পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ বিভূতি-রচনাবলী নিয়ে খেতে বলেচেন । মাংসের বাটি থেকে চব্বি বেছে বেছে ফেলে দিতেই সীতা বললে—বাবা আমি খাবে।-- দাদা বললে—তুই সব খাসনে, আমাকে দুখান দে সীতা— বাবা অত চৰ্ব্বি ওদের খেতে দিলেন না। ওদের এক এক টুকরো দিয়ে বাকি টুকরোগুলো বেড়ালদের দিকে ছুড়ে ফেলে দিলেন। আমার বললেন–জিতু গায়ের মাপটা দিস তো তোর, ওবেলা সায়েবের দঞ্জি আসবে, তার কাছে তোর জামা করতে দেবে সীতা বললে—আমার আর একটা জামা দরকার বাবা-- —তবে তুইও দিস গায়ের মাপট,-ওই সঙ্গেই দিস– মা বললেন—তার দরকার কি, তুমি তাকে বাসায় পাঠিয়ে দিও না। আমি সব দেখেশুনে দেবে-আরও করবার জিনিস রয়েচে-নিতুর মোটে হুটাে জাম, ওর ওভারকোটটা পুরনো হয়ে ছিড়ে গিয়েছে—যেমন শীত পড়েছে এবার, ওর একটা ওভারকোট করে দাও— বিকেলে মেমের মাকে পড়াতে এল । মাইল দুই দূরে মিশনারীদের একটা আড়া আছে । আমি একবার মেমসাহেবের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে খোসালডি চা-বাগানে যে রাস্তাটা পাহাড়ের ঢালু বেয়ে নেমেচে—তারই ধারে ওদের বাংলো । অনেকগুলো লাল টালির ছোট বড় ঘর, বাশের জাফরির বেড়ায় ঘেরা কম্পাউও, এই শীতকালে অজস্র ডালিয়া ফোটে, বড় বড় ম্যাগনোলিয়া গাছ । আমাদের বাগানে ও বড় সাহেবের বাংলোতে ম্যাগনেলিয়া গাছ আছে । এরা মাকে পড়ার, সীতাকেও পড়ায় । মিস নর্টন দিনাজপুরে ছিল, বেশ বাংলা বলতে পারে। নানা ধরনের ছবিওয়ালা কার্ড, লাল সবুজ রঙের ছোট ছোট ছাপানো কাগজ, তাতে অনেক মজার গল্প থাকে। দাদার পড়াশুনোয় তত ৰেীক নেই, আমি ও সীতা পড়ি। একবার একখানা বই দিয়েছিল—একটা গল্পের বই—সুবর্ণবণিক পুত্র । এ কথায় আমি বুঝেছিলাম বণিকপুত্র সোন দিয়ে গড় অর্থাৎ সোনার মত ভালো। পাপের পথ থেকে উক্ত বণিকপুত্র কি করে ফিরে এসে খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম গ্রহণ করলে, তারই গল্প। অনেক কথা বুঝতে পারতাম না, কিন্তু বইখানা ভালো লাগতো !••• মেম আসতে দুজন। একজনের বয়স বেশী—মায়ের চেয়েও বেশী। আর একজনের বয়স খুব কম। অল্পবয়সী মেমটির নাম মিস্ নর্টন—একে আমার খুব ভালো লাগতো—নীল চোখ, সোনালী চুল, আমার কাছে মিস্ নটনের মুখ এত মুন্দর লাগতে, বার বার ওর মুখের দিকে চাইতে ইচ্ছে করত, কিন্তু কেমন লজ্জা হ’ত—ভালো কয়ে চাইতে পারতাম নী—অনেক সময় সে অন্ত দিকে চোখ ফিরিয়ে থাকবার সময় লুকিয়ে এক চমক দেখে নিতাম। তখনি ভয় হ’ত হয়ত সীতা দেখছে—পীত হয়ত এ নিয়ে ঠাট্টা করবে। ওরা আসতো বুধবারে ও শনিবারে। সপ্তাহের অন্ত দিনগুলো যেন কাটতে চাইতে না, দিন গুনতাম কবে বুধবার আসবে, কবে শনিবার হবে । মিস্ নটনের মত মুন্দরী মেয়ে আমি কখনো দেখিনি—আমার এই এগারো-বারে বছরের জীবনে । কিন্তু মাঝে মাঝে এমনি হতাশ হতে হত । দিন গুনে গুনে বুধবার এল, কিন্তু প্রৌঢ়া মেমটি হয়তো সেদিন এল এক, সঙ্গে মিস নটন নেই—লারা দিনটা বিস্বাদ হয়ে যেতে, মিস নটনের ওপর মনে মনে অভিমান হ’ত, অথচ কেন আজ মিস নটন এল না সে কথা কাউকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা হত। মেমের এক-একদিন আমাদের ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে শেখাতো । মা তখন