পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ←Ꮂ☾ করে গেল । বিবাহের দিন এসে পড়লো । বিবাহের লগ্ন সন্ধ্যার অন্ধকারেই। অন্যান্য বরযাত্রী কতক নৌকোতে, কতক গরুর গাড়িতে রওনা হয়ে কনের বাড়ি চলে গেল। শহর থেকে একখানা ঘোড়ার গাড়ি এসেচে, সেখানেতে বর, বরকর্তা, পুরুত ও আমি যাবো এই স্থির হয়েছে । বর বল্লে—নিতাইদ, চ খেয়ে নাও, আর বেশি দেরি না হয়, বাবাকে বলে—তুমিই সব গুছিয়ে নাও ! —সে ভাবনা তোমার কেন ? যা করবার করচি । —শোনো একটা কথা । দীপ্তি তোমায় কিছু বলেছিল ? 一讯山 —বিয়ের বিষয়ে ? 一可1日 —দেখা হয়নি আসবার দিন ? —না । কেন ? —তাই জিগ্যেস করচি । সন্ধ্যের অল্পই দেরি আছে, তখন আমরা ঘোড়ার গাড়িতে গিয়ে উঠলাম, গাড়িও ছেড়ে দিলে । আমাদের পিছনে শাক বাজতে লাগলো, হুলু পড়তে লাগলো। গাড়ি গী ছাড়িয়ে খানিকদূর যেতে না যেতে অন্ধকার নামলো, সঙ্গে সঙ্গে ধাড়াতলার দায়ের কাদায় গিয়ে পড়লো গাড়ি। কিছুতেই আর ওঠে না। ঝাড়া পনরো মিনিট বৃথা চেষ্টার পর গাড়োয়ান বল্লে—বাবু, একটু নামতে হবে। খালি গাড়ি তখন নিয়ে গিয়েছিলাম, এখন বোঝাই গাড়ি যাবে না। আপনার একটু নামুন— অগত্যা নামা গেল—কিন্তু তখন গাড়ির চার চাকা যা পুতবার পুতে গিয়েচে । ঘোড়াকে চাবুক মারলে কি হবে, গাড়ি নড়ে না। তখন আমি আর বরকর্তা দুজনে সেই কাদায় নেমে চাকা ঠেলি । কোনো লোক নেই। বরকে বা পুরুতমশায়কে অনুরোধ করা যায় না চাকা ঠেলতে । আমরা দুজন ছাড়া ঠেলবে কে ? দীপ্তির বিয়ের সুলগ্ন উত্তীর্ণ না হয়ে যায়, তার বিয়েতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, প্রাণপণে ঠেলতে লাগলুম সেই চাক, সেই ধাড়াতলার হাবড়ের মধ্যে। আপাদমস্তক কাদায় মাখামাখি হোল । বরকত্তা বুড়োমানুষ, তাকে আমি বেশি ঠেলতে দিলাম না। নিজেই ঠেলে কাদা পার করে তুললাম। বর বল্পে—এ, তোমার এ কি চেহারা হোল ? কাদায় যে— আমি বল্লাম—তোমরা যাও, আমি যাচ্চিনে— সবাই বলে উঠলো—সে কি ? সে কি ? সে কি হয় নাকি ? —আচ্ছ, এগোন আপনারা । পেছনে আসচি। জামাকাপড় ছেড়ে আসি— গাড়ি চলে গেল । f আমি দাড়িয়ে রইলাম সেদিকে চেয়ে । আর আমি যাবে না। দীপ্তির বিয়ে সুলগ্নে হোক, বাধাশূন্ত হোক ।