পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ○>N○ ১৯১৯ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী । সে কত সালের কথা হয়ে গেল। তারপর ১৯২৪ সালের জানুয়ারী মাসে ভাগলপুরে চাকরি নিয়ে যাবার আগে একবার জাঙ্গিপাড়া গিয়েছিলুম। সেও হয়ে গেল ১২।১৩ বছর আগেকাব কথা। আর কখনও যাইনি। অথচ এচ ১২।১৩ বছরে জীবনে সবদিক দিয়ে কি ভয়ানক পরিবর্তনই হয়েচে ! এখন জীবনে কত লোক এসেচে, যাদের অস্তিত্ব পর্য্যস্ত আমার কাছে তখন ছিল অজ্ঞাত। আসলে দেখলুম অর্থসম্পদ কিছু নয়। মানুষই মানুষের প্রাণে অমৃত সিঞ্চন করে। জীবনে যদি প্রেম এসে থাকে, তবে তুমি পার্থিব বিত্তে দীন হলেও মহাধনী—ফোর্ড বা রকফেলার তোমাকে হিংসা করতে পারেন। আর যদি প্রেম না আসে, যদি কারো স্মিত-হাস্তে-ভরা চোখ দুটি তোমার অবসর মুহূৰ্ত্তে মনের সামনে ভেসে না ওঠে, যদি মনে না হয় দূরে কোনও পল্লীনদীর তটের ক্ষুদ্র গ্রামে, কি কোনও শৈলশিধরের পাইন বার্চ গাছের বনের ছায়ায় কোন স্নেহময়ী নারী নিশ্চিন্ত নিরালা অবসরে তোমার কথা ভাবে, তবে ফোর্ড বা রকফেলার হয়েও তুমি হতভাগ্য। ETCSI GTAII Platitude ERF frF AF, fKFS CI Platitude জীবনে অনুভব করে, তখন সে আর Platitude থাকে না, তার জীবনের অভিজ্ঞতায় তা হয়ে দাড়ায় পরম সত্য । জাঙ্গিপাড়া স্কুলে প্রথম চাকরিতে ঢুকি ১৯১৯ সালে। হঠাৎ জাঙ্গিপাড় যাওয়া ঘটল এতকাল পরে। ১৯০৪ সালে একবার বেড়াতে গিয়েছিলুম, আর কখনও যাইনি। স্কুলের দিকে গিয়ে বৃন্দাবনবাবুর সঙ্গে দেখা হল। চিনতেও পারলেন। চন্দনপুরের গায়ের পাড়ে সেই তালতলায় তখন কত বসে থাকতুম । পুরোনো জায়গাটা দেখতে গেলুম শ্রীরামপুরের দিদির সঙ্গে— এই সব জায়গার স্মৃতি বড় বেশী জড়ানো—ওখানে গিয়েই সে কথা মনে পড়ল । তার জেলের পথেও থানিকটা গেলাম । সে পথটা তেমন ফাকা নেই, বড় বড় গাছ হয়ে পডেচে। বাজারে আমার কয়েকটি ছাত্রের সঙ্গে দেখা হল—যেমন গজেন, ফকির মোদক প্রভৃতি । গজেন এই স্কুলেই এখন মাস্টারী করচে । বিষ্ণুপুর গেলুম বৃন্দাবনবাবুদের বাড়ি । ওদের সেই পুরোনে রান্নাঘরটা ঠিক আছে, তার দাওয়ায় বসে খেলাম অনেক পরে। রাত্রে অনেক গল্প হল পুকুরের ঘাটে বসে। বিজয়বাবুকে বল্লাম—রাজকুমার ভড় জীবনে বড় বন্ধু ছিল, তার জন্তেই এখান থেকে যাওয়া, সে না থাকলে হয়তো এতদিন পরে এখনও জঙ্গিপাড়ার সম্পন্ন গৃহস্থ হয়ে বসে থাকতাম । পরদিন সকালে উঠে ওদের পুকুরপাড়ে সেই উচু জায়গাটি দেখে এলাম—একটা বড তেঁতুল গাছ আছে সেখানে । বহুদিন আগে চট্টগ্রাম জেটিতে বসে এই জায়গাটার কথা ভাবতাম ! হঠাৎ যে আজ এখানে আসব—জাঙ্গিপাড়ায়—এত জায়গা থাকতে তা কি কেউ কখনও ভেবেছিল ? থানার পাশ দিয়ে পথটায় হেঁটে যাবার সময় পুরোনো দিনের সব কথা, সব মনের ভাব মনে আসছিল। যে ছোট্ট ঘরটাতে ডাকঘর ছিল, চিঠিপত্রের আশায় বসে থাকতাম—সে ঘরটা এখনও সেই রকমই আছে। আমার ছোট ঘরটাতেও গিয়ে দেখলাম— তবে ঘরটা বন্ধ | পদ্মপুকুরের ঘাটের দিকে বারান্দাটায় দাড়িয়ে রইলুম। দুপুরে আমার ছাত্র গজেনের বাড়িতে গেলুম। ওর ভাগ্নী পরিবেশন করলে—তার আবার স্বামী এসেচে, বেচারী ঘোমটা দিয়ে লজ্জাতেই জড়সড় । ওদের মাটির ঘরটা কেমন চমৎকার সাজানে-মাটির মাছ, খেলনা, পুতুল, পুতির মালা ইত্যাদি কুলুঙ্গিতে বসানো। দুটি তরুণী লাজুক মেয়ে আনাগোনা করচে ঘরে ও বাইরে—খাটি পাড়াগায়ের গৃহস্থালি । এক জায়গায় অনেক গাদাফুল ফুটে আছে। একজনের বাগান এটা । সে তার মনের