পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ > 8$ —দেখে নিও মোড়ল । তাতের মেঘ, বাতাস উঠতি পারে, জল হবে না। —বাতাস উঠলেও তো মুশকিল। হাত চালিয়ে নাও—এবার ক’খানা বাক ? —আর একখানা। ওই পাইকপাডার বটগাছ থেকে শুরু হোল বাকখানা। ওর ও-মুড়োয়— পাচুদাসীর মজা লাগে ওদের কথাবার্তা শুনতে । বাড়ি থেকে বেরুলে দুশোরগড়। আজ চরের কাশবনে চড়ুইভাতি চাদের আলোর তলায়। বঁাশের চোঙে ফু পেড়ে ধোয়াভরা রান্নাঘয়ে ভাত রান্না নয়। কি বিশ্রী এবারকার তেত্তি বীজ গাছের চালাগুলো । আগুন ধরতে কি চায় ! ফু পেড়ে পেড়ে চোখ রাঙা হয়ে যায় একেবারে । সেই ছোট খোকা যেন ওই চরে কাশের ডগায় ডগায় ফড়িং প্রজাপতি ধরে বেড়াচ্ছে। তাকেই ও দেখচে সৰ্ব্বত্র । সব সময়ই তার কথা মনে পড়চে । স্বপ্ন কি সত্যি হয় ? যদি সত্যি হয় ! কে বলতে পারে ? ওর সারা গা আবার যেন শিউরে ওঠে । সন্ধ্যার আর দেরি নেই। ওই দূরে বী-দিকের পাডে একটা ইটের পাজা। অন্যদিকে হলদে রঙের কোঠাবাড়ি একট। বড় বড় গাছের তলায় আরও দু’একটা বাড়ি-চোখে পড়ে। পাচুদাসী জিগ্যেস করলে—হঁ্যাগ, ওই বাড়িটা কাদের ? ভালো বাড়ি । মাঝি বল্লে—ওটারে বলে ডাক-বাংলা । সাহেবরা এসি থাকে । উদ্ধব দাস বল্লে—সেবার বাগুন বিক্রি করতি এসে দেখি ওর বারান্দায় গোর সাহেব পিলপিল করচে। এই সঙ্গে মটোর গাড়ি দাড়িয়ে । ভিড় কি! সাহেবের ছেলেরা ছুটোছুটি করচে ইদিকি ওদিকি । পাচুদাসী কি ভেবে বল্লে—ই্যাগ, সাহেবদের ছেলেরা দেখতি কেমন ? —খুব ফরসা । —কেমনধারা ফরসা ? - —সে কি বোঝাবে তোরে ? তুই পাড়াগেয়ে ভূত। সাহেবের কি বুঝিস ? —আহাঁ-হা! আর উনি একেবারে শহুরে বাবু! সেই একবার বাগুন বেচতি তো এসিছিলে—বলে জন্মের মধ্যি কন্ম, চত্তির মাসে রাস ! ওরা ডাঙ্গায় জিনিসপত্র নামালো। হেঁসে যেতে হবে ইন্টিশানে— আধকোশটাক ডাকবাংলার ঘাট থেকে। একটা ভারি বোচক, এক বোঝা ডাটা আর কুমড়ো শাক এই সঙ্গে। পাচুদাসী বোচক কাখে পেছনে পেছনে চললো—আগে আগে উদ্ধব দাস! মাঝি রইল ঘাটেই, ঝালতলায় সে রোধে-বেড়ে খাবে, নৌকোতে শুয়ে থাকবে রাত্রে—আবার কাল রাত দশটার সময় ওরা ফিরবে, নৌকো ছাড়া হবে তখন । উদ্ধব দাস বল্লে—তোমার কি কি লাগবে বল, কিনে দিয়ে যাই— —হঁাড়ি একটি, সরা একটি,—আয় খলি মাছ যদি বাজারে পাই, মাছের দামটা দিয়ে যাও । —মুমুরি ডাল খাবা। এক সের ডাল দিইচি আবার মাছের পয়সা ; ভারি বড়নোক দেখেচে মোরে ! মাঝি অনুনয়ের সুরে বল্লে—দিয়ে যাও মোড়ল । আমাদের ওদিকি খয়রা মাছ থেতি পাইনে। যদি কাল বাজারে খয়রা মাছ পাই—চার আনা দ্যাও । পাচুদাসী স্বামীকে ধমক দিয়ে বল্লে—স্তাও না গো ওকে। ছেলেমানুষ। যাচ্ছি একটা শুভ কক্ষে। যা খেতি চায় ওর প্রাণ, দাও ওকে। চারগণ্ডী পয়সা দাও মাছের আর দু-আনা