পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ రిప్చరి এসেচে গিয়েচে । কতবার কাটাল পাকবে, বাশবনে অনস্তমূলের চারা বেরুবে, ফলবিরল আমবাগানে হাজারী জেলে ও হাজু কামারনী আম কুড়িয়ে বেড়াবে ভোরে। এসব সুপরিচিত দৃপ্ত আরও কতবার দেখব। আমাদের গ্রামটুকু নিয়ে যে জগৎ, এ দৃপ্ত তারই। অন্য কোথাকার লোকের কাছে এসব হয়তো সম্পূর্ণ অপরিচিত তাও জানি, তারা কখনও পিপুললতাই দেখেনি হয়তো । তারপর আমি চলে যাব, হাজারী জেলেনী চলে যাবে, আমার সমসাময়িক সকল লোকই চলে যাবে, তখনও এমনি আষাঢ়ের নতুন মেঘ জমবে মাধবপুরের ঘরের ওপরে, আদ্র বাশবনে এমনিধারা পিপুলচারা বেরুবে, বেী-কথা-ক’ পার্থীর ডাক বিরল হয়ে আসবে বকুলগাছটাতে, গাঙের জলে ঢল নামবে—শুধু আমার এই আবাল্য সুপরিচিত জগৎ তখন আর আমার চৈতন্তের মধ্যে থাকবে না। সবদিনে মামুষের মনে সমান আনন্দ থাকে না জানি, কিন্তু আজকার দিনের মত আনন্দ আমি কতকাল যে জীবনে পাইনি। প্রথম তো সকালে উঠেই দেখলুম আকাশ ভারী পরিষ্কার— নিজের ঘরের দাওয়ায় খানিকট বসে মুসলমান মাস্টারটির সঙ্গে গল্প করে বাওড়ের ধারের বটতলার পথে একটু বেড়াতে গেলুম। এমন নীল আকাশ অনেকদিন দেখিনি। জেলেপাড়া ছাড়িয়েই ঐ সরু পথটা দিয়ে যেতে যেতে বাশঝাড় থেকে একটা সরু কঞ্চি বেছে নিলাম হাতে নেবার জন্তে । বাশের কঞ্চির জন্যে এ আগ্রহটা আমার চিযকাল সমানরইল সেই বাল্যকাল থেকে । যেতে যেতে আমাদের মাথার ওপরকার নীল আকাশটার দিকে চেয়ে মনে হল আষাঢ় মাসের দিনে আকাশ এত নীল, এত নিৰ্ম্মেঘ, এ সত্যিই একটা আশ্চৰ্য্য ব্যাপার। রোদের কি রং । বাওড়ের ওপারের আকাশ নিবিড় বট-অশ্বখের আড়ালে মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। এই বাওড়ের ধারের বটতলার পথটা দিয়ে আজ আঠারো-উনিশ বছর কি তারও বেশী এমনি সকালে হাটিনি। বটগাছের একটা ডালে কাল খানিকক্ষণ বসেছিলুম, আজ সে ডালটায় বসব বলে গেলাম, কিন্তু আজ একটু বেলা হয়ে গিয়েচে বলে রোদ এসে পড়েচে সেখানে। একটা বাশের মাচা করেচে বটতলায় বাওড়ের ধারের দিকে। সেখানে বসে কি আনন্দ ! আমায় এমনি উল্লাস্তের মত বসে থাকতে দেখে কিন্তু কেউ কিছু ভাবে না—সবাই খুব ভালবাসে দেখলুম। আমি অনেককে চিনি নে, ওরা আমায় চেনে। একজন কাল বলচে—দাদীবাবু আমাদের দেখ বসে আছেন বটের শেকড়ে। দাদাবাবুর অস্থার নেই গা । আজ একজন পথ চলতি লোক, তার বাড়ি আরামডাঙায় পরে জানতে পারলুম, আমায় বসে থাকতে দেখে পাশে এসে বসল। বল্লে—বাবু, একটা ব্যারামে বড় কষ্ট পাচ্ছি। প্যাটের মধ্যে ভাত খেয়ে উঠলি এমনি শূলোয় যে আপনাকে কি বলব! কি করি বলুন দিকি বাবু ? সে এমন বিশ্বাস ও নির্ভরতার সঙ্গে প্রশ্ন করলে যেন আমি স্বয়ং ডাক্তার গুডিভ চক্রবর্তী। কি করি আমার কোন ওষুধই জানা নেই—তাকে পরামর্শ দিলুম রাণাঘাটে গিয়ে আর্চার সাহেবকে দেখাতে। মিশনারী হাসপাতালে পয়সা-কড়ি লাগবে না। মনে এমন দুঃখ হল, একটু হোমিওপ্যাথি জানলেও এই সব গরীব লোকের উপকার করা যায়। ভগবানের কাছে প্রার্থনা ছাড়া আমি ওর রোগ সারানোর জন্তে আর কি করতে পারি | ওখান থেকে উঠে মাঠের মধ্যে গেলাম। এক জায়গায় একটা কি চমৎকার লতাবিতান, ওপরে ডালপালায় ছাওয়া, মোট লতার গুড়ি কাঠের মত শক্ত হয়ে তার খুঁটি তৈরী করেচে। ওর মধ্যে বসে একটু পাখীর ডাক শুনলুম, তারপর মাটির মধ্যে এসে বাবলাগাছের মাথার ওপর