পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ՀG ծ —ত যেতি পারি। ক'জন ? —দুজন । এই তো দেখতে পাচ্চ। —আজ পরবের দিন, সেখানে বডড ভিড় হয়, কত দেশ থেকে হাজরাতলায় পুজো দিতি লোক আসে । পাচটি টাকা ভাড়া লাগবেক যাতায়াতে । এমন সময় পাচুদাসী লক্ষ্য করলে দামী শাড়ি পরনে একটি সুন্দরী বেী স্টেশনের বাইরে জামতলাটায় ওদের কাছে এসে দাড়ালো । ওর সঙ্গে একটি ফরসা জামাকাপড় পরা ভদ্রলোক, চোখে চশমা, হাতে ঘড়ি । পেছনে পেছনে একটা চাকর গোছের লোক, তার হাতে চামড়ার একটি বাক্স। বৌটি তাকে বল্লে—তুমি কোথায় যাবে ? পাচুদাসী সঙ্কোচের সুরে তাকে বল্লে—নিশেনথালির হাজরাতলায়— বৌটি পেছন ফিরে তার সঙ্গী ভদ্রলোককে বল্লে—ওগে, এরাও সেখানে যাচ্ছে— ভদ্রলোকটি উদ্ধব দাসকে বল্লে—তোমরাও হাজরাতলায় যাবে ? —হঁ্যা বাৰু। আপনারাও সেখানে যাবেন ? —আমরাও সেখানে যাচ্চি। কত দূর ? —তা তো বাবু জানিনে। আমরা নতুন যাচ্চি। আজ মঙ্গলবার, সেখানে আজ পুজো দিতে হয়, তাই যাবো। আমাদের বাড়ি অনেকদূর এখান থে। —তাই তো ! এ যে অজ পাড়াগা দেখছি। কোথায় কতদূর যেতে হবে না জানলে এখন করি কি— –বাৰু, এই গরুরগাড়ি সেখানে যাবে বলছে। পাচ টাকা ভাড়া । চলেন ওই গাড়িতেই সবাই যাই । আপনারা এখন গাড়ি পাবেনই বা ক’নে, মাঠাকরুণ না হয় গাড়িতে উঠুন, আমি হেঁটে যাবো এখন । বেলা বারোটার সময় ওরা একটা আধমজা নদীর ধারে এসে হাজির হোল । নদীর নাম ব্যাং নদী—দুধারে বনজাম আর হিজল বাদামের বন, বাশনি বাশের বন আর বেতঝোপ । অত বেলা হোলেও রোদ নেই নদীর এপারে, দিব্যি ঘন ছায়া । গাড়োয়ানের মুখে শোনা গেল নদী পার হয়ে আধক্রোশটাক গেলেই নিশেনথালির হাজরাতলা । ইতিমধ্যে বৌটির সঙ্গে পরিচয় হয়ে গিয়েছে পাচুদাসীর। ওর নামটি বড় কটোমটো, মুখ দিয়ে উচ্চারণ হওয়া কঠিন—ম-ন-জুলা। কলকাতায় শ্বশুরবাড়ি, সঙ্গে যিনি এসেছেন উনিই স্বামী, কলকাতায় চাকুরি করেন। পয়সাওয়ালা লোক, কলকাতায় নিজেদের বাড়ি আছে। বিয়ে হয়েচে আজ চার বছর, ছেলেপুলে না হওয়াতে হাজরাতলায় পুজো দিতে চলেছে ওদেরই মত। মন-জুলা বলছে—আচ্ছা ভাই, ঠাকুর খুব জাগ্রত, না ? —শুনেছি তো দিদি । আমারও তো সেইজন্তিই আসা। যদি উনি মুখ তুলি চান— —আমারও তাই । তোমায় বলতে কি, সব আছে কিন্তু মনে মুখ নেই। উনি আবার এসব মানেন না, আমি জোর করে নিয়ে এসেছি । বলি চলো, পাচ জায়গায় দেখতে হয়— এতে আর কষ্ট কি ? আমার তো দিব্যি লাগছে ভাই । কি চমৎকার নদীর ধারটা— কলকাতা থেকে কতকাল কোথাও বার হইনি ভাই—মধুপুর যাওয়া হয়েছিল সেবার পুজোয়— দু'বছর হোল— —সে কোথার দিদি ? মধুপুর ? —পশ্চিমে সঁওতাল পরগণায়। পাহাড় আছে, শালবন আছে সেখানে। বেশ ভালো জায়গা—কিন্তু এ জায়গাও আমার বেশ ভালো লাগচে—কত পাখীর ডাক ! পাখীর ডাক শুনে