পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>b, বিভূতি-রচনাবলী সাহস করা যায় না। দাদা বললে—কি হবে জিতু “চল পচাঙে মাসিমার কাছে ফিরে যাই। -গীতা বললে—বাবা পিঠের ছাল তুলবে আজ না ফিরে গেলে বাসায়। না দাদা, বাড়িই চলো । দাদা ভেবে বললে—এক কাজ করতে পারবি ? পাকদণ্ডীর পথে ওপরে উঠতে যদি পারিস —ওখান দিয়ে লিণ্টন বাগানের রাস্তা। আমি চিনি, ওপরে জঙ্গলও কম। যাবি ? দাদা তা হলে খুব ভীতু তো নয়! পাকদণ্ডীর সে পথটা তেমনি দুর্গম, সারা পথ শুধু বন জঙ্গল ঠেলে ঠেলে উঠতে হবে, পা একটু পিছলে গেলেই, কি বড় পাথরের চাই আলগা হয়ে খসে পড়লে আটশ' কি হাজার ফুট নীচে পড়ে চুরমার হতে হবে। অবশেষে ঘন বনের বৃষ্টিভেজা পাত-লতা, পাথরের পাশের ছোট ফার্নের ঝোপ ঠেলে আমরা ওপরে ওঠাই শুরু করলাম—অন্য কোনো উপায় ছিল না । কাপড়-চোপড় মাথার চুল বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেল—রক্ত জমে হাত-পা নীল হয়ে উঠল। পাকদণ্ডীর পথ খুব সরু, ছজন মামুষে কোনোগতিকে পাশাপাশি যেতে পারে, বায়ে হাজার ফুট খাদ, ডাইনে ঈষৎ ঢালু পাহাড়ের দেওয়াল খাড় উঠেছে তাও হাজার-বারোশ ফুটের কম নয়। বৃষ্টিতে পথ পিছল, কাজেই আমরা ডাইনের দেওয়াল ঘেষে-ঘেষেই উঠচি। পথ মানুষের কেটে তৈরি করা নয় ব’লেই হোক, কিংবা এ-পথে যাতায়াত নেই বলেই হোক—ছোটখাটো গাছপালার জঙ্গল খুব বেশী। ডাইনের পাহাড়ের গায়ে বড় গাছের ডালপালাতে সারা পথটা ঝুপ সি করে রেখেছে, মাঝে মাঝে সেগুলো এত নিবিড় যে সামনে কি আছে দেখা যায় না । হঠাৎ একটা শব্দ শুনে আমরা ক'জনেই থমকে দাড়ালুম। সবাই চুপ করে গেলাম। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম শবট কিসের। ভয়ে আমাদের বুকের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হ'ল। সীতাকে আমি জড়িয়ে ধ'রে কাছে নিয়ে এলুম। অন্ধকারে আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না বটে, কিন্তু আমরা জানতাম ভালুক যে পথে আসে পথের ছোটখাটাে গাছপালা ভাঙতে ভাঙতে আসে। একটা কোনো ভারী জানোয়ারের অস্পষ্ট পায়ের শব্দের সঙ্গে কাটকুটো ভাঙার শব্দে আমাদের সন্দেহ রইল না যে, আমরা যে-পথ দিয়ে এইমাত্র উঠে এসেছি, সেই পথেই ভালুক উঠে আসছে আমাদের পেছনে পেছনে। আমরা প্রাণপণে পাহাড় ঘেষে দাড়ালাম, ভরসা যদি অন্ধকারে না দেখতে পেয়ে সামনের পথ দিয়ে চলে যায়.আমরা কাঠের পুতুলের মত দাড়িয়ে আছি, নিশ্বাস পড়ে কি না-পড়ে—এমন সময়ে পাকদণ্ডীর মোড়ে একটা প্রকাণ্ড কালে জমাট অন্ধকারের স্তপ দেখা গেল—স্ত পট একবার ডাইনে একবার বায়ে বেঁকে বেঁকে আসছে—যতটা ডাইনে, ততটা বায়ে নয়—আমরা যেখানে দাড়িয়ে আছি সেখান থেকে দশ গজের মধ্যে এল— তার ঘন ঘন ছাপানোর ধরনের নিঃশ্বাসও শুনতে পাওয়া গেল—আমাদের নিজেদের নিঃশ্বাস তখন আর বইছে না, কিন্তু মিনিটখানেকের জন্ত—একটু পরেই আর শুপটাকে দেখতে পেলাম না—যদিও শব্দ শুনে বুঝলাম সেটা পাকদণ্ডীর ওপরকার পাহাড়ী ঢালুর পথে উঠে যাচ্ছে। আরো দশ মিনিট আমরা নড়লাম না, তারপর বাকী পথটা উঠে এসে লিণ্টন বাগানের রাস্ত পাওয়া গেল। আধ মাইল চলে আসবার পরে উম্প্লাঙের বাজার। এই বাজারের অমৃত সাউ মিঠাই দেয় আমাদের বাসায় আমরা জানতাম—দাদা তার দোকানটাও চিনত। দোরে ধাক্কা দিয়ে ওঠাতে সে বাইরে এসে আমাদের দেখে অবাক হয়ে গেল। আমাদের তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে আগুনের চারিধারে বসিয়ে দিলে—আগুনে বেশী কাঠ দিলে ও বড় একটা পেতলের লোটায় চায়ের জল চড়ালে। তার বেী উঠে আমাদের শুকনো কাপড় দিলে পরবার ও ময়দ মাখতে বসল। রাত তখন দশটার কম নয়। আমরা বাসায় ফিরবার জন্তে ব্যাকুল হয়ে পড়েছি—বললাম—আমরা কিছু খাব না, আমরা এবার যাই। অমৃত সাউ একা আমাদের