পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্নর দল ২১৭ ঠেলে উঠলো এই এক বছরের মধ্যে—যে পদের উপরি কমিশনের আয় গড়ে মাসে দেড়শো টাকার কম নয় । কিন্তু সত্যিই তার পরদিন তাকে ডেকে ম্যানেজার একখানা পাঁচশো টাকার হাওনোট লিখিয়ে নিয়ে ওকে গিয়ে সংসার সেরেস্তার গদিতে বসতে আদেশ দিলেন। সেদিন গোকুলের মা ঘটা করে সত্যনারায়ণের সিন্নি দিয়ে পাড়ার লোকদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ালে। লোকজনের ভিড় কমে গেলে, কাছে রমানাথ মণ্ডলের গলির বাড়য্যে বাড়ির বড় বে গোকুলের মাকে এক পাশে ডেকে বল্পেন—ম, তোমাকে একটা অনুরোধ রাখতে হবে। আমার মেয়ে রমাকে তো দেখেছ তুমি মিত্তিরবাড়িতে ঠাকুরঘরে ? তাকে তোমায় নিতে হবে। গোকুলের মা ভাবলে সে ভুল শুনচে । বাড়য্যেদের অবস্থা বেশ ভালই, মেয়েটিও মুন্দরী —কিছুদিন আগেও স্কুলের বাসে উঠে তাকে স্কুলে যেতে দেখা গিয়েছে দিব্যি পুতুলটির মতো সেজেগুজে। আজ বাড়য্যে-গিল্পী আপন থেকে প্রস্তাব নিয়ে এসেচেন তার সঙ্গে গোকুলের বিয়ের ? সেই মোমের পুতুলের মত মুত্র মেয়েটিকে পুত্রবধূ করবার স্বপ্ন দেখতেও তো তার সাহস হয় না । 疊 বাড়য্যে-গিয়ী খুব হাটাইটি আরম্ভ করলেন। একদিন সামাজিক ভাবে মেয়ে দেখাও হোল। মেয়েকে পছন্দ না করবার কোন কারণই থাকতে পারে না। বিয়ের প্রায় সব ঠিকঠাক, বাড়য্যের বাড়ি থেকে মেয়ের দল বেঁধে পাত্র দেখতে এল। পাত্র গোকুল বিয়ের ব্যাপারে মুখে কিছু না বললেও মনে মনে খুশীই ছিল। মেয়েটি সত্যিই মুত্র, তার ওপর ভাল অবস্থাপন্ন ঘরের স্কুলে-পড়া মেয়ে—পাড়াগায়ের গরীব ঘরের ছেলে গোকুলের পক্ষে স্বপ্নের অতীত ওখানে বিয়ে হওয়া । গোকুল মাকে বললে, ঠিকুজিথান তো মা এখানে নেই, বাড়ির বড় কাঠাল কাঠের সিন্দুকটাতে জমিজমার কাগজ-পত্তরের সঙ্গে এক বাণ্ডিলে বাধা আছে। আমি সেটা এই শনিবারে গিয়ে রবিবার নিয়ে আসি । অনেক দিন দেশে যাওয়া হয়নি, অমনি বাড়িঘর দেখেও আসা হবে এখন । শনিবার দুটোয় অফিস ছুটি হতেই গোকুল শেয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরে বাড়ি রওনা হোল । এসেচে আজ তিন বছর দেশ থেকে, এর মধ্যে আর যাওয়ার অবকাশ ঘটেনি। সন্ধ্যার কিছু আগে নিজের গায়ে ঢুকতেই হাটতলার চারিদিক থেকে লোকে ওকে ছেকে ধরল। আজ শনিবার, গ্রামের হাট, সব লোক আজ সেখানে জড় হয়েচে, শেষ হাটে জিনিসপত্র সন্ত হয় বলে অনেকেই বেলা শেষ করে তবে হাটে আসে। —আরে গোকুল না ? বেঁচে আছিস ? আমরা ভাবলাম— —এতদিন কোথায় ছিলে গোকুল বাবাজি, তোমার মা কোথায় ? —এই যে গোকুল-দা, কোথেকে এ্যাদিন পরে, সব ভালো তো ? নানা অধীর আগ্রহ-ভরা প্রশ্নোত্তরের আদান প্রদান । গোকুলের বেশভূষা দেখে সবাই বুঝলে ওর নিশ্চয় ভাল চাকরি হয়েচে কলকাতায় । সবাই এই তিন বছরের ইতিহাস শোনবার জন্তে ব্যস্ত । - গোকুল তাদের হাত এড়িয়ে পৈতৃক বাড়ির চাবি খুললে। ঘর-দোর বিত্র অপরিষ্কার হয়ে আছে । উঠানে বন-জঙ্গল গজিয়েচে । জানালা দরজায় উই ধরেচে, কড়িকাঠে বাদুর চামচিকের বাসা। পাশের বাড়ির ছোট ছেলেকে ডেকে একটা হারিকেন লণ্ঠন চেয়ে আনলে