পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ ગઝ বিভূতি-রচনাবলী বনানী এই দুটোর একত্র সমাবেশ হয়েছে এমন কোন জায়গা যদি থাকে, তবে তার সৌন্দর্ঘ্যের তুলনা হবে না। আমার একটি স্বপ্ন ছিল, ঐ দুইয়ের একত্র সমাবেশ আছে এমন একটা জায়গা দেখব। কুঠার মাঠে বেড়াতে গিয়ে পেছনের মেঘস্তুপগুলোকে পাহাড় কল্পনা করে কতবার নিজের সে আকাজল পূর্ণ করবার চেষ্টা করেচি। কিন্তু এখানকার বনানী দেখে বুঝলুম স্বপ্নলোকের সন্ধান পেয়েচি । লতা, ঝোপ, জঙ্গল, নিবিড় undergrowth, পরগাছা, চঞ্চল উচ্ছল ঝরণাধার, শিলাখণ্ড, বিরাট বনস্পতির দল, বড় বড় নদীখাত—সব রয়েচে এখানে, অনেক বেশী রয়েচে—আর কী বাশবন, পাহাড়ের সর্বত্ৰ—শুধুই বঁাশ—আর নতুন কোড় বেরুচ্চে সোনার সড়কির মত হেমন্তের প্রথমে—কি শোভা সে নবোদগত তরুণ বেণুদণ্ডের, কি তার ছায়া, কি তার শনশন মৰ্ম্মর ধ্বনি, বাংলার গাছগুলোর মত সেই স্নিগ্ধ হৈমন্তী সুভ্রাণটি পথে পথে । | তিন হাজার ফুটের ওপরে আর ও-প্রকৃতির ট্রপিক্যাল অরণ্য নেই, শুধুই পাইন আর পাইন । সকালে উঠেচি, এমন খুব কিছু শীত নয়। বাংলাদেশের পৌষ মাসের শীত এর চেয়েও বেশী হয় । সুপ্রভাদের ওখানে যাব বলে বেরিয়েচি, দেখি সুপ্রভা ও আরও দুটি মেয়ে আসচে, পথে দেখা হোল । একটি মেয়ে আসামী, নাম উষ ভট্টাচাৰ্য্য, ফিলজফিতে এম-এ পাস করেচে। সে প্রথমে বললে—আসামী ভাষা ছাড়া সে জানে না। তার খানিকটা পরে বেশ বাংলা বলতে লাগল। পাঠন মাউণ্ট স্কুলের পথে আমরা উঠলুম একটা পাহাড়ের মাথায় —সেখানে একটা চমৎকার পাইনবন, ঘন, নির্জন। তারপর নেমে Kench-strasse দিয়ে সরীতলা বেড়াতে গেলুম। নির্জন পাইনবনে আমরা বসে রইলু বহুক্ষণ। বিকেলে ওরা মোটর নিয়ে এল, সবাই মিলে Elephant fails বেড়াতে গেলুম। নির্জন পাইনবনের মধ্যে দিয়ে পথ-gorgeটার ওপর একটা কাঠের পুল আছে। আমরা তার পাশের পাথরে কাট৷ সিড়ি ধরে ধাপে ধাপে নেমে গিয়ে একেবারে নীচে দাড়ালুম। কত বিচিত্র ফার্ণ ও বন্যপুষ্প পাহাড়ের গায়ে দুধারে । খুব বৃষ্টি এল, আমি একটা পাথরের ছাদের তলায় দাড়ালুম। সুপ্রভার কাঠের পুলটায় দাড়িয়েছিল, নেমে দেখতে এল আমি উঠচি না কেন । সবাই বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে মোটরে উঠলুম, তখন আবার বেশ রৌদ্র। মেঘ কেটে গিয়ে আকাশের নীল ফুটে বেরিয়েচে। সনৎ কুটীরে এসে চ খেয়ে আমি বেরুলুম লেক দেখতে। তারপর চেরাপুঞ্জি যাবার জন্তে মোটর স্টেশনে গেলুম। আসবার পথে ইউনিভার্সিটি থেকে যে ছাত্রদের দল এসেচে, তাদের ওখানে গিয়ে গল্প করলুম। আপার-শিলংএর যে পথে আজ এলিফ্যান্ট, ফলস-এ গেলুম—সেটি বড় মুন্দর জায়গা। মাঝে মাঝে খুব নীচে পাইনবলে আচ্ছন্ন অধিতাকা—দূরে দূরে লাবান ও শিলং পাহাড়চূড়ায় ঘন কালে মেঘের কুণ্ডলী—এই রোদ, এই মেঘ, আবার এই রোদ । ছোটনাগপুরের পাহাড়ের মত ছোটখাটো ব্যাপার তো নয় এ খাসিয়া ও জয়ন্তী শৈলমালার কুলকিনারা পাওয়া যায় না একটা ছোট জায়গা থেকে । এত কতদিকে যে কত কি দেখবার জিনিস আছে, তা তিনদিনের মধ্যে শেষ করা অসম্ভব। তবে জায়গাটা বড় মেঘল, বৃষ্টি লেগেই আছে, রোদের মুখ কচিৎ দেখা যায়। এত ভিজে জায়গা আমার পছন্দ হয় না। শুকনো খটুথটে, নীরস জায়গা আমি বেশী পছন্দ করি, শিলং একটা ভিজে স্তাতসেতে ব্যাপার। একঘেয়ে পাইনবনও আমার ভাল লাগে না। এইজন্তে গৌহাটি থেকে শিলং-এর পথে আড়াই হাজার ফুট নীচেকার নিবিড় বনানীর সৌন্দর্ঘ্য যেমন অদ্ভুত মনে হয়েছিল, এখানকার rolling downs-এর মরকত খামরূপ