পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○e8 বিভূতি-রচনাবলী সেকালের একখানা মহিষমৰ্দ্দিনী দুর্গ দেবীর পট টাঙানো, পেছনে রাঙাপাড় কাপড় পর আগাগোড়া ঘেরাটােপে ঢাকা কলা-বেী, পূজার উপকরণ যথেষ্টই, মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মাণ করে করলে যেমন হয় তেমনি। আমরা নদীতে স্নান করলুম, হাটু পর্য্যন্ত জল, কোন রকমে শুয়ে স্নান করা করা গেল। কাছেই একটা মঠ আছে, সেখানে গিয়ে গুরুপূজার বিধি আছে দেখে এবং একটা মোট লোকের ফটোগ্রাফের গলায় ফুলের মালা কৌশলে পরিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে পূজো হচ্চে দেখে চটে গেলুম এবং তৎক্ষণাৎ সে স্থান পরিত্যাগ করলুম। নর-পূজা আমাদের ভাল লাগে না, আমার ধাতে ও বরদাস্ত হয় না । মুড়াগাছায় গিয়েছিলুম একটা লাইব্রেবীর বার্ষিক উৎসবে। লোহারাম মুখুয্যে ওখানকার জমিদার, তাদের বাড়িতে থাকবার জায়গা দিলে। বেশ লোক ওরা, কি খাতির-যতুটাই করলে ! ওদের বাড়ির একটা ছেলে বিলেত-ফেরত, হিসেব শিখতে গিয়েছিল, দেখতে বেশ মুশ্রী, বসে বসে অনেক রাত পৰ্য্যন্ত স্পেনের গল্প করলে। সকালে উঠে গ্রামের মধ্যে বেড়িয়ে এলুম— আমাদের দেশের কত গাছপাল, খুব বড় বড় বাড়ি গ্রামের মধ্যে, বড় বড় সেকেলে পূজোর দালান, যেন দিল্লীর মতি মসজিদ কি দেওয়ান-ই-আমের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। পূজোর দালানের এই স্থাপত্যটা মুসলমান তথা মুঘল স্থাপত্যের অন্থকরণ, ও বিষয়ে কোন ভুল নেই। হিন্দু স্থাপত্য যে এটা নয়, ভুবনেশ্বরের মন্দিরের, কোনারকের স্বৰ্য্য মন্দিরের গঠনরীতি দেখলে তা বোঝা যাবে। কাছেই ধৰ্ম্মদহ গ্রামে বাবা ছেলেবেলায় কথকতা করতে এসেছিলেন, সে কথা মনে পড়ল স্কুলের মাঠে বেড়াতে গিয়ে। বৈকালে অল্পক্ষণই মিটিং-এ ছিলুম, তারপরে পরিপূর্ণ জ্যোৎস্না-রাত্রে ট্রেনে উঠলুম-দুধার বস্তার জলে ভেসে গিয়েচে, এখানকারও অবস্থা আমাদের দেশের মতই। ক'দিন কেবলই ট্রেনে ট্রেনে বেড়াচ্ছি, ১৩ই অক্টোবর শুরু হয়েছে, আর আজ ২৮শে—এই ১৫ দিনের মধ্যে কত জায়গায় গেলুম—আর কত বার বেড়ালুম। আজ ক'দিন এখানে এসেচি। এবার অতিরিক্ত বন্ত আসাতে কুঠার মাঠের সে শোভনেই। আমার তেমন ভাল লাগে না—ছোট এড়াঞ্চির গাছগুলো তো জলে হেজে পচে গিয়েচে, যেখানে সেখানে কাদা ও পানী শেওলার দাম ও কচুরীপান। খুকু এখানে আছে, ও রোজ সকালে স্বানের আগে ও দুপুরে আসে। আমি সকালে বাশবাগানের পথ দিয়ে দিয়ে ঘাটে যাই, বেশী বনের মধ্যে যাই, মাকড়সার জাল এবার চোখে পড়চে না । তা হলেও খুব বড় বড় জাল দেখলুম, শিলং-এ একরকম বড় জাল দেখেছিলুম পোস্টাপিসের কাছে। আমাদের এখানে মাকড়সাদের জালের টানা খুব দূরে দূরে হয়। আবার খুব ছোট টানার জালও দেখিনি যে তা নয়, যেমন কুঠার মাঠে একটা ঝোপে সেবার দেখেছিলুম, এই গাছপালা, লতাঝোপ, মাকড়সা, পাখী এদের একটা বিভিন্ন জগৎ-সহানুভূতির সঙ্গে ওদের না দেখলে কি ওদের বোঝা যাবে না চেনা যাবে ? বিকেলে রোজ মাছ ধরতে যাই । অনেককাল পরে আবার কেঁচোর টোপ গেথে মাছ ধরতে বসেচি। বোধ হয় বনগা স্কুলে ভৰ্ত্তি হবার পরে আর কখনও মাছ ধরিনি—দু'একদিন ধরতে বসলেও এত তোড়জোড় করে যে ধরিনি তা ঠিক । এবার ইছামতীতে মাছও হয়েচে বিস্তর। আমার ছোট ছিপে কেবল পুটি আর ট্যাংরা ছাড়া পাইনে, কিন্তু ফণি চক্কত্তি ও হরিপদ রোজ সাত-আটটা বড় বড় বান মাছ ধরে। বেলা যত পড়ে আসে, রোদ খুব রাঙা হয়ে ওঠে। ভারী সুন্দর শোভা গঙের, বকের দল উড়ে যায় জলের ওপর দিয়ে, সন্ধার ছায়া ধীরে ধীরে নামে—