পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&bペ বিভূতি-রচনাবলী সেদিন জেলে দিবি । দেখাবে ভালো । “ বিয়ের বরযাত্রী গেল গালুদ্ধ বোঁটিয়ে । কিন্তু আমার যে অত উৎসাহ, আমারই যাওয়া হোল না। কেন যে যাওয়া হোল না, কি জানি । বাবা গেলেন অথচ আমায় নিয়ে গেলেন না। তার জন্তে কোনো কান্নাকাটি করলাম না। - খাওয়ার ওপর আমার বিশেষ কোন লোভ নেই। খেয়ে আমি সহ করতে পারিনে, পেটের অমুখ করে। ওই জন্তেই বোধ হয় বাবা আমায় নিয়ে গেলেন না, কে জানে ? মঙ্গলবারে সন্ধোর আগে বর-বে। আসবে, বরযাত্রীরা ফিরে এসে বল্পে । আমি ঠিক করলাম যেমন ওরা আসবে অমনি যে পথে আসবে ওর, সে পথের দুধারের গাছে যত পাকাটি বেঁধেছি, সবগুলো জালবো । কেবল ঘর-বার করছি,-একে ওকে কেবল জিগ্যেস করছি, কথন বর আসবে। বেলা যায়-যায় । এমন সময় নীলু এসে বল্লে—শীগগির চল—বেী আসচে— আমি বল্লাম—কে বল্লে ? নীলু আমার হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে চললো। গোয়ালাপাড়ার মোড়ে গিয়ে বাজনার শব্দ পাওয়া গেল যথেষ্ট। বল্লাম-কদর রে ? —তা বুনোপাড়ার কাছে হবে। অনেক দূর এখনো। দেখতে দেখতে শু্যামাকাকার ঘোড়ার গাড়ি কাছে এসে গেল । আমরা ঘোডার গাড়ি বেশি দেখিনি, দু-একথান কালেভদ্রে শহর থেকে এসে এ গ্রামে ঢোকে, তাও আমাদের জীবনে সবসুদ্ধ, মিলে বার-দুই দেখেছি মাত্র। ছেলের দল কলরব করে উঠলো—ওই রে ঘোড়ার গাড়ি । সঙ্গে সঙ্গে বর বৌমৃদ্ধ গাডি কাছে এসে পড়লো। এইবার কিন্তু বাধলো মুশকিল। পাকা রাস্তা ছেড়ে খানিকট কাচা রাস্তায় গেলে আমাদের গ্রাম। শ্রাবণ মাসের শেষ, বেজায় কাদা হয়েচে কাচা রাস্তায় । বিশেষ করে একটা জায়গায় হাবড় কাদা—সেটার নাম ষাড়তলার দ’ । গাড়ি সেখানে এসে সেই হাবড়ে পড়ে পুতে গেল। মোষের গাড়ি সে গাড়ি সে কাদায় পড়লে ওঠে না, শহুরে ঘোড়ার সাধ্যি কি সে হাবড় থেকে গাড়ি ওঠায় ? ননী বল্লে—এ রামকাদা থেকে বাছাধনের আর উঠতে হবে না। ও রোগ ঘানা ঘোড়ার কক্ষে এই হাবড় ঠেলে ওঠা ? তখন সবাই মিলে চাকা ঠেলতে লাগলাম । গাড়ি চলে এলো শু্যামাকাকাদের বাড়ি । হামাকাকার মা বে বরণ করে ঘরে তুললেন । তখনও সন্ধ্যা হয়নি। বর্ষাকাল, রোদ আছে কি নেই বোঝা যায় না-যদিও তিন-চারদিম বৃষ্টি হয়নি। আমাদের আকর্ষণের বস্তু হয়ে দাড়িয়েচে ঘোড়ার গাড়িখানা। সেখানা বকুলতলায় দাড়িয়ে, তার চারিপাশ ঘিরে গ্রামের যত ছেলেপিলে । গাড়োয়ান বলচে, যদি আমরা ষাড়াতলার দ’-এর হাবড় পর্যা ৪ গিয়ে চাকা ঠেলে গাড়ি উঠিয়ে দিতে রাজী হই, তবে সে আমাদের গাড়িতে চড়তে দেবে পাকা রাস্ত পৰ্য্যন্ত । আমরা সবাই হৈ-হৈ করে গাড়িতে উঠলাম, কতক গাড়ির ছাদে, কতক পেছনে, কতক ভেতরে। ষাড়াতলার দ-এর কাদা থেকে সবাই মিলে ঠেলে গাড়ি উঠিয়ে দিলাম, তার বদলে পাকা রাস্ত পৰ্য্যস্ত আমাদের গাড়িতে চড়িয়ে নিয়ে গেল। কি মজা !