পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ৩২১ মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। দূরের পাইনবনাবৃত পাহাড়ের চূড়াটা বৃষ্টিতে অপূৰ্ব্ব হয়ে উঠেচে । এখানে এসেচি অনেকদিন, শিলং থেকে ফিরেই। কিন্তু এতদিন লিখতে পারিনি। এসেই প্রথমে একদিন পায়ে হেঁটে গিয়েছিলুম বাগানগায়ে পিসীমার বাড়ি। কাচিকাটার খেয়া পার হয়ে সেদিন গেলুম গাড়া পোতার বাজারে, গিয়ে একটা দোকানে খানিকট বসে রইলুম, কারণ: সে সময়টা বড় বৃষ্টি এল। তারপর চলে গেলুম পাটুশিলে। সন্ধ্যার আগে বাগানগ। ফিরবার দিন খুব বেলা থাকতেই ষোল্লাহাটির থেয়াঘাটে এসে পৌছে গেলাম। জামদা’র বাওড় পার হলুম দড়টানার খেয়ায়। পার হয়েই—এপারটা বেশ ছায়াভরা চমৎকার জায়গা—থানিকক্ষণ বসে তারপরে রওনা হই। সন্ধ্যার আগে এসেই বাড়ি পৌছে গেলুম। একটা বটগাছের তলায় অনেকক্ষণ বসেছিলুম মোল্লাহাটির ওপারে—সেট। বড় ভালো লেগেছিল। দিন বেশ কাট্‌চে । গোপালনগরের বারোয়ারী দেখচি প্রতি-বৎসরের মত—কাল রাত্রেও হয়ে গেল। কাল অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরেচি। একদিন থিম্বুদের ওখানেও গিয়েছিলুম। কিন্তু তা সত্ত্বেও এবার যেন বেশীদিন এখানে ভাল লাগচে না । মন উড় উড় করচে, কেন তা কি জানি । জীবন এখানে অনেকটা একঘেয়ে, সেইজন্তই কি ? কিন্তু নিৰ্ম্মলতা ও প্রাকৃতিক শোভাসৌন্দর্য্যে এর তুলনা নেই বলেই তো এখানে আসা। এবার সেটাও যেন ভাল লাগচে না অন্য অন্ত বছরের মত—তার একটা প্রধান কারণ আমি বুঝতে পেরেচি। কলকাতায় যে কৰ্ম্মবহুল জীবন কাটিয়ে এসেচি এবার, তার তুলনায় এখানকার অপেক্ষাকৃত নিক্রিয় জীবনযাত্রা মমকে নিস্তেজ করে দিচ্ছে। আমি মাঠের মধ্যে থাকতে ভালবাসি। তবে মোটে সেদিন কলকাতা থেকে এসেচি বলে এই রকম লাগচে—দীর্ঘদিন কাটালে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এসব । কথা বলবার লোকের অভাব সকলের চেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে এখানে । শু্যামাচরণদা'র ছেলেটি সেদিন মারা গেল, আমরা সবাই যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলুম তাকে বাচাবার। সেজন্তেও মনে একটা কষ্ট আছে । বিকেলের দিকে কুঠার মাঠে বেড়াতে গেলুম। আজ খুব বৃষ্টি হয়েছিল দুপুরে। তাই পথে একটু বৃষ্টি হয়ে কাদা হয়েছিল—এত ফুল এত গাছপালাও কুঠার মাঠে ! সৰ্ব্বত্রই সৌন্দৰ্য্য। এখান থেকে আরম্ভ করে বাগানটা পৰ্য্যন্ত সমস্ত জায়গাটাই একটা প্রকাণ্ড বড় পার্ক। কত বিচিত্র লতাবৃক্ষগুল্মের সমাবেশ, কত বিচিত্র বনফুলের সমারোহ–কত কি পাখীর ডাক, বাশগাছের সারি, প্রাচীন বট-অশ্বখ—সবই সুন্দর । মনটা ভার ছিল, একটা ছোট বাব লাগাছের গুড়ির ওপর গিয়ে কতক্ষণ শুয়ে রইলুম। আমার চারিপাশে সোদালি ফুল ঝুলচে, একদিকের গাছপালার ফঁাকে কি সুন্দর ময়ুরকষ্ঠ রংয়ের নীল আকাশ, বসে কত কী ভাবলুম। এই যে বিরাট বিশ্ব-চরাচর, এতে কত গ্রহ, কত উপগ্রহ, কত নীহারিকা-রাজি, কত Globulor cluster, কত নাক্ষত্রিক বিশ্ব, এদের মধ্যে কত আমাদের মত প্রাণী রয়েচে । Jeans-এর দল যাই বলুন, আমি বিশ্বাস করতে পারিনে যে শুধু আমাদের এই পৃথিবীতেই বুদ্ধিমান প্রাণী আছে, আর কোথাও নেই। তা যদি থাকে, ধরেই নেওয়া যাক, তবে তাদের মধ্যে অনেকে কষ্ট পাচ্ছে—আজ আমি তাদের দলের একজন। দুঃখে তাদের সঙ্গে আমি এক হয়ে গিয়েছি। সকালবেল কি বিত্র বর্ষ নেমেছে। আমার ঘরের বাইরে বড় বড় পাতাওয়াল গোড়ালেবুর গাছটাতে থোকা থোকা সাদা ফুল ফুটেচে। মনটা ভাল না, বসে বসে লিখছিলুম বাইরে বসে, दि. ब्र. 8-२>