পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ २७७ আমরা যখন পাকা রাস্তায়, তখন সন্ধ্যা হয়ে অন্ধকার নামলো । ননী বল্লে—গা ধোবো কোথায় ? সব্বো অঙ্গে কাদা । আমাকে বল্লে—মশাল জালবিনে ? চুপ কর কে ডাকচে । সৰ্ব্বনাশ ! আমার বাবার গলা । সন্ধে হয়ে গিয়েচে । ঘুট্যুটি অন্ধকার। বাবা আমায় খুঁজতে বেরিয়েচেন । তিনিই ডাকাডাকি করচেন। সন্ধের সময় বাড়ি ফিরিনি, বাবা ডাকতে বেরিয়েচেন । ননী বল্লে—আলো দিবিনে গাছে গাছে ? আর আলো! আমার মুখ শুকিয়ে গিয়েচে । বাবা কাছে এসে পড়েচেন ডাকতে ডাকতে । আমি উত্তর দিলাম—যা-ই-ই— এই সন্ধ্যেবেলা সারা গায়ে কাদা মেখে আমি ভূত হয়ে আছি। আপাদমস্তক কাদা । চালাক গাড়োয়ান একটুখানি গাড়িতে চড়বার লোভ দেখিয়ে কাজ গুছিয়ে চলে গিয়েচে । এখন আমায় ঠেকায় কে ? বাবা এসে আমার কান ধরলেন। বল্লেন—হতভাগা বাদর, পড়া নেই শুনো নেই—এত রাত পৰ্য্যস্ত বাদরের দলে মিশে—এ কি ? গায়ে এত কাদা কেন ? . আমি কাদো-কাদো সুরে বল্লাম—এই গাডোয়ান বল্লে—আমার গাড়িটা একটু ঠেলে দাও— বড় কাদা—তাই সবাই মিলে—আমি আসতে চাইনি...আমায় ওরা নিয়ে এল—ওই ননী, নিস্তে, শশী— বলে সাক্ষ্যপ্রমাণের চেষ্টায় সঙ্গীদের দিকে ফিরে চাইতে গিয়ে দেখি জনপ্রাণী সেখানে নেই। কে কোথা দিয়ে সরে পড়েচে এরি মধ্যে । বাবা বল্পেন—তোমার দোষ নেই ? তোমাকে সবাই নিয়ে গিয়েছিল ? তুমি বুড়োদামড়া কিছু জানো না—না ? ঘোড়ার গাড়িতে না চড়লে তোমার— কথা শেষ না করেই দুড়দাড় মার। চড় ও কিল। বিষম মার। চোখে সর্ষের ফুল । কঁদিতে কঁদিতে বাড়ি ফিরে এলাম বাবার আগে আগে । মা বল্লেন— আচ্ছা, তোমার কি ভীমরতি হয়েছে ? না কি ? এই ভবৃসন্ধ্যেবেলায় ছেলেটাকে অমন ভূতোনন্দি মার—ওম, তা পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে না হয় গিয়েইচে একটু, আজ একটা আনন্দের দিন ওদের, তোমার মত বুড়ে তো ওরা নয়—ছি ছি—নে, এদিকে সরে আয়, খুব আমোদ করেচ ! এসো সে-রাত্রে পাকাটি জালিয়ে রোশনাই করা আমার দ্বারা আর সম্ভব হয়নি । এর ত্রিশ বছর পরের কথা । আমি কলকাতায় চাকরি করি। বর্ষাকাল । মহকুমার স্টেশনে নেমে বাড়ি যাবে, এমন সময় শু্যামাকাকার ছেলের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হোল । শুামাকাকা মারা গিয়েচেন আজ দশ-বারো বছর, গ্রাম ছেড়ে তার ছেলেরা আজকাল শহরে বাস করে, শু্যামাকাকার বড় ছেলেটি এখানে চাকরি করে। ওর নাম অরুণ । অরুণ বল্লে—বাড়ি যাচ্চেন দাদা ? দীপ্তির বিয়ে পরশু। আপনাকে আসতে হবে অবিপ্তি অবিশুি । আমুন না একবার আমাদের বাসায়— গেলাম। দীপ্তি ষোল-সতেরো বছরের মুত্র মেয়ে । আমার দেখে খুশী হয়ে এগিয়ে এল। বল্লাম—কোথায় তোর বিয়ে হচ্ছে রে দীপ্তি ? দীপ্তি মুখভঙ্গি করে বল্লে—আহা-ছা!