পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৪৬ বিভূতি-রচনাবলী চেয়ে মন্ত্র জপ করতে করতে ক্রমে মূৰ্ত্তি মিলিয়ে গেল অন্ধকারে । মূৰ্ত্তিটা আমার সামনে সবসুদ্ধ দাড়িয়ে ছিল এক থেকে ত্রিশ গুনতে যতটা সময় নেয় ততটা। এর খুব বেশী হবে না কখনো । সেটা মিলিয়ে যেতে আর একবার চোখ রগড়ালাম, কিছুই নেই। বিশ্বাস করুন, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিচের তলা থেকে কান্নাকাটি উঠলো। রুগী মেয়েটি মারা গিয়েছে। —তখুনি ? —তখুন। এ ব্যাপারের কোনো ব্যাখ্যা দিতে আমি রাজী নই। যা ঘটেছিল অবিকল তাই নিবেদন করলাম আপনার কাছে । বিশ্বাস করুন বা না করুন । বুড়ো হাজরা কথা কয় সকাল বেল পাচুদাসী বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। সারাদিন নেীকে বেয়েছে মাঝি, সন্ধ্যায় বনগী ইন্টিশানে এসে পৌছোয়। কতদূরে যেতে হবে তা সে জানতো না। কত জলকচুরির দামের ওপর পানকৌড়ি বসে থাক, ঝিরবিরেহাওয়ায়-দোল বাশবনের তলা দিয়ে দিয়ে নৌকো বেয়ে আসা ; জলকচুরির নীল ফুলের শোভায় গলুসি-বদিপুরের চর আলো করে রেখেচে ; কত বম্বোবুডোর গাছে গাছে ঠাণ্ড নদীজলের আমেজে বকের দল, পানকৌডির দল বসে ঠিক যেন ঝিমূচে । পাচুদাসীর স্বামী উদ্ধব দাস বেশ জোয়ান-মৰ্দ্দ লোক। বৈষ্ণব কবিতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই ওর—শক্ত হাত-প, এই লম্বা এই চওড়া বুক, এই হাতের গুলি, এই বাবরি চুল। জাতে কাপালী, বন-জঙ্গল উড়িয়ে তরিতরকারির আবাদ করে সোনা ফলায়। দক্ষিণ অঞ্চল থেকে ওরা এসে এখানে বাস করচে আজকাল সেই সব গায়ে, যেখানে দশ বছর আগেও ছিল কাটাবন, ঝোপ-জঙ্গল । যাহোক দু’পয়সা রোজগার ও করে, বিশেষ করে আজকাল যুদ্ধের দরুণ তরিতরকারির যা দাম । উদ্ধব বল্পে স্ত্রীকে—চিড়ে কতগুলো আনলি ? পাচুদাসী বেশ শক্ত-সমর্থ মেয়েমানুষ। একহার, লম্বা, খামল, উনিশ-কুড়ি বয়েস, যুখের ভাবে বেশ একটা কাচা লাবণ্য মাখানে—অথচ এক সংসারের সব কাজ মুখ বুজে করে যাবে, চার-পাচটা হালের গরুর ডাবায় জল তুলবে কুয়ো থেকে, বাইরের বড় গোয়াল পরিষ্কার করবে, দশ গণ্ডা বিচালির তাটি কাটবে—তারপরে আবার রান্নাবাড়া করবে—স্বামীর মাঠের পাস্তাভাত, গরমভাত, জনমজুরের ভাত—এসে জন, বসে-জন, গেরস্থর সবই তো থাকে। রাতদুপুরে লোক-কুটুম্ব এলে পাকি আড়াই-সেরা কাঠার এক কাঠ ডবল-নাগরী চালের ভাত বড় তোলো হাড়িটায় চড়িয়ে দেয় এক নিমেষে । দেখতে নরম"সরম হোলেও লোহার মত শক্ত হাত-পা । পাচুদাসী একটা ছোট থলে নৌকোর খোল থেকে টেনে বার করে হাতে আন্দাজ করে वप्झ-कांग्रो झु३ —ওতেই হবে! —আমি তো উপোস। শুধু তুমি আর মাঝি ছোড়া খাবে— —তেঁতুল এনেছিল তো ? —ঙ্ক-উ-উ ।