পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

있속이 বিভূতি-রচনাবলী এনে জলখাবার খাওয়ানো চাই-ই। আমি ডাক্তারি করি পাড়াগায়ে—নলিনী দত্তমশাইয়ের বাইরের চণ্ডীমণ্ডপে থাকি। আমার কাছে ভাড়া তিনি নেন না । বলেন—না না, ব্রাহ্মণ দেবতা। আপনি আমার বাড়িতে দয়া করে বাস করচেন, এতেই আমার ভিটে পবিত্র হয়ে যাচে । আবার ভাড়া নেবো এই পাড়াগায়ে আপনার কাছে ? - সে যাক গে। ভাড়া না হয় না নিলেন । কিন্তু রোজ সকালবেলা ডেকে আমার জলখাবার খাওয়ানো চাই। মুড়ি, গুড়, চিড়ে, নারকোল—যেদিন যা জোটে, একটা পাথরের থোরা ভৰ্ত্তি করে দেবেন। অত খাওয়া আমার অভ্যেস নেই বল্পেও শুনবেন না । আমার লজ্জা করে রোজ রোজ থেতে । ভাড়া নেবেন না, তার ওপর রোজ জলখাবার ! এও একরকম জুলুম ছাড়া আর কি ? দত্তমশায়ের মেয়ে এসে বল্লে—ডাক্তারবাবু, আপনি না খেলে বাবা কি কিছু খাবেন ? দাতে কুটো দেবেন না । —কেন ? —ব্রাহ্মণ বাড়িতে অভুক্ত থাকলে বাবা খাবেন না । —বটে | আচ্ছা চলে । সেদিন গিয়ে দেখি চালভাজ, ছোলভাজা আর বুনো নারকোল কোরা । পৃথকৃ বাটিতে খেজুর গুড় । চায়ের ব্যবস্থা এদের বাড়িতে নেই, সেকেলে গৃহস্থ, চা খাওয়ার রেওয়াজ গোড়া থেকেই গড়ে ওঠেনি । আমি পাস করা ডাক্তার নই। বাড়িতে বই দেখে হোমিওপ্যাথিক শিখে আগে গ্রামেই ডাক্তারি করতাম । কিন্তু গ্রামের লোক পয়সা দিতে চায় না। ধার বাকি ফেলে আর শোধ করে না। তাই দেখেশুনে এই রঘুনাথপুরে এসে বসেচি আজ প্রায় তিন-চার মাস। আমাদের গ্রাম থেকে অনেক দূরে—আট-ন ক্রোশ। রেল নেই, হাটা পথে আসতে হয়। এ গ্রামে এসে প্রথমে এক চাষী-কৈবৰ্ত্ত গৃহস্থবাড়িতে দিন পনরো ছিলাম । হঠাৎ একদিন সকালে নলিনী দত্তমশায় গিয়ে আমায় বল্লেন—প্রাতঃপ্রণাম হই ডাক্তারবাবু। আপনার নিবাস কোথায় ? —আসুন, বসুন । আপনার এ গ্রামে বাড়ি ? আমার বাড়ির মালিক আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বল্লে—উনি এ গায়ের একজন কৰ্ত্ত-ব্যক্তি লোক । ওঁর নাম নলিনী দত্ত । দত্তমশায় তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন—ন, না, কৰ্ত্ত না হাতী ! ও সব কিছু না। তা গিয়ে, আপনার কাছে এসেছিলাম একটা অকুরোধ করতে । —কি, বলুন ? —আমার বাড়িতে দয়া করে আপনাকে থাকতে হবে । আমার বাইরের ঘর অাছে। কোনো অসুবিধে হবে না । —ভাড়া কি রকম দিতে হবে ? —আপনার নিজের বাড়ি। ড্র দেবেন কাকে ? চলুন দিকি জিনিসপত্তর নিয়ে । ভারি অদ্ভুত লোক তো ! কিছুতেই ছাড়লেন না। লোক পাঠিয়ে জিনিসপত্তর নিয়ে গেলেন মুকুন্দদের বাড়ি থেকে । গত মাঘ মাসের কথা । সেই পৰ্য্যন্ত এখানেই আছি । আজ নলিনী দত্ত বাইরে এসে বল্লেন—এখন কোথাও যাবেন ? —না ।