পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকণ HGණු পৌঁছে গিয়েছি, আমাদের গ৷ -“কোথা থেকে কোথায় এসেছি ছাথ ! বাওড়ের ধারে ছেলেবেলাকার মতই মেলা বসেচে। গোপালনগরের হাজারি ময়রা পাপর ভজিচে, বাসন-বেচা কুণ্ডু পানের দোকান খুলেচে, গ্রাম্য নরনারী ছেলেমেয়েদের ভিড় খুবই। বাওড়ে দশ পনেরো খান নৌকার বাচ, খেলা হচ্চে। শুামাচরণদ, ফণিকাক, সাতুকাক, বৃন্দাবন—এদের সঙ্গে দেখা হল । অমূল্য কামারের ছেলে এসে হাত ধরে বল্লে—কাক, একটা পয়সা দিন না, পাপর ভাজ। কিনব । রায়দের বাডির ছেলেরা আমনি ঘিরে দাড়াল—আমাদেরও দিন। প্রকাণ্ড বড় বটতলায় মেলা হয়। ছায়া পড়ে এলেচে ঘন হয়ে । আমি যেন স্বপ্ন দেখচি । কোথায় চট্টগ্রাম, রেণু—কোথায় মেঘনা আর পদ্ম, কুমিল্লা জেলা, নোয়াখালি জেলা, আর কোথায় দাড়িয়ে আছি একেবারে আমাদের গ্রামে, বাওডের ধারে বিজয়ার আড়ং দেখচি । সন্ধ্যা হয়ে আসচে, মেলার জায়গা থেকে বুড়ীর বাড়ি এলুম। বুড়ীকে কিছু দিলাম বিজয়ার দিন—সে তো আমায় দেখে কেঁদেই আকুল। এখন যেন আর ভাল চোখে দেখতে পায় না— বডড বয়েস হয়ে গিয়েচে । পুটি দিদিদের বাড়ি এসে দেখি বিলবিলের ধারে বসে পুটিদিদি বাসন মাজচে। খুকুদের বাড়িটা শূন্ত পড়ে রয়েচে । ন’দিদিদের সঙ্গে দেথা করলুম—তারপর সকলকে বিজয়ার প্রণাম করে কিশোর-কাকার বাড়ি এলুম। কিশোর-কাকা কিছুতেই ছাড়লেন না, বসিয়ে একটু জলযোগ করলেন। কতদিন কিশোর-কাকার বাড়ি বসে বিজয়ার দিন জলযোগ করিনি। তারপর অশথতলাটায় দাড়িয়ে একবার ভাবতে চেষ্টা করলুম—কালও ছিলুম পদ্মার ওপরে স্টীমারে—রাজাবাড়ি, বিক্রমপুর এপারে—ওপারে ফরিদপুর, কোথায় সেই চন্দ্রনাথে পাণ্ডার বাড়িতে সেই ছোট প্রতিমাখানা, সেই আমলকী গাছে ঠেস দিয়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে সমুদ্রের দিকে চেয়ে বসে থাকা—আর কোথায় আমার বারাকপুরের হেলা কাটালতলা ! চলে এলুম গাড়ি করে বনগায়ে । হরিবাবুর বাড়ি, পটলের বাড়ি, বীরেশ্বরবাবুর বাড়ি বিজয়ার প্রণাম, আলিঙ্গন সেরে ফেললুম। সুপ্রভাদের বাড়িতে তারাও আজ এমনি বিজয়ার প্রতি সম্ভাষণ করচে পরস্পরে। খুকু—মুপ্রভা—রেণু—ওদের সকলকেই মনে মনে বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দিই। এবার ভারী চমৎকার পূজো কাটল । সপ্তমীতে প্রতিমা দেখলুম চট্টগ্রামে, অষ্টমীতে চন্দ্রনাথে, নবমীতে কলকাতায় বিভূতিদের বাড়ি, দশমীর প্রতিমা বনগায়ে ও বারাকপুরে। আর কোথাও যাব না। চমৎকার জ্যোৎস্না উঠেচে—ঘোড়ার গাড়ি যেন চলেচে ঘন বনবীথির মধ্যে দিয়ে বনগায়ে । আমি বসে বসে চাটগায়ের কথা পথের কথা ভাবচি। সুপ্রভার কথা ভাবচি । কি মুন্দর জ্যোৎস্না, কি সুন্দর রাত্ৰি ! বনপুষ্পের জ্যোৎস্নামাখ মুবাস সন্ধ্যার হিম বাতাসে। আজ দিন-দশ বারো এখানে এসেচি। ক'দিন খুবই ভাল লেগেছিল—এখনও লাগচে মন নয়। বৈকালে কুঠীর মঠের সেই জলাটার ধারে বেড়াতে যাই— বনে ঝোপে সৰ্ব্বত্র বনমরচে ফুলের সুগন্ধ। ওইখানের ঝোপগুলোতে কেলেকোড়া আর কেঁয়োকাকার ফুল ফুটে গন্ধে আমোদ করচে–বিশেষ করে কেয়োবাকার ফুল। কুঠার মাঠের দিকে বনমরচে লতা বেশী নেই। রোদ রাঙা হয়ে আসে, তখনও পর্য্যন্ত বসে থাকি, আজ আবার এক রাখাল ছোড়া জুটে গল্প করে আমার চিন্তার ব্যাঘাত করতে লাগল। ফিরবার সময় আটির মাঠ দিয়ে গিয়ে বাওড়ের ধারের পথে পুড়ি ও গোসাইবাড়ির সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরি। আজাকি চমৎকার রাঙা মেঘ করেছিল সন্ধ্যার কিছু অাগে ! আমি গায়ের চেক্‌ চাদরখানা পেতে কতক্ষণ মাঠের মধ্যে বসে রইলুম ভূষণে জেলের কলাবাগানের পাশের জমিতে। এক পাশে আটর ডাঙায় নিবিড় বন, दि. ब्र. 8-२२