পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W)ob" বিভূতি-রচনাবলী সব কথা । g কিন্তু আমি দেখলুম গৃহস্থালিতে যে খুব শাস্তি আছে, যতটা দূর থেকে ভাবি, তা ঠিক নেই। এ সব বাড়িতে তো ছেলেমেয়েদের সর্বদা কান্নাকাটি লেগেই আছে—যখন ছোট ছেলেমেয়ে চীৎকার করে র্কাদতে শুরু করে, তখন প্রাণ অতিষ্ঠ করে তোলে । আর এ করছে ওর সঙ্গে ঝগড়, ও করছে এর সঙ্গে ঝগড়া । তেঁতুল তো আপিস থেকে ফিরে মহা ঝগড়া বাধিয়ে দিলে—তার বেীকে সবাই কেন একলা ওঘরে ফেলে রেখেচে । এ রকম শুধু এদের বাড়ি নয়, সব গেরস্ত বাড়িতেই দেখেচি এই রকম অশান্তি, চীৎকার—চিন্তা ও বিবেচনার সম্পূর্ণ অভাব । -. মেয়ের যদি ভাল হয় তবে সত্যিই সংসারে ওরা শাস্তি আনতে পারে, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের মেয়ের অধিকাংশই অশিক্ষিত, বিশেষ কিছু জানে না, বোঝে নী—তুচ্ছ বিষয়ে বড় বেশী বোক, তুচ্ছ কথা নিয়ে দিনরাত আছে। মনে আনন্দ ও ক্ষুক্তি কম মেয়েরই আছে। যে ধরণের সদাহাস্যময়ী মেয়ে সংসারে শাস্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাদের সংখ্যা খুবই কম। আমি হাসিখুশি বড় ভালবাসি, যে মন খুলে হাসতে পারে না, আনন্দ করতে পারে না, তাকে নিয়ে সংসারে চলা যায় কি ? অনেকদিন পরে র্থ সাহেব আবদুল করিম খাঁর গান শুনলুম কাল ইউনিভার্সিটি ইন্‌স্টিটিউটে। ভাগলপুরে থাকতে হেমেন রায়ের মুখে আবদুল করিমের খুব প্রশংসা শুনি । তখন থেকে ইচ্ছা ছিল এর গান শুনব । আমি জানতুম না যে এবার All Bengal Music Conference-এখ সাহেব আসবেন । সেদিন কাগজে নাম দেখেই স্থির করলুম গান শুনতেই হবে । সত্যিই খুব বড় দরের শিল্পী, ত’ তার গান শুনে কাল বুঝে নিয়েচি। সত্তর বছরের বৃদ্ধের মুথে এমন চমৎকার মিষ্টি সুর আশা করিনি, যেন সারেঙ্গী বাজচে । এবার বড়দিনের ছুটি দেশে বড় আনন্দে কাটিয়েচি। বৈকালে রোজ কুঠার মাঠে ছোট এড়াঞ্চি ফুলের বনের মধ্যে একটা চাদর পেতে বসে বসে Jeans-এর Universe Around পড়তুম। একদিন চাঁদ উঠেচে ছোট একটা চট্ৰক গাছের পেছনে, বোধ হয় ত্রয়োদশী, বিকেল বেলা, সে একটা অপূৰ্ব্ব ছবি—কতকাল মনে থাকবে ছবিটা। পরের প্রতিপদেই হালিডাঙ্গার প্রজা-বাড়ি থেকে খাজনা আদায় করে ফিরচি, দিগন্তব্যাপী মাঠের মধ্যে চাদ উঠল, কোনদিকে কোন মানুষ নেই, পশ্চিম আকাশে দপ, দপ, করচে শুকতারা। একটা খেজুর গাছে রসের ভাড় পাতা ছিল, ভঁড়টা নামিয়ে রস থেলাম, কিন্তু গাছে আর সেটা বাধতে পারলাম না। তখন আমার মনে হয়নি, তাহলে ভঁড়টার মধ্যে দুটো পয়সা রেখে এলেই হত । এবার কি জ্যোৎস্ন পেয়েছিলুম দেশে ! যেমন দিনে আকাশ সুনীল, মেঘমুক্ত—রাতে তেমনি ফুটফুটে জ্যোৎস্না—অবিশুি শীতও অতি ভয়ানক। খুকু ছিল দেশে, সে সৰ্ব্বদাই এসে গল্প করত, বেশ লাগত তাই । অনেক রাত্রে ঘুম ভেঙে গেল। বাইরে উঠে গেলুম, চারিদিক নিস্তব্ধ, অন্ধকার। কেমন একটা মনোভাব হল, খানিকটা বিষাদও তার মধ্যে যে না আছে এমন নয়। এই চারিপাশের বাড়ির কত লোককে জানতুম যখন প্রথম এ মেসে এসেছিলুম, তারা সবাই কোথায় গেল ? কতকাল হল তাদের আর দেখি নে । তাদের কথাই মনে হল এ নিস্তব্ধ অন্ধকার রাত্রে । দুপুরে স্কুলের ছাদে একা বসে বসে যাদের কথা ভাবি, এরাও তাদের দলে আছে। সত্যি, আমার মনের