পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 बेिङ्गउि-ब्रक्रमांदलैौ পুলিয়ে যাওয়া ছাড়া আর আমাদের অন্ত উপায় থাকে না । মা'র ইচ্ছে ছিল মেমেদের ধর্ক্সের এই বই পড়ে যদি বাবার মতিগতি ফেরে। মেমের মদ্যপানের কুফলের বর্ণনাসূচক ছোট ছোট বই দিয়ে যেতে—ম সেগুলো বাবার বিছানায় রেখে দিতেন—কে জানে বাবা পড়তেন কিনা—কিন্তু এই দেড় বৎসরের মধ্যে আমাদের মাসের মধ্যে তিন-চারবার চা-ঝোপের আড়ালে লুকনো বন্ধ হয়নি। প্রায়ই আমি আর সীতা কার্ট রোড ধরে বেড়াতে বেকুই। আমাদের বাগান থেকে মাইল দুই দূরে একটা ছোট ঘর আছে, আগে এখানে পোস্ট আপিস ছিল, এখন উঠে যাওয়াতে শুধু ঘরট পড়ে আছে—উস্প্লাঙের ডাক-রানার ঝড়-বৃষ্টি বা বরফপাতের সময়ে এখানে মাঝে মাঝে আশ্রয় নেয়। এই ঘরটা আমাদের ভ্রমণপথের শেষসীমা, এর ওদিকে আমরা যাই না যে তা নয়, কিন্তু সেকালেভদ্রে, কারণ ওখান থেকে উষ্ণাং পৰ্য্যন্ত খাড়া উৎরাই নাকি এক মাইলের মধ্যে প্রায় এগারো শ ফুট নেমে গিয়েচে, মিস নর্টনের মুখে শুনেচি–যদিও বুঝি নে তার মানে কি। আমাদের অত দূরে যাওয়ার প্রয়োজনও ছিল না, যা আমরা চাই তা পোস্ট আপিসের ভাঙা ঘর পর্য্যন্ত গেলেই যথেষ্ট পেতাম—দুধারে ঘন নির্জন বন । আমাদের বাগানের নীচে গেলে আর সরল গাছ নেই--বনের তলা আর পরিষ্কার নেই, পাইন বন নেই, সে বন অনেক গভীর, অনেক নিবিড়, যেমন দুপ্রবেহু তেমনি অন্ধকার, কিন্তু আমাদের এত ভাল লাগে ! বনে ফুলের অন্ত নেই—শীতে ফোটে বুনো গোলাপ, গ্রীষ্মকালে রডোডেণ্ডন বনের মাথায় পাহাড়ের দেওয়ালে লাল আগুনের বন্ত আনে, গায়ক পার্থীরা মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে চারিধারের নির্জন বনানী গানে মুখরিত ক’রে তোলে। ঝর্ণ শুকিয়ে গেলে আমরা শুকনো ঝর্ণার পাশের পথে পাথর ধীরে ধীরে নীচের নদীতে নামতাম—অতি সস্তপণে পাহাড়ের দেওয়াল ধ’রে ধীরে, সীতা পেছনে, আমি আগে । দাদাও এক-একদিন আসতো, তবে সাধারণত সে আমাদের এই সব ব্যাপারে যোগ দিতে ভালবাসে না । এক-একদিন আমি একাই আসি। নদীর খাতটা অনেক নীচে—তার পথ পাহাড়ের গা বেয়ে বেয়ে নীচে নেমে গিয়েছে—যেমন পিছল তেমনি দুর্গম—নদীর খাতে একবার পা দিলে মনে হয় যেন একটা অন্ধকার পিপের মধ্যে ঢুকে গিয়েচি। দু-ধারে খাড়া পাহাড়ের দেওয়াল উঠেচে—জল তাদের গা বেয়ে ঝরে পড়ছে জায়গায় জায়গায়—কোথাও অনাবৃত, কোথাও গাছপাল, বনফুল, লতী—মাথার ওপরে আকাশটা যেন নীল কার্ট রোড—ঠিক অতটুকু চওড়, ঐ রকম লম্বা, এদিকে-ওদিকে চলে গিয়েচে, মাঝে মাঝে টুকরো মেঘ কার্ট রোড বেয়ে চলেচে, কখনও বা পাহাড়ের এ-দেওয়াল ও-দেওয়াল পার হয়ে চলে যাচ্ছে—মেঘের ঐ খেলা দেখতে আমার বড় ভাল লাগত। নদী-খাতের ধারে একখানা শেওলা ঢাকা ঠাণ্ড পাথরের ওপর বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুখ উচু করে চেয়ে চেয়ে দেখতাম-বাড়ি ফিরবার কথা মনেই থাকত না। মাঝে মাঝে আমার কি একটা ব্যাপার হত। ওই রকম নির্জন জায়গায় কতবার একটা জিনিস দেখেচি ••• হয়তে দুপুরে চা-বাগানের কুলীর কাজ সেরে সরল গাছের তলায় খেতে বসেচে-বাবা ম্যানেজারের বাংলোতে গিয়েচেন, সীতা ও দাদা ঘুমুচ্ছে—আমি কাউকে না জানিয়ে চুপি চুপি বেরিয়ে কাট রোড ধ'রে অনেক দূরে চলে যেতাম—আমাদের বাসা থেকে অনেক দূরে উস্প্লাঙের সেই পোড়ো পোস্ট আপিস ছাড়িয়েও চলে যেতাম—পথ ক্রমে যত নীচে নেমেচে, বনজঙ্গল ততই ঘন, ততই অন্ধকার, লতাপাতায় জড়াজড়ি ততই বেশী—বেতের বন, বাশের বন শুরু হ’ত—ড়ালে ডালে পরগাছ ও অৰ্কিড তত্তই ঘন, পাখী ডাকত-সেই ধরনের একটা