পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రి:R বিভূতি-রচনাবলী হঠাৎ ভয়ানক বৃষ্টি আসাতে ঘরের মধ্যে এসে বসেচি। বিলবিলের দিকে জলের তোড় ছুটচে কলকল শব্দে । ন’দিদি ও বড় খুড়ীমা ওদের ভূতোতলায় আম কুড়িয়ে বেড়াচ্চে জলে ভিজে । খুতুকে বড় একটা দেখা যাচ্ছে না আমতলায়। বিকেলে মেঘ-থমৃকানো আকাশের তলা দিয়ে বেড়াতে গেলুম সুন্দরপুরে প্রমথ ঘোষের বাড়ি । সারা পথটা আকাশে মেঘের কি শোভা ! কত পাহাড়পৰ্ব্বত, আকাশের কি চোখজুড়ানো অদ্ভুত নীল রং নীচে বর্ষাসতেজ হামল গাছপাল, নতুন আউশ ধানের কচি জাগুলা বেরিয়েচে মাঠে মাঠে মরাগাঙের ধারে, বাওড়ের ওপারে! আষাঢ় মাসে এদিকে প্রকৃতি যে রূপ পরিগ্রহ করে, তার তুলনা কোথাও বুঝি নেই। শিলংএর পাইন বন এর তুলনায় নিতান্ত একঘেয়ে। জ্যোৎস্না বেশ যখন ফুটেচে, তখন নদীর জলে এসে নামলুম। জ্যোৎস্না চিকচিক করচে জলে, চাদ হাজার টুকরো হয়ে জলের মধ্যে খেলা করচে—এখমণ্ড নদীপারে বনে কোথায় বৌকথা-ক’ ডাকচে, নদীর ধারের সোদালি গাছগুলোতে এখনও ফুলের ঝাড় ঝরে পড়েনি। কত গাছ, কত লতা, কত ফুল, কত পার্থীর থেল', আকাশে রঙের মেলা, কি ঘন সবুজ চারিধার। নক্ষত্র চোখে পড়ে না আকাশে, হালকা মেঘের পরদার আড়ালে দ্বাদশীর চাদখানি মাত্র দেখা যাচ্ছে । এতদিন পরে এবার বারাকপুর বড় ভাল লাগচে । মানুষ এখানে তেমন নেই বটে কিন্তু প্রকৃতি এখানে অপূৰ্ব্ব লীলাময়ী। প্রকৃতিকে নিয়ে থাকতে পার তো এমন জায়গা আর নেই। কলকাতার কাজ আর মাতুষ—এখানকার প্রকৃতি, এই দুইয়ের সন্মিলন যদি সম্ভব হত ! রোজ কাজকৰ্ম্ম সেরে কলকাতা থেকে দ্রুতগামী মোটরে বেলা ৫টার সময় যদি বেলডাঙার পুলের মুখে ফিরে আসা সম্ভব হত এই আষাঢ় মাসের দীর্ঘ দিনের শেষে, জীবনটা সত্যি উপভোগ করতে পারতুম। নিজের একখানা এরোপ্লেন থাকলে চমৎকার হত। সমস্তদিনের হৈ-চৈ ও কর্মক্লাস্তির পরে শাস্ত অপরাহ্লে বর্ষণক্ষান্ত আকাশের তলে কাচিকাটার পুলের কাছে মরাগাঙের এপারে সবুজ ঘাস ভরা মাঠে উড়ি ধানের ক্ষেতের ধারে বসে থাকতে পারতুম—তবে contrast-এর তীক্ষতায় প্রকৃতিকে ভাল করে বুঝবার সুযোগ হত—একে উপভোগও করতে পারা যেত আরও গভীর ভাবে । আজ বৈকালের দিকে খুব ঝমৃঝম্ বর্ষ। আমার একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা হল । সন্ধ্যার আগে মাঠে বেড়াতে গিয়ে যেন মনে হল এই আকাশ, রঙীন মেঘরাজি, সবুজ বাশবন—এদের সবটা জড়িরে যে বিরাট বিচিত্র বিশ্বপ্রকৃতি, তা হৃদয়হীন নয়। তা ভালবাসে, দয়া করে। দুঃখে সহানুভূতি দেখায়। আজ কোন একটি বিষয়ে সেটা আমার অভিজ্ঞতা ঘটেচে। সে অভিজ্ঞতা সত্যিই অপূৰ্ব্ব । আষাঢ় মাসের এ দিনগুলো আমার বড় পরিচিত। বাল্যকাল থেকে চিনে এসেচি ওদের । মেঘান্ধকার আকাশ, আদ্র বাতাস, বাশবনে পিপুললতা ও অনন্তমূলের নূতন চারা বার হয়েচে, ওলের চারা বার হয়েচে, যখনই এমন হয়, তখনই আমার গ্রীষ্মের ছুটি ফুরিয়ে যায়, ছেলেবেল থেকে দেখে আসচি। কিন্তু একটা তফাৎ ঘটেচে, আগে এই নবোদগত পিপুলচারার সঙ্গে একটা দুঃখ ও বিরহের অনুভূতি জড়ানো থাকত—এখন আর সেটা হয় না। এখন মনে হয় কলকাতা গেলেই ভাল হয়, অনেকদিন তো দেশে কাটল । Įr কতবার এই নব বর্ষা, এই আষাঢ় মাস আসবে যাবে। যেমন আমার জীবনে এরা কত বার