পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ \లిరి సి এ যে কি অদ্ভূত অবস্থা, কোন পরিচিত বা অৰ্দ্ধপরিচিত,মানুষকে দূরে রাখতে ইচ্ছে হয় না, সকলকে কাছে টেনে রাখতে ইচ্ছে করে যে কেন ! “Space & time, I am learning are merely modes or appearance Since a corner with thee darling, seems infinite now.—Goethe. অনেকদিন পরে দেশে গিয়েছিলুম। দুপুরের পরে গিয়ে পৌছই। আমার ইচ্ছে, আমি যে গিয়েচি, কেউ যেন না টের পায় । কেননা তাহলে বড় লোকের ভিড় হয়, এপাড়ার ওপড়ার মেয়েরা দেখা করতে আসে। আমি অত ভিড় পছন্দ করিনে। বিশেষ করে ইন্দুদের বাড়ি জানতে পারলে তো আর রক্ষেই নাই । কিন্তু শু্যামাচরণ দাদাদের টিউবওয়েলের কাছে গোপাল দেখি কি করচে, সে তে গিয়ে বাড়িতে খবর দেবে—সেই ভয়ে চুপি চুপি চলে যাচ্ছিলুম, তবু ও ঠিক টের পেয়েচে । তখন অগত্যা ওদের বাড়ি যেতে হল। তারপর খুকুদের বাড়িতেও গেলুম। খুকুদের বাড়িতে প্রথমটাতে যাইনি। পাচীদের বাড়ির উঠোনে আমাকে ঢুকতে দেখেই খুকু ডাকলে, আমুন, আমুন। ওদের দাওয়াতে গিয়ে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলুম। ও বল্লে— আপনি শনিবার মা আসাতে ভয়ানক রাগ করেছিলুম। খুকুদের বাড়ি থেকে যখন ফিরি, তখন বিকেল হয়েচে । সাজিতলার পূবে যেখানে ভাঙন ধরেছে নদীর পাড়ে, সেখানে একটা হেলেপড়া খেজুর গাছের গুড়ির ওপর বসে বসে নদীর দিকে কতক্ষণ চেয়ে রইলুম। বড় আনন্দ ছিল মনে, আরও বসতে চেয়েছিলুম, কিন্তু এদিকে আবার সন্ধ্যা হয়ে আসচে দেখে উঠতে হল। চালকীর মুসলমান পাড়ার মধ্যে দিয়ে আসা আমার বড় ভাল লাগে—শীতের সন্ধ্যায় ফুটন্ত ছোট এড়াঞ্চির ফুলের বন, শুক্নো গাছপালার গায়ে রাঙা রোদ, গরীব লোকের কুঁড়েঘর, ওধারেই নদী, নদীর ধারে মঠ—দেখতে দেখতে আমি আর উমা যে সাকোর ধারে বনের মধ্যে খেলা করতুম, সেখানে এসে উঠলুম। পরদিন যখন কলকাতায় আসি, ট্রেনে সারাপথ কেবল মড, কস্টেলোর একটা গানের লাইন মনে আসতে লাগল বার বার—আর কি সে আনন্দ মনে ! জীবনটাকে এই একমাসের মধ্যে একটা নতুন চোখে যেন দেখেচি। জীবনের যেন নতুন অর্থ হয়। একটি নতুন উপন্যাস শুরু করব ভাবচি এই সম্পূর্ণ নতুন ধারার। তারপর আগ পাটন এলুম বহুকাল পরে। ১৯২৭ সালের পরে আজ ৯১০ বছর পাটন আসিনি। আমি, নীরদ, ব্ৰজেনদা, সজনী সবাই একসঙ্গে এলুম। কাল রাত্রে একাদশীর পরিপূর্ণ জ্যোৎস্নায় বৰ্দ্ধমানের বড় বড় মাঠের দিকে চেয়ে আমার মনে আসছিল একটি প্রবহমান জীবনধারার কথা, যা চিরপুরাতন অথচ প্রতিদিন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পায়—ম্বষ্টির মধ্যে, রসের মধ্যে যার সার্থকতা। কত সুপ্ত গ্রাম তো এই জ্যোৎস্নায় স্বাত হচ্চে, কিন্তু বহুদূরে এক ক্ষুদ্র পল্লীনদীর তীরবর্তী এমন একটি গ্রামের ছবি বার বার মনে আসে কেন ? এ কথা আরও মনে এল যখন দুপুরে একাই পাটনাতে ওদের বাড়ির সামনের পার্কটাতে বসেছিলুম। ছোট্ট পার্কট, বড় বড় ডালিয়া ফুটে আছে, আর ক্যালেণ্ডুলার—সেও আধশুকনো। নীল আকাশের নীচে বসে দুপুরের রোদটি এই ভয়ানক শীতের দিনে কি মিষ্টিই লাগছিল । পাটনায় শীতও প্রচণ্ড । 評 আজ নবছর আগে পাটনা থেকে শেষ যখন চলে গিয়েছিলুম, আমার সে জীবনে এ জীবনে অনেকখানি তফাৎ হয়ে গিয়েচে । তখন ছিল অন্য ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি, এখন হয়েচে অন্ত ধরণের।