পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী יל 93א কাল দিনটা খুব ছুটোছুটি গিয়েছে। চারুবাবু হাইকোর্টের জজ হয়েচেন বলে তাকে স্কুল থেকে অভিনন্দন দেওয়া হল। কালই আবার দিন বুঝে ইউনিভার্সিটিতে Examiner's meeting—স্কুলে ফণিবাবু এসেছিলেন, আমাদের স্কুল ছেড়ে গিয়ে পৰ্য্যন্ত আসেননি। তার সঙ্গে গল্প করে চলে এলুম ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে মণি বোস, প্রমথ বিশী, জসীমউদ্দিন, গোলাম মুস্তাফ, মনোজ বস্তু, বারীন্দ্র ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জনবাবু সকলের সঙ্গে দেখা । মুনীতিবাবু প্রধান পরীক্ষক এবারও । ওখানকার কাজ শেষ করে সুধীরবাবুদের বইয়ের দোকানে সবাই মিলে গিয়ে খানিকট আড্ডা দিলাম। তারপর আবার এলুম স্কুলে। চারুবাবুর অভিনন্দন সভা তখন জোর চলচে। অনেক রাত পৰ্য্যন্ত আমরা ছিলুম। তারপর এক মাস্টারমশাই আর আমি এসে সেণ্ট জেম্স্ স্কোয়ারে একখানা বেঞ্চের ওপর বসে অনেক পুরোনো কথার আলোচনা করলুম। রসিদ কি করে আমাদের অনিষ্ট করতে চেয়েছিল, ক্লারিজ সাহেবকে আমরা কেমন সাবধান করে দিয়েছিলুম এই সব কথা । ইস্টারের ছুটিতে বারাকপুরে কাটাইনি অনেকদিন । এবার গিয়েছিলুম। আমার যাওয়ার প্রধান উদেশ্ব ছিল ঘেটুফুল দেখা। প্রথম দেখলুম বনগায়ের খয়রামারির মাঠে—কি অজস্র ঘেটুবন সেখানে । এর আগের সপ্তাহেও যে তিনদিন ছুটি ছিল, তাতেও বনগা গিয়ে রোজ বিকেলে রাজনগর ও চাপাবেড়ের মাঠে যে তুম বেড়াতে। ফিরবার পথে অপূৰ্ব্ব জ্যোৎস্নায় একটি ঘেটুবনের কাছে বসে থাকতুম। পশ্চিম আকাশে শুকতারা জল জল করত, তেতো তেতো ঘেটুফুলের গন্ধ। পাখী ডাক্ত, কোকিল ও পাপিয়া। বৌ-কথা-ক'র এখনও আমদানি হয়নি। বারাকপুরে ঘেটুঘন কোথাও তেমন নেই, কেবল আছে সলতেখাগী জামতলায়, বরোজপোতায় ডোবার গায়ে আর সাজিতলার পথে। সকলের চেয়ে বেশী পেলুম আসবার সময়ে চালকী মুসলমান পাড়ার ওই পথটায়। ক’দিন চমৎকার কেটেচে। অবিহি ম্যাটিকের কাগজ দেখতে ব্যস্ত থাকার দরুন বড় কোথাও বেরুতে পারতুম না। একদিন গোপালনগর হাটে গিয়েছিলুম, সঙ্গে ছিল জগে, গুটকে ও জীবু ও পথেও কিছু কিছু ঘেটুবন আছে বড় আমবাগানের কাছে। বৈকালে প্রায়ই কুঠার মাঠে বেড়াতে যেভূম বেলা পড়ে গেলে । চাদ উঠবার সময়ে নদীর ধারে মাঠে এক এক কত পাত পৰ্য্যন্ত বসে থাকতুম। জ্যোৎস্নায় নদীজলে নামতুম, স্নান করে আলোছায়ার জালবোন পথে মেয়েদের পিঠে দেওয়ার ষাড়া গাছের তলাটি দিয়ে বাড়ি ফিরতুম। দুপুরে ও বিকেলে কত কি গন্ধ দুধারের মাঠে। রোদপোড়া মাটির গন্ধ, ঘেটুফুলের গন্ধ, শিমুলের গন্ধ, শুক্নো পাতালতার গন্ধ, টাটকা-কাট কাঠের গন্ধ—খয়রামারির মাঠে বনমল্লিকার ঘন সুগন্ধ—প্রভৃতির নানা সুবাসে মন ভরে ওঠে। কাল মনোরায়দের গাড়িতে বারাকপুর থেকে বনগী ফিরলুম। রাত্রের ট্রেনে কলকাতা । চৈত্রসংক্রান্তির দিন গিয়েছিলুম বারাকপুরে। একদিন চাপাবেড়ের মাঠে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত বসে ছিলুম, তারপর এসে ফুটবল থেলার মাঠটাতে বসলুম। দুপুরবেলা বারাকপুর গিয়ে পৌছই। বম্ বম্ করচে রোদ। খুকুর ঘুমুছল। ওদের ওঠালুম, তারপর অনেকক্ষণ বসে গল্প করি । : যতীনবাবু গাড়ি করে গেল আমাদের গায়ে দেখতে। তাদের ঘুরিয়ে নিয়ে এলুম কুঠার মাঠ । এবার শিমূলের গন্ধ বড় ভাল লেগেচে । ঘেটুফুল এখনও আছে—তবে খুব কমে গিয়েচে ।