পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৮ বিভূতি-রচনাবলী —কোথায় শিখলি ? —বাড়িতে। কে আবার শেখাবে। সন্নিসি কাক বুড়ে বয়সে বেটে কাটতো। তার কাটা দেখেছিলাম অনেক দিন আগে । সেই থেকে শিখেছি। সরবালার পা ফুললে, মুখ ফুললে, পুরনো ঘুঘুষে জর। বল্লে—এর একটা ব্যবস্থা কর, নইলে খারাপের দিকে যাবে। ননী মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে একদিন অন্তর যেতে লাগলো। ডাক্তার সাহেবকে বুঝিয়ে বল্পে মেয়ের রোগের ইতিহাস । মাস দুই ধরে একদিন অন্তর কামাই করবার ফলে চাকুরি গেল ননীর । এক থালা ভাত আসে না, টাকা কটাও গেল। এমন হ’ল খাওয়া জোটে না । সরবালা সেরে উঠেছে একটু, কিন্তু খাবার অভাবে শুধু কাচা পেয়ার খায় হিমি ঠাকরুণের পেয়ারাতলায় বসে বসে। এর ওপর এক নতুন বিপদ বাধলো। যাদের বাড়িতে ননী ঝি-গিরি করতে, কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্যে তারা খুব চটে গেল। তাদের হাতে গ্রামের কনট্রোলের দোকানের কাপড় দেওয়ার ভার। তিন মাসের মধ্যে একখানা গামছাও তারা দিলে না ননীবালাকে । কত অনুনয় করেও তাদের মন গলানেগেল না। বাইরে বেরুনো যায় না আর কাপড়ের অভাবে । তালির ওপর তালি লাগিয়ে যতদিন চালানো যায় চললো, আর চলে না এমন অবস্থায় এসে পৌছুলো । বিকেল বেলা ননী মেয়েকে বল্পে-হঁ্যা রে, বেটের দড়ি কাটতে বসবি ? —সন্ধ্যের সময় বসবো মা । —তেল নেই, অন্ধকারে হবে না। এখন বোস । তবু আন চারেক পয়সা হবে সকালবেলা । —ম, একটা কথা শুনবে ? আমি ট্যাপের বীচি আনবো মাদলার বিল থেকে । তুমি ট্যাপের খই করতে জানো ? —খুব জানি। তুই আনতে পারবি ? কার সঙ্গে যাবি সেখানে ? বিলের জলে কেউটে সাপের আডড । —বাগ দি-বেগী যাবে আর আমি যাবো। বাগদি-বেগী বলছিল, ট্যাপের থই খেলে এক বেলা কেটে যাবে। রাত্রে আমরা ট্যাপের খই খাবো । ননীর মুখে দুঃখের হাসি দেখা দিল। তার আদরের মেয়ে আজ ছলে-বাগদিদের মেয়ের মত ট্যাপের খই খেয়ে রাত কাটানো খুশির ব্যাপার বলে মনে করছে। মেয়েকে বল্লে,—নালু–কাউকে বলিসনে যে ট্যাপ তুলতে যাবি। এ গায়ে আবার ইদিকে নেই, ওদিকে আছে কি না । সরবালা চলে গেল বাগদি-বেগী নীলার সঙ্গে । ননী বল্লে-ও নীলি, দেখি দিদি, নালু যেন বেশী জলে যায় না। পদ্ম গাছে বড় সাপ থাকে । সরবালার মন খুশিতে ভরে উঠলো। মাদ্রলার মস্ত বড় বিল পদ্ম আর নালফুলের বনে ভরে আছে। নীল আকাশ উপুড় হয়ে আছে বিলের ওপর। যদিও বর্ষাকাল, আজ আকাশ বেশ পরিষ্কার। শরতের আমেজ আছে রঙ্গুরের গায় । বিলের ধারে নল-খাগড়ার ঝোপে তিতপয়ার ফুল ফুটেছে। বাগদিবে বল্লে-লালু, করমচা খাবে মা ? আর এই ঝোপে কত করমচা আছে— —থাবে থাবো। তবে নীলি একটা কথা । মাকে কিন্তু বল্পে খাবো না । করমচা খাওয়ার