পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ X > নেই ; বরফ পড়বার দিন বটে। 影 একটু পরে সীতা উঠল। সে রোগ, ফর্স, ছিপছিপে । সে ও দাদা খুব ফর্স, তবে অত ছিপছিপে আর কেউ নয়। সীতা বললে, থাপা কোথায় গেল দাদা ? আজ ও সোনাদা যাবে ? বাজার থেকে একটা জিনিস আনতে দেবো । আমি বললাম—কি জিনিস রে ? . সীতা দুষ্টমের হাসি হেসে বললে, বলবো কেন ? তোমরা যে কত জিনিস আনাও, আমার বলো ? একটু পরে থাপা এল। সে হপ্তায় দু-দিন সোনাদা বাজারে যার তরকারি আর মাংস আনতে। সীতা চুপি চুপি তাকে কি আনতে বলে দিলে, আড়ালে থাপাকে জিজ্ঞেস ক’রে জানলাম জিনিসটা একপাত সেফটিপিন। এরই জন্তে এতো ! 獸 একটু বেলার বরফ পড়তে শুরু হ'ল। দেখতে দেখতে বাড়ির ছাদ, গাছপালার মাথা, পথঘাট যেন নরম থোকা থোকা পেঁজা কার্পাস তুলোতে ঢেকে গেল। এই সময়টা ভারি ভাল লাগে, আগুনের আংটাতে গনগনে আগুন—হাড়কাপানো শীতের মধ্যে আগুনের চারিধারে বসে আমি দাদা ও সীতা লুডো খেলতে শুরু ক’রে দিলাম। এই সময় বাবা এলেন আপিস থেকে। ম্যানেজারের কুঠার পাশেই আপিস-ঘর, আমাদের বাংলো থেকে প্রায় মাইলথানেক, কি তার একটু বেশী। বাবা বেলা এগারোটার সময় ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে একটু বিশ্রাম করেন, তিনটের পরে বেরোন, ওদিকে রাত আটটা-ন’টায় আসেন । বাবা আমাদের সকলকে নিয়ে খেতে ভালবাসতেন। সীতাকে ডেকে বললেন—খুকী, থাপাকে বলে দে নাইবার জন্তে জল গরম করতে—আর তোরা সব আজ আমার সঙ্গে খাবি— নিতুকে বলিস নইলে সে আগেই খাবে। মা রান্নাঘরে ব্যস্ত ছিলেন। সীতা গিয়ে বললে—ম, দাদাকে আগে ভাত দিও না, আমরা সবাই বাবার সঙ্গে থাবো । সীতার কথা শেষ না হতে দাদা গিয়ে রান্নাঘরে হাজির। দাদা থিদে মোটে সহ করতে পারে না—তাই আমাদের সকলের আগে মা তাকে খেতে দিতেন। এদিকে আমাদের ক' ভাই-বোনের মধ্যে বাবা সকলের চেয়ে ভালবাসতেন দাদাকে ও সীতাকে দাদাকে খাওয়ার সময়ে কাছে বসে না খেতে দেখলে তিনি কেমন একটু নিরাশ হতেন, যেন অনেকক্ষণ ধরে যেটা চাইছিলেন সেটা হ'ল না । সীতা বললে—দাদা তুমি খেও না, বাবা আজ সকলকে নিয়ে থাবেন । বাবা নাইচেন, এক্ষুনি আমরা খেতে বসবে৮– দাদা কড়া থেকে মাকে একটুকরো মাংস তুলে দিতে বললে এবং গরম টুকরোটা মুখে পুরে দিয়ে আবার তখুনি তাড়াতাড়ি বার করে ফেলে বার-দুই ফু দিয়ে আবার মুখে পুরে নাচতে নাচতে চলে গেল । দাদাকে আমরা সবাই ভালোবাসি, দাদা বয়সে সকলের চেয়ে বড় হলেও এখনো সকলের চেয়ে ছেলেমানুষ । ও সকলের আগে থাবে, সকলের আগে ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুরিয়ে কথা বললে বুঝবে না, অন্ধকারে একলা ঘরে শুতে পারবে ন—ওর বয়স যদিও বছর চোদ হ’ল, কিন্তু এখনও আমাদের চেয়ে ও ছেলেমানুষ, প্রথম সন্তান বলে বাপ-মায়ের বেশী আদর ওরই ওপর। আমরা সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম। বাবা সীতাকে একপাশে ও দাদাকে আর একপাশে