পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ○○) সঙ্গে বেলেডাঙার পথে বেড়াতে যাই বাড়ি পৌঁছে। . বড় আমবাগানের পথে সইমার সঙ্গে দেখা বঁাশতলায়, তিনি হরিপদর বিরুদ্ধে কি একটা নালিশ করলেন আমার কাছে । সেই গাছতলায় গাছের গুড়ি ঠেস্ দিয়ে বসি, সেবার যেখানটা আমার খুব ভাল লেগেছিল । আইনদির নাতি স্কুলে যাচ্ছে পথ দিয়ে, আমায় দেখে হাসচে। তাকে ডেকে বাড়ির কে কেমন আছে জিগ্যেস করলুম। আজ সোমবার, ভাবছিলুম যে ও সোমবারের আগের সোমবারে ঠিক এ সময়টা আমি আর সুপ্রভা পরীতলায় বসে আছি শিলংএ পাইনবনে ঘেরা সেই ছোট উপত্যকাটিতে, ছোট নদীটার ধারে । তারপর জগে৷ আর আমি মাঠে রৌদ্রে একটু নরম ঘাসের উপর শুয়ে থেকে আমাদের ঘাটে নাইতে নামি । ভারী তৃপ্তি হয় ঘোলা জল ইছামতীতে এই সময়টা স্নান করে । একটা ঝোপ থেকে একটা বনসিমের ফুলের ছড়া তুলে নিলাম। দেখে বিস্মিত হয়ে গেলাম দস্তুরমত যে, এই ভাদ্র মাসেও কুঠীর মাঠে দুটো গাছে ঝাড় ঝাড় সোদালি ফুল ফুটে রয়েচে । খুকুদের বাড়িটাতে কেউ নেই। দাওয়ায় গরু উঠেচে, ভাঙাচোরা পৈঠে। একবারটা সেইদিকে গেলুম। দুপুরে আমার ঘরটাতে শুয়েচি—ইন্দু এসে খানিকটা গান করলে, আমাদের ভিটের দিকে গিয়ে দেখি ঘন জঙ্গল হয়েচে, মায়ের সেই ভাঙা কড়াখানা জঙ্গলে ঢেকে ফেলেচে । একটি মেয়ের কথা মনে পড়ল, যাকে অনেকদিন আগে এই দিনটিতে এখানে দেখা যেত। নেীকো করে বনগায়ে এলুম বিকেলে। ইছামতীর জল খুব বেড়েছে—জলের ধারে উলুটি বাচড়া, নরম সবুজ ঘাসে ভরা, মাঝে মাঝে বনকলমীতে ছাওয়া ঝোপ । বিকেলের ছায়ায় নদীবক্ষের কি শাস্ত শোভা । ক'দিন থেকে পূজোর আগে বড় কাজকৰ্ম্ম চলেছে। স্কটিশচার্চ কলেজে বক্তৃতা ছিল, সেখান থেকে সেদিন বার হয়ে ডি এম লাইব্রেরীতে এলুম। এবার প্রভাবতী দেবী সরস্বতীকে দেখলাম না, অন্ত অন্ত বার দেখি। প্রমোদবাবু এসেছিলেন শনিবারে। ঠিক করা গেল এবার পূজোয় কোথায় যাওয়া যাবে, অনেকটা ঠিক হল—হয় চাটগায়ে, নয়তো রাখামাইনসে । আজ সকালে সাঁতরাগাছি হয়ে গেলুম শ্রীরামপুরে। বর্ষার সবুজ বনরাজির শোভা দেখতে দেখতে আমি ও মুরেন মৈত্র গিয়ে উঠলুম শ্রীরামপুর টাউনহলে । কে একজন বল্লে—আপনার বন্দিবাটি আসবার কথা ছিল না ? বলতে বলতে হরিদাস গাঙ্গুলী এলেন, তারই বাড়িতে ছিল খাওয়ার কথা, ভুলেই গিয়েছিলাম। বাইরে আকাশ আজ বড় নীল । তালগাছগুলো মাথা তুলে দাড়িয়ে অনেকদূরের আকাশে। একটা খড়ের বাড়ি পড়ে আছে, দাওয়ায় গরুবাছুর উঠেছে। বাড়িটাতে কেউ নেই। দিদিদের বাড়িও গেলাম, আগেকার দিনের মত কি আর আছে ? আগে ট্রেনে যেতে যেতে দানিবাবু আমাকে সাহস দিতেন, তবে যেন শ্রীরামপুরের মাটিতে পা দিতে পারতুম। আজ সারাদিন ভীষণ দুৰ্য্যোগ, যেমন ঝড় তেমনি বৃষ্টি। সকালে কলেজ স্কোয়ারে বেড়াতে গিয়ে রমাপ্রসাদের সঙ্গে গল্প করলুম। তারপর স্কুল গেল ছুটি হয়ে। বৃষ্টির মধ্যে গেলুম ক্ষেত্রবাবুর সঙ্গে ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরী, সেখান থেকে প্রবোধ সরকারের দোকান হয়ে গুরুদাস চাটুযে এণ্ড সনস ও কাত্যায়নী বুক স্টল । ওখানে আমার একখানা উপন্যাস ‘আরণ্যক’-এর আজ কণ্টাক্ট হওয়ার কথা। হয়েও গেল। ঝড়-ঝঞ্চার মধ্যে সুধীর সরকারের বইয়ের দোকানে এলুম ট্রামে, সেখান থেকে রমাপ্রসাদের বাসায় এসে খানিকটা গল্প করি।