পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ՀԳԲ, স্বতে জলে ছেড়ে স্তখে কতটা ভিজেছে—সেখানে ফাতনা তুলে বাধো—তাকে বহর দেওয় বলে। দেখি ? আমি ছিপ তুলে দেখাতে রামহরি বর্শেল সেদিকে চেয়ে গম্ভীর ভাবে বল্পেন—আড়াই হাত বহর দে । সন্ত্রমে আমার মন পূর্ণ হয়ে গেল। রামহরি বর্শেল স্বয়ং আমাদের বহর সম্বন্ধে উপদেশ দিয়েচেন । এষ্টবার মাছ না হয়ে যায় ? কিন্তু কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকবার পরে আমাদের মধ্যে আবার গুঞ্জন-রব উখিত হোল এবং খুব শীগগির সে গুঞ্জন কলরবে পরিণত হয়ে গেল । এবার গোলমাল বাধলো ছিপের বহর নিয়ে । প্রত্যেকে প্রত্যেকের দোষ ধরতে ব্যগ্র । পচা বল্লে—আমায় ছিপ দ{ও—আমি নিজে বহর দিই । আমি বল্লাম—তুই কি বুঝিস বহরের ? অামায় দে, দিয়ে দিচ্চি। —থাকৃ, তোর আর ওস্তাদি করতে হবে না—ঢের হয়েচে । —মুখ সামূলে কথা কবি সন্তু! —তুই মুখ সাম্লে— 願 আমাদের মুর তখন পঞ্চমে উঠেচে । রামহরি বল্লেন—কি বিপদেই পড়েচি এদের নিয়ে ! আজ যে আমার চার করাই মাটি হোল দেখচি এদের জালায়! তোরা বাপু অন্ত জায়গায় যা —ওঠ ওখান থেকে—বেরো আমরা তাড়া খেয়ে ছিপ গুটিয়ে সেখান থেকে উঠে আর কিছু দূরে গিয়ে বসলাম। একটা কাশঝোপের আড়াল থাকার দরুন সেগান থেকে রামহরি বশেলকে ভাল করে দেখা যায় না। আরও কিছুক্ষণ কেটে গেল । সামনের ছোট খালে কচুরিপানার দামে নীল ফুল ফুটেছে, বর্ষার জল থৈ-থৈ করচে খালের কানায় কানায় । ওপারের চরে আরামডাঙা গ্রামের বঁাশ-খেজুর-তালগাছের শীর্ষ বৃষ্টিধোয়া নীল আকাশের তলায় একটি শু্যামল সরলরেখা রচনা করেচে। দু-একটা সাদা বক জলের ধারে পানাশেওলার দামের ওপর চরে বেড়াচে । হঠাৎ একটা অস্পষ্ট চীৎকার শুনে আমরা রামহরি জ্যাঠার দিকে চাইলাম। তিনি দাড়িয়ে উঠে একটা বড় ছিপ দুহাতে হ্যাচক টান মেরে তুললেন—এটুকু আমরা দেখলাম। তারপর তিনি বলে উঠলেন—যা— হাবুল বল্লে—রামহরি জ্যাঠা মস্ত বড় মাছ বাধিয়েচে, চল গিয়ে দেথি— সবাই মিলে তখনি ছুটে গিয়ে শুনলাম প্রকাও মাছ বেধেছিল ওঁর ছিপে, কিন্তু উনি টান দিতেই ছিপের আগা ভেঙে নিয়ে মাছটা পালিয়েচে । সত্যি দেখি, বড় একটা ছিপের আগার দিকটা ভাঙ, ছিপট হাতে করে বোকার মত রামহরি দাড়িয়ে । আমাদের দেখে বিরক্তির সুরে বীজের সঙ্গে তিনি বল্লেন—তোদের জন্তে আজ সব মাটি। না দিলি চারে মাছ আসতে, না দিলি সুস্থ হয়ে মাছ ধরতে। সেই বেলা তিনটে থেকে পেছনে লেগেচিদ বাপু, মাছ ধরতে আসিস কেন তোরা ? কি বুঝি মাছ ধরার ? এ কি ছেলের হাতে পিঠে ? এত বড় মাছ খেলে, তোদের জালার তুলতে পারলাম না, স্বতে কেটে নিয়ে পালিয়ে গেল । না, আজ আর মাছই ধরবে না। কাল থেকে আমার ত্রিসীমানায় বসতে দেবো না বলে দিচ্চি— রামহরি জ্যাঠার যত রাগ আমাদের ওপর এসে পড়েচে বুঝলাম। নইলে তার মাছ পালিয়ে