পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ՀԳd বলে বাটটা হাতে তুলে নিয়ে দেখি তালের বড়। ਸੋਵੇ। গরম। আমি কিছু বলবার আগেই ও বল্লে—ব্রাহ্মণকে কথা দিয়েছিলাম খাওয়াবো। তাই ছোট একটা তালের গোলা করে আপনার জন্তে গোটাকতক ভেজে এনেচি। গণ্ড দশ-বারো সবসুদ্ধ, আমি যাই, রান্নাবান্না সব পড়ে রয়েচে । —শোনো দীপু, যেও না, আমার আলোটা জেলে দিয়ে যাও । —অত কুঁড়ে কেন ? কই কোথায় দেশলাই দেখি ? —আচ্ছ, কেন তুমি আমার জন্তে তালের বড় করতে গেলে ? আর কারো জন্তে না ? —না, ন, শুধু আপনার জন্তে। বাবার কাছে বলবেন না। কেউ জানেন না। সব লুকিয়ে ফেলেচি। তলের খোসা, তালের গোলা—চললাম । কেউ যেন জানে না । দীপু চলে গেল । ওর তালের বড়ার বাটি আমার সামনে পড়ে রইল। জোনাকি-জলা অন্ধকারে কোথায় কি নৈশ পুপ ফুটেচে তার সুবাস বেরুচ্চে। স্তন্ধ হয়ে বসে রইলুম। - দীপুর মনের ভেতরটা আমি এই নির্জন আঁধার সন্ধ্যায় বসে স্পষ্ট দেখতে পেলাম। ওর মুখের হাসিতে তা ধরা দিয়েচে । ওর মন আমি বুঝতে পেরেছি—ও নিজে-হয়তো বোঝেইনি । এখানে আমি আর থাকবো না । থাকা উচিত হবে না। অতিথির দলকে দত্তমশায় তোয়াজ করুন যত খুশি, তারা তালুকমৌজার বৈষয়িক মুবন্দোবস্ত যতদিন ধরে করুক বসে, কিন্তু আমাকে এখান থেকে সরে পড়তে হবে। দত্তমশায় অতি সরল, ভালো লোক । দীপুও তাই । ওদের নামে কোনো কথা উঠলে আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না । তা ছাড়া, জালে জড়াই কেন নিজেকে ? আমার বাড়িতেও স্ত্রীপুত্র আছে। সেই সপ্তাহের শেষেই নিৰ্ম্মম ভাবে জাল গোটালাম । দত্তমশায় এসে পথরোধ করে দাড়িয়েছিলেন। বল্লেন—বলা কওয়া না, হঠাৎ চললেন, মানে ? কি অপরাধ হোল আমার ? কোনো লম্বা কৈফিয়ৎ দেবার আবহ্যক বিবেচনা করিনি। ডাক্তারি ভালো চলচে না, রুগীপত্তর সুবিধে হচ্চে না । দীপু যাবার আগের দিন সন্ধ্যেবেলা এলো। বল্লে—আপনি নাকি চলে যাচ্চেন, সত্যি ? - —হঁ্য । —কেন যাবেন ? —চলচে না । —কেন, বেশ তো রুগী আসে ? —ওতে ডাক্তারি চলে না । —যাবেন সত্যি ? -छ्रे । দীপু কেঁদে ফেললে। চোখের জলে ভিজে আমার পায়ের ধুলো নিয়ে চলে গেল। আমি চলে যাবার সময় দত্তমশায়ের ডাকাডাকি সত্ত্বেও সে আমার সঙ্গে দেখা করেনি । সাত মাস পরে দত্তমশায়ের এক চিঠি পেলাম। দীপুর খুব অমুখ, আমি যেন একবার দেখতে যাই । ইতিমধ্যে আমাদের গ্রামেই ডাক্তারখানা খুলে বসেচি। দু'একদিন যেতে দেরি হোল। গিয়ে দেখি দীপু বিছানার সঙ্গে মিশে গিয়েচে । আগেকার স্বাস্থ্যবতী, মুন্দরী দীপুকে