতাম চা-ঝোপ, ওক আর পাইনের বন, ধুরা গাছের বন, পাহাড়ী ডালিয়ার বন, বর্ণ, কনকনে শীত, দূরে বরফে ঢাকা বড় বড় পাহাড়-পৰ্ব্বতের চুড়, মেঘ, কুয়াশ, বৃষ্টি । এখানে প্রায়ই মাঝে মাঝে চা-বাগানের কথা, আমাদের নেপালী চাকর থাপার কথা, উস্প্লাঙের ডাকরানার খড়গ সিং যে আমাদের বাংলোতে মাঝে মাঝে ভাত খেতে আসতো–তার কথা, মিস নটনের কথা, পচাং বাগানের মাসীমার কথা, আমাদের বাগানের নীচের সেই অদ্ভুত রাস্তাটার কথা, মনে হয় । সেই সব দিনই আমাদের মুখে কেটেচে। দুঃখের শুরু হয়েছে যে-দিন বাংলা দেশে পা দিয়েছি। এই জন্যে এই তিন বছরেও বাংলা দেশকে ভাল লাগলে না—মন ছুটে যায় আবার সেই সব জায়গায়, চা-বাগানে, শেওলা-ঝোলা বড় বড় ওকের বনে, উস্প্লাঙের মিশন হাউসের মাঠে—যেখানে আমি, সীতা, দাদা কতদিন সকালে ফুল তুলতে যেতাম, বড়দিনের সময় ছবির কার্ড আনতে যেতাম, কেমন মিষ্টি কথা বলতে, ভালবাসতে মিস নর্টন। ভাবতে বসলে এক একটা দিনের কথা এমন চমৎকার মনে আসে ! •• শীতের সকাল । sa বাড়ির বার হয়েই দেখি চারিধারে বনে জঙ্গলে পাহাড়ের ঢালুর গায়ে পাইন গাছের ফাকে বেশ রোদ। আমি উঠতাম খুব সকালেই, সীতা ও দাদা তখন লেপের তলায়, চা না পেলে এই হাড়ক্টাপানো শীতে উঠতে কেউ রাজী নয়। শীতও পড়েছে দস্তুরমত। আমাদের বাগানের দক্ষিণে কিছু দূরে যে বড় চা-বাগানটা নতুন হয়েছে, যার বাংলোগুলোর লাল টালির ঢালু ছাদ আমাদের এখান থেকে দেখা যায় পাইন গাছের পকে, আজ তাদের লোকজনের চায়ের চারাগাছ খড়ের পাপুট দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে বোধ হয় বরফ পড়বার ভয়ে। আকাশ পরিষ্কার, মুনীল, কোনোদিকে এতটুকু কুয়াশা