পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ২৭৩ | —কি যে বলেন ! ব্রাহ্মণের পাতে রান্না তরকারি দেবো সে ভাগ্যি কি আর করে এসিচি ? —ত হোলে মিটেই গেল । —একটা জিনিস কাল খাওয়াবো । —কি ? —বলুন না ? দীপুর চোখে কৌতুকের হাসি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম ও কি জিনিসের কথা বলচে । তবুও মজা দেখবার জন্যে বল্লাম—তুমি বলে । আমি বুঝতে পারলাম না। কচুর শাক ? দীপু হি-হি করে হেসে বল্লে—না। আহা, কি বুদ্ধি আপনার | কচুর শাক তে সক্ড়ি । আমার রান্না কচুর শাক আপনার পাতে দেবো ? আমি কৃত্রিম দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বল্লাম—সে আমার অদৃষ্ট ! —আহা! আপনার অদৃষ্ট না আমাদের অদৃষ্ট ! আপনি ভারি— —কি জিনিসটা কাল খাওয়াবে বল্লে না ? —তালের বড় । —ওটা বুঝি সকুড়ি নয় ? তবুও মাথা রক্ষে। বাঁচলুম। —থাক, আপনাকে আর ব্যাখ্যান করতে হবে না । চলি এখন, অনেক কাজ । দীপুকে দেখে আমার বড় কষ্ট হয় । পচিশ-ছাব্বিশ বছর ওর বয়েস হবে, কিন্তু বালিকার মত সরল। মুখ বুজে কি খাটুনিটাই খাটে দিনরাত ! বাবার মন যুগিয়ে চলতে ওর জোড়া নেই, দত্তমশায় মুখের কথা খসালেই হোল ও কি খায় সারাদিন খাটুনির পর তা কে দেখচে ? দত্তমশায় নিজের অতিথিদের নিয়েই ব্যস্ত। তাদের বেলা পান থেকে চুন না খসে । পরের দিন শুনলাম অতিথিরা আরো দিন চার-পাচ থেকে যাবেন । খবরটা পেলাম দত্ত মশায়ের মেয়ের কাছ থেকেই। সে এসে বল্লে—আমার পাপ হবে, না ডাক্তারবাবু ? অবাক হয়ে বল্লাম—পাপ ? কিসের পাপ ? —আপনার কাছে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলাম না, সেইজন্তে ? —কি কথা ? দীপু কাজের ফঁাকে মাঝে মাঝে আমার কাছে আসে। আমি ওর কথা শুনি মন দিয়ে। সায় দিই ওর কথায়, বোধ হয় ওর ভালো লাগে । কথা বলবার মানুষ এ বাড়িতে আর ওর কেউ নেই আমি ছাড়া । ও বল্লে—ভুলো কেন ও-রকম আপনি ? তালের বড় খাওয়াতে চেয়েছিলাম আজ মনে আছে ? তা আজ হোল না । —তা হোলে অতিথিদের তালের বড় খাওয়ানো হোল না ? —সেই জন্তেই তো। ওঁরা কাল যাবেন না। আরো দিন চার-পাচ থাকবেন কিনা, তাই বাবা বললেন আজ না করে ওঁদের যাবার আগের দিন করলেই হবে । —খুব ভালো কথা । কিন্তু—ওঁদের তো কালই যাবার দিন ধাৰ্য্য ছিল ? —কি নাকি বাশঝাড় নিয়ে গোলমাল বেধেচে ওঁদের মধ্যে একজনের। সে গোলমাল না মিটিয়ে তো যাওয়া হয় না । թ —সে তো বটেই। একজনের কাজ যখন বাকি, তখন বাকি তিনজন একযাত্রায় পৃথক ফল করে আর যান কি ভাবে ? যাওয়া উচিত নয় । —সে আবার কি ? বি. র. ৪—১৮