পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S86 दिङ्कडिब्रानांदौ কাল এখান থেকে চলে যাব । পূজোর ছুটি ফুরিয়ে গেল এবার খুকু ছিল না, তা হলেও কেটেছিল বেশ । বৈকালে প্রায়ই কুঠির মাঠে বনে ঝোপের ধারে বসে বিকেলটা কাটাতুম– ভারী আনন্দ পেতাম। এখন রাত্রি দশট, আমার ঘরে নির্জনে বসে লিখচি । পুটি দিদি মাঝের গা থেকে এসেচে, আমার জন্তে একটা ভাণ্ডীর ফুলের ডাল এনেচে ফুলমুদ্ধ। শু্যামাচরণ দাদাদের বাড়ি বসে একটু গল্প করে এলুম। কাল গ্রাম ছেড়ে যাব, সকলের জন্তেই কষ্ট হচ্চে। গঙ্গাচরণ মন্ত্র রায়দের বাড়ি বসে ভাঙা হারমোনিয়ম বাজিয়ে বেলুরো গলায় সেকেলে যাত্র দলের গান গাইচে ; মনে হচ্চে, আহ, ওই একটু গিয়ে বসে শুনে আসি। এদের সকলের জন্তেই কষ্ট হয়। গ্রামের এই সব লোক দরিদ্র, অশিক্ষিত—ওদের জীবনে কোন আমোদপ্রমোদ নেই—জগতের কিছু দেখেও নি, শোনেও নি। সকলের জন্তেই মন কেমন করে। মন্থ রায়দের বাড়ির মেয়েরা বাঘ-আঁচড়ায় গিয়েছিল কালীপূজো দেখতে—এখন সব গরুর গাড়ি করে বাড়ি এল । শীতে জেলের নৌকোয় বিকেলে বনগী এলুম। বেলা তিনটার সময় বেরিয়েচি, গাজন বঁশতলার ঘাটে মাছ ধরচি, ফণিকাক মাছ ধরচে চট্ৰকাতলার নীচে । চালকীর ঘাটে একটা লোক ছিপে প্রকাও কাছিম বাধিয়েছিল, আমরা নৌকো নিয়ে কাছে গেলাম, সুতো কেটে নিয়ে কাছিমটা গেল পালিরে। সীতানাথ মাঝি বিশ বছর আগে নেপাল মাঝির নৌকোয় ভোলা ও বরিশালে গিয়েছিল—সে গল্প করতে লাগল, ওরা নৌকোতে কাজ করত, বাদুড়ে থেকে খাবার জন্তে চলি ডাল কিনত। নলচিটিতে স্বপুরি কিনে বিক্রী করতে করতে বনগা পৰ্য্যন্ত আসত— ওখানে সব বিক্রী হয়ে যেত। নৌকোতে মধু ছিল—চালতেপোতার বাকে ছায়াভরা সেই মুন্দর বনঝোপের কাছে এসে সে নৌকোর দাড় বাওয়া রেখে তামাক সাজতে বসল। রোদ ক্রমে রাঙা হয়ে এল, দুধারে বড় ঝোপ, সাইবাবলা বনের অপূৰ্ব্ব শোভা । পূজোর ছুটিটা বারাকপুরে বেশ কেটেচে, বরোজপোতার ডোবার ও পাড়ের কথা এখনও ভুলতে পারচি নে। এই বঁাশবাগানটায় কি যে একটা মায়া আছে। তারপর সাজিতলার বনগা এবার নতুন আবিষ্কার। সকলের চেয়ে আমার ওইটাই লেগেচে ভাল। কুঠীর মাঠের জলার ধারে ওই ডাঙাটা । সবই ভাল, কেবল সন্ধ্যার পরে লোক অভাবে বড় নির্জন লাগে । নয়তো এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সমাবেশ কোথায় আছে কলকাতার এত কাছে ? সুপ্রভাকে পাঠাব বলে কিছু বনের ফুল সংগ্রহ করেছিলুম। কাল পাঠাব। কাল বৈকেলে খুকুদের ওখানে দেখাশুনো করে এলুম। বেশ কাটল বিকেলটা । যতীনদার বাড়ির ধারের ডোবাটাতে সকালে উঠে যেতে গিয়ে দেখি সাদা সাদা কচুরির ফুল ফুটে আলো করে রেখেচে । কি যে তার শোভা ! আবার বেড়িয়ে ফিরবার সময় ঘণ্টা-দুই পরে দেখি স্বর্ঘ্যের কিরণে ফুলগুলোর রঙ এর মধ্যেই নীলাভ হয়ে উঠেচে। স্বৰ্য্যের আলোর কি যে রসায়ন বুঝলুম নী—ফুলগুলির কাছে ঘাসপাতায় কি ল্যাবোরেটরি নিহিত, তাই বা কে বলবে ? আমি দেখে ভারি মুগ্ধ হয়েচি ! , , আজ সকালে রাম অধিকারী ডাক্তারের সঙ্গে দেখা মীর্জাপুর স্ত্রীটে। সে ধরে নিয়ে গেল তার বাড়ি। সেখান থেকে গল্পগুজব করে এসে বাড়িতে অভিভাষণের শেষটুকু লিখি। দুপুরের