পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૧ઝ বিভূতি-রচনাবলী বালক, তার মত চুপচাপ বসে থাকতে পারবো না, গোলমাল করবোই। ত হোলে মাছ আসবে না চারে । ভয় পেয়ে ভেসে যাবে। রামহরি হোড় তুরীয় অবস্থা থেকে নেমে এসে আমাদের দিকে চেয়ে বল্লেন—এই ! ওখানে বসবি নাকি ? —ই জ্যাঠামশায় । আপনার পায়ে পড়ি কিছু বলবেন না আমাদের। রামহরি বিরক্তিপূর্ণ মুখে বল্লেন—যতো আপোদ! আর জায়গা পেলি নে ? আচ্ছা চুপ করে বোস। কেউ কথাটি কইবি নে । কিছুক্ষণ কেটে গেল। প্রায় আধঘণ্টা ছিপ ফেলেচি আমরা, কিন্তু একটা মাছও ঠোক্রায় নি। গোলমাল না করি, কথাবার্তা চলচে সমানে । ক্রমে কথাবার্তার মুর চডলো । পচা বল্লে—ওই ক্ষেতটাতে কাকুড় হয়েচে, সন্তু যা গোটা-চারেক কচি দেখে কাকুড় তুলে আন— রামহরি বর্শেল ওদিক থেকে ধমক দিয়ে বল্লেন—এই সব, কি হচ্চে ? আমরা ধমক খেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। ইতিমধ্যে হাবুল এবং পচা বাবলা-কাটার নীচু বেড়া ডিঙিয়ে যুদূরবর্তী কাকুড়ের ক্ষেতে ঢুকে পড়লো এবং তিনটে বড় বড় কাকুড় নিয়ে আমাদের কাছে ফিরে এল । গণ্ডগোল বাধলো কাকুড়ের ভাগ নিয়ে । আমি বল্লাম—তোমরা ভাগ বেশী নেবে কেন ? সমান ভাগ করে । আমি তোমাদের ছিপ নিয়ে চৌকি না দিলে তোমরা কাকুড় আনতে পারতে ? পচা বল্লে—আমি বড়টা তুলেচি, ওটা আমার। যতীশ নাপিতের ছেলে কেষ্ট বল্লে—তা কেন ? সমান ভাগ হবে। রামহরি আবার ধমক দিয়ে বল্লেন—ও সব কি হচ্চে রে ? মাছ ধরতে এসেছিল, না কাকুড় খেতে এসেছিস এখানে ? আমি বল্লাম—মাছ মোটে ঠোকরাচ্চে না জ্যাঠামশায় ! —কি করে মাছ ঠোকরাবে ? তোমাদের তো মাছ ধরা নয়, মাছ ধরা খেলা। কি জানিস তোরা মাছ ধরার ? সব ক’টাতে জুটে হুটোপটি করচিস আর কাকুড় চুরি করচিস পরের ক্ষেত থেকে । মাঝে পড়ে আমারও মাছ হোল না তোদের গোলমালে । নইলে যা চার করেছিলাম, কুঁড়ো দিয়ে আর পুরনো তেঁতুল— রামহরি হঠাৎ চুপ করে গেলেন। উত্তেজনার মুখে মৎস্য-শিকারের গুহ তত্ত্ব প্রকাশ করে ফেলেছিলেন আর একটু হোলে । আমি চুপি চুপি বল্লাম—ওই শুনে রাখ, কুঁড়ো আর পুরোনো তেঁতুল—এই দিয়ে চার করতে হবে বুঝলি তো ! ভুলে বলে ফেলে দিয়েচেন— হাৰুল ছিপ একখানা জল থেকে তুলে বল্লে—মছ মোটে ঠোকরাচ্চে না । রামহরি তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ছিপটার দিকে চেয়ে বল্লেন—ও কি বহর দিয়েছিস্ ? তোদের সবই হোল ছেলেখেলা ! জল মেপে বহর দিতে হয় । আমি আগ্রহের সুরে বল্লাম—সে কি করে করতে হয় জ্যাঠামশায় ? —জল মেপে নিসনি ? —ভা তো জানিনে । রামহরি দাত খিচিয়ে বরেন—তা জানবে কেন ? জানো কাকুড় চুরি করতে। চিল বেঁধে