পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૭ઝ বিভূতি-রচনাবলী হঠাৎ দেখি, সেই বৌটি ঝিঙে তুলতে এসেচে। নীচু হয়ে ঝোপের মধ্যে ঝিঙে তুলচে। সঙ্গে সঙ্গে দোতলার ঘরগুলোর মধ্যে এক মহী-কলরব উপস্থিত হোল । অনেকগুলো লোক —আন্দাজ জনপঞ্চাশেক, একসঙ্গে যেন হৈ-হৈ করে উঠলো—সব দরজা-জানলা যেন একটা বড়ের ঝপট লেগে একসঙ্গে খুলে গেল । বন কাটা ফেলে আমি ওপরদিকে চেয়ে দেখলাম। সামনের রোয়াকে এসে দাড়ালাম— কৈ, একটা দরজা-জানলার কপাটও খোলেনি দোতলার । যেমন তেমনি আছে ! ব্যাপার কি ? বাড়িটার মৃগী রোগ আছে নাকি ? মাঝে মাঝে এমন বিকট চীৎকার ওঠে কেন ? এবার তো ভুল হবার কোনো কথা নয়—সম্পূর্ণ সুস্থ মনে কাজ করতে করতে এ চীৎকার আমি শুনেচি এইমাত্র। এখন আবার চারিদিক নিঃশব, কোনো দিকে কোনো শব্দ নেই। সেই বৌটি আবার ঝিঙে তুলতে এসেচে এই গোলমালের মধ্যে। দৌড়ে গেলাম রান্নাঘরের পেছনে । সেখানেও কেউ নেই । সেদিন রাত্রে এক ঘটনা ঘটলো। ভারি মজার ঘটনা বটে । থেয়েদেয়ে সবে শুয়েচি, সামান্ত তন্দ্রা এসেচে—এমন সময় কিসের শব্দে তন্দ্র। ছুটে গেল । চেয়ে দেখি, আমার বিছানার চারিপাশে অনেক লোক জড়ো হয়েচে—তাদের সবারই মাথায় লাল পাগড়ি, হাতে ছোট ছোট লাঠি-আশ্চর্য্যের বিষয়, সকলেরই মুখ দেখতে একরকম । একই লোক যেন পঞ্চাশটি হয়েচে, এইরকম মনে হয় প্রথমটা । বহু আরশিতে যেন একটা মুখই দেখচি । কে যেন বলে উঠলোঁ—আমাদের মধ্যে আজ কে যেন এসেচে ! একজন তার উত্তর দিলে—এখানে একজন পৃথিবীর লোকের বাড়ি আছে অনেক দিন থেকে। আমি দেখিনি বাড়িট, তবে শুনেচি। যারা দেখতে জানে, তারা বলে । সেই বাড়ির মধ্যে একটা লোক রয়েচে । —সব মিথ্যে ! কোথায় বাড়ি ? —আমরা কেউ দেখিনি । —তবে এসো, আমরা নাচ আরম্ভ করি । বাপ রে বাপ ! কথায় বলে ভূতের নেত্য ! শুনেই এসেছিলাম এতদিন, এইবার স্বচক্ষে দেখলাম। সে কি কাণ্ড ! অতগুলো লোক একসঙ্গে লাঠি বাজিয়ে এক তাণ্ডব নৃত্য শুরু করে দিলে, আমার দেহের মধ্যে দিয়ে কতবার যে এল গেল ! তার সঙ্গে সঙ্গে বিকট চীৎকার আর হল্লা ! আমার বিছানার বা আমার কোনো অংশ তারা স্পর্শও করলে না । আমি যে সেখানে আছি, তাও যেন তারা জানে না। ওদের হুঙ্কার আর ভৈরব নৃত্যে আমি জ্ঞানশূন্ত হয়ে গেলাম। যখন জ্ঞান হোল, তখন শেষ-রাত্রের জ্যোৎস্না খোলা জানলা দিয়ে এসে বিছানায় পড়েচে । সেই ফুলের অতি মৃদু সুবাস ঘরের ঠাণ্ডা বাতাসে। আমি আধ-অচেতন ভাবে জানলার বাইরে জ্যোৎস্নামাখা গাছপালার দিকে চেয়ে রইলাম। কতক্ষণ পরে জানি না ভোর হয়ে গেল । - বিছানা ছেড়ে উঠে দেখি, ঘুমের কোনো ব্যাঘাত হয়নি। মুনিদ্রা হোলে শরীর যেমন ঝরঝরে আর সুস্থ হয়, তেমনি বোধ করচি । তবে রে ভূতের নাচ কে দেখেছিল । সে নাচ কি তবে ভুল ? খেয়েদেয়ে পরম আরামে