পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९88 বিভূতি-রচনাবলী মাদুলি। মেয়েটি চোখ বুজে একপাশ ফিরে শুয়ে আছে। আমি ঘরের মধ্যে ঢুকতেই এবার সে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে আবার পাশ ফিরলে । মেয়েটির গায়ে জর। বেশ জর, তিনের কাছাকাছি হবে। চোখে ক্লান্ত দৃষ্টি, চোখের কোণ সামান্ত লাল। নাড়ি দেখলাম, বেশ নাড়ি, শক্তই আছে । হঠাৎ কোনো ভয়ের কারণ. আছে বলে মনে হোল না । তাছাড়া, আমার ওপর মেয়ের চিকিৎসার ভার নেই, আমি এসেছি হোম করতে ! s গৃহস্বামী বল্লেন—আপনি আশীৰ্ব্বাদ করুন, পায়ের ধুলো দিন মাথায় ওর । , পায়ের ধুলো মাথায় দিতে যাচ্ছি এমন সময় হঠাৎ গৃহস্বামী আছাড় খেয়ে পড়ে গেল থাটের পাশে । আমি চমকে উঠলাম। হাত নড়ে গেল। লোকজন দৌড়ে এল কি হয়েছে দেখতে । কিছুই সেখানে নেই, না একটা-কলার খোসা না কিছু। লোকটি পড়লে কি করে ? পায়ের ধুলো দেবার কথা চাপা পড়ে গেল। গৃহস্বামীর মাথায় ও মুখে ওর বড় শালা ঠাণ্ডা জল দিতে লাগলো। মেয়েটি ফুপিয়ে কাদতে লাগলো। সে এক হৈ-চৈ ব্যাপার। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি তান্ত্রিক হোম করি। কিছু কিছু দৈব ঘটনা বুঝি। লক্ষণ, প্রতিলক্ষণ, চিহ্ন আর ইঙ্গিত এই নিয়ে দৈব। গোড়াতেই এর লক্ষণ খারাপ বলে যেন মনে হচ্ছে। তবে কি হোমে বসবো না ? সন্ধ্যার কিছু পরে শিবমন্দিরের সামনের রাস্তায় পায়চারি করছি। বড় গরম । বাড়ির মধ্যে হাওরা নেই। রাস্তায় তবু একটু হাওয়া বইছে । হঠাৎ আমার কানে গেল, কে যেন বলছে—শুনুন, শুকুন। দুবার কানে গেল কথাটা । এদিক ওদিক চাইতেই চোখে পড়লো শিবমন্দিরের মধ্যে ঠিক দোরের গোড়ায় একটি কে মেয়েমানুষ দাড়িয়ে । বল্লাম—আমায় বলছেন ? —হঁ্য ও খুকীর জন্তে বিরজা হোম করবেন না। ও বাচবে না। —কে আপনি ? —আমি যে-ই হই । যদি ভাল চান, হোম করবেন না। আমি বিস্মিত হোলাম । নির্জন, অন্ধকার, ভাঙা মন্দির। সেখানে এখন মেয়েমানুষ আসবে কে ? এমন আশ্চৰ্য্য কথাই বা বলে কেন ? আমার খানিকট রাগও হোল । আমার ইচ্ছার ওপর বাধা দেয় এমন লোক কে ? মানুষ তো দূরের কথা, অপদেবতাকেও কখনও গ্রাহ করিনি। মায়ের আশীৰ্ব্বাদে সবই সম্ভব হয় । ভৈরব চক্রবর্তীকে ভয় দেখানে সহজ নয় । আমার এই অদ্ভুত দর্শনের কথা বাড়ি ফিরে কাউকে বল্লাম না। রাত্রে বসে হোমের জিনিসপত্রের ফর্দও করে দিলাম। তারপর রাত আটট বাজল, গৃহস্বামী আমাকে রান্নাবান্না করতে বল্লেন । এইবার আমার গল্পের আসল অংশে আসবো। তার আগে ওদের বাড়িটার সম্বন্ধে কিছু বলা দরকার । বাড়িটা খুব পুরনো কোঠা বাডি, কোনো ছিরি সৌষ্ঠব নেই, কিন্তু দোতলা। পল্লীগ্রামে দোতলা বাড়ি বড় একটা দেপা যায় না। যমুনা নদীর ধারে ঠিক নয় বাড়িটা, সামান্ত দূরে। মধ্যে কেবলমাত্র একখানা বাড়ি। ঐ বাড়ির ছাদ আর এ বাড়ির ছাদের মধ্যে দশ-বারো ফুট চওড়া একফালি জমির বাবধান । ছাদের ওপর একখানা মাত্র ঘর। সেই ঘরে আমার বিছানা পাতা হয়েছে। পাশে খোলা ছাদে তোলা উমনে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোনামুগের ডাল, আতপ চাল, ঘড়ি, আলু