পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৬ বিভূতি রচনাবলী যাই তখন আমার মনে দিব্যি ফুৰ্ত্তি ছিল—হঠাৎ এমন হওয়ার কারণ হচ্ছে ওই লোকটার ভয়দেখানে কথাবাৰ্ত্তা। গায়ে পড়ে অত হিত করবার দরকার কি ছিল বাপু তোমার ? চক্কত্তিবুড়ে তো বলেই গিয়েছে, কত লোক কত কথা বলবে, কারো কথায় কান দিও না । কিছু না, গাছপালার ফল-ফুলুরি গায়ের লোক চুরি করে খায় কিনা। বাড়িতে একজন পাহারাদার বসালে লুঠপাট করে খাওয়ার ব্যাঘাত হয়, সেইজন্তেই ভয় দেখানো । যেমন ওই বৌটি কাল সন্ধ্যাবেল ঝিঙে চুরি করছিলো । অনেকদিন এমন আরামে থাকিনি। বিনা-খাটুনিতে পয়সা রোজগারের এমন সুযোগ জীবনে কখনো ঘটেনি। নিজের জন্ত শুধু ছটে রান্না—মিটে গেল কাজ ! সকাল সকাল রান্না সেরে নিয়ে নীচের বড় রোয়কে বসে আপনমনে গান গাইতে লাগলাম। এত বড় বাড়ির আমিই মালিক। কারো কিছু বলবার নেই আমাকে । য। খুশী করবো। হঠাৎ ভয়ানক আশ্চৰ্য্য হয়ে গেলাম। দোতলার নালির মুখ দিয়ে পড়তে লাগলো জল, যেমন ওপরের বারান্দাতে কেউ হাত-পা ধুলে জল পড়ে—বেশ মোটা ধারে জল পড়তে লাগলো। তখনি আমি উঠে রোয়াকের ধারে দাড়িয়ে দোতলার বারান্দার দিকে চেয়ে দেখলাম। তখনো জল পড়চে—সমানে মোটা ধারার । ওপরের সিড়ির দরজায় তালা দেওয়া । চাবি চক্কত্তি মশায় নিয়ে গিয়েচেন, সুতরাং দোতলায় যাবার কোনো উপায় আমার নেই । এ জল কোথা থেকে পড়চে ? মিনিট দশেক পড়ার পর জলের ধারা বন্ধ হয়ে গেল । আমার মনে হোল, চক্কত্তি মশায় বোধ হয় কোনো কলসী বা ঘড়াতে জল রেখে দিয়েছিলেন ওপরের বারান্দাতে, সেই কলসী কি-ভাবে উন্টে পড়ে গিয়ে থাকবে । নিশ্চয় তাই । তা ছাড়া জল আসবে কোথা থেকে ? একটু পরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আলো নিবিয়ে শুয়ে পড়বার সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখে ঘুম জড়িয়ে এলো। অনেক রাত্রে একবার ঘুম ভেঙে গেল, জানলা দিয়ে সুন্দর জ্যোৎস্না এসে পড়েচে বিছানায় । কি একটা ফুলের গন্ধও আসচে। বেশ সুবাস ফুলের । কি ফুল ? ঘুমের ঘোরেই ভাবচি এমন কোন সুগন্ধওয়াল ফুল তো বাড়ির কাছাকাছি দেখিনি! তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম। ও কিটি জানলার সামনে দিয়ে একটি বে চলে গেল রোয়াক বেয়ে । হ্যা, স্পষ্ট দেখেচি–ভুল হবার নয়! আমি তখুনি উঠে দরজা খুলে রোয়াকে গিয়ে দাঁড়ালাম । রোয়াকে দাডাতে দুটো জিনিস আমার কাছে স্পষ্ট হোল । প্রথম সেই ফুলের সুবাসটা রোয়াকে অনেকখানি ঘন, ঐ বৌটি যেন এই সুবাস ছড়িয়ে দিয়ে গেল এই কতক্ষণ ! না, কোনো ফুলের মুবাস নয়। এ কিসের মুবাস, তা আমার মাথায় আসচে না । কেমন একরকম যেন লাগচে ! একরকম নেশার মতো ! কেন আমি বাইরে এসেচি ? ও ! কে একটি বেী রেয়াক বেয়ে থানিক আগে চলে গিয়েছিল—সে-ই ছড়িয়ে গিয়েচে এই তীব্র সুবাস । কিন্তু কোনো দিকে নেই তো সে ! গেল কোথায় ? সে-রাত্রে সেই পৰ্য্যন্ত । কতক্ষণ পরে ঘরে এসে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে মনে হোল, সব স্বপ্ন । মনটা বেশ হালক হয়ে গেল । কাজ-কৰ্ম্মে ভালো করে মন দিলাম। বনজঙ্গল কেটে কিভাবে তরি-তরকারির আবাদ করবো, সেই আলোচনা করতে লাগলাম মনের মধ্যে । একটা অসুবিধে এখানে থাকবার—বডড নির্জনে থাকতে হয় । কাছাকাছি যদি একঘর লোকও শাকতে, তবে এত কষ্ট হোত ন-কথা বলবার একটা লোক নেই, এই হোল মহাকষ্ট।