পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Փ8Հ বিভূতি-রচনাবলী সাহায্য কর, পরস্পরকে elevate করা। কিন্তু অজ্ঞান অন্ধকারে ডুবে থাকার জন্যেই পরস্পরকে শত্র বিবেচনা করে। নইলে কি স্পেনে উড়োজাহাজ থেকে বোমা ফেলে অসহায় শিশু ও নারীদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে পারত আজ ? মনে পড়ল, পিসীমা শীতের বদলে "জাড়' কথাটা ব্যবহার করতেন, ছেলেবেলায় শুনেচি । এখন আর কারো মুখে আমাদের গায়ে ও কথাটা শুনিনে। আজ বিকেলে P. E. N. Club-এর একটা বিশেষ অধিবেশন ছিল, সরোজিনী নাইডু ছিলেন প্রধান অতিথি । তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন— তাই এই বিশেষ অধিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল । সকালে আজ কলেজ স্কোয়ারে যখন বেড়াতে যাই, তখনও আমি জানতুম না যে ব্যাপারটা আজই হবে। সরোজ ও গিরিজাদা ছিল স্কোয়ারে, আমি আর রামপ্রসন্ন তো আছিই । ওখানেই সরোজ কথাটা বল্পে, কারণ আমি তখনও পর্য্যন্ত চিঠি পাইনি—তারপর বেড়িয়ে এসে পত্র পেলাম । নীরদবাবুর সঙ্গে গেলাম, চৌরঙ্গীতে একটা রেস্তরীতে হচ্ছে। খুব বেশী লোক হয়নি, জন চল্লিশ । মেয়েদের মধ্যে শাস্ত ও সীতা দেবী । আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে সুরেশ বাড়য্যে, সরোজ চৌধুরী, সুধীরবাবু—মণি বোল—এই জনকতক । খগেন মিত্র ও হুমায়ুন কবীর একটু দেরি করে এলেন । সরোজিনী নাইডু দেখলুম অদ্ভুত কথা বলতে পারেন। মেয়েদের মধ্যে অমন সুবক্তা আর অমন নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ মেয়ে আমি খুব কমই দেখেচি । ইংলণ্ডের নানা সাহিত্যিকদের সঙ্গে তরুণ বয়সে কি ভাবে ওঁর প্রথমে আলাপ হয়, সে বিষয়ে অনেক গল্প করলেন, ভারতের অন্তান্ত প্রাদেশিক সাহিত্যের কথা এত ভাল লাগছিল আমার যে আরও দু ঘণ্টা বল্পে যেন ভাল হয়, এমন মনে হচ্ছিল । ওখান থেকে সোমনাথবাবুর ও সুশীলবাবুর বাড়ি হয়ে ফিরলুম নীরদবাবুর বাড়িতে। ওরা "বিচিত্র সম্পাদক হওয়ার জন্তে আমায় বিশেষ অনুরোধ করচে, কিন্তু আমি রাজী হইনি। সুশীলবাবু আজ বিশেষ পীড়াপীড়ি করলেন । আমার তো ইচ্ছে নয়। ঈদের ছুটিতে শুক্রবারে বনগা এসেচি। একদিন রাজনগরের মাঠে গিয়ে বিকেলে বসি। ঠিক যেন ইসমাইলপুরের সেই সোদামাটির ও কাশের গন্ধ। পরদিন চলে গেলুম বারাকপুরে। পুটিদিদি এক বাড়ি আছে। বরোজপোতার ডোবার ধারের বাশবাগান শীতের দুপুরে কি সুন্দরই হয়েচে । দুপুরের পরে গেলুম কুঠার মাঠে ইন্দুদের বাড়ি খেয়ে । ছোট এড়াঞ্চির গাছে মুকুল ধরেছে—নির্জন মাঠ, ভূষণ জেলের পুরোনো কলা বাগানের পাশেই। ভারী মুনার লাগছিল। রোদ রাঙা হয়ে গেলে উঠে এলুম বরোজপোতার বাশবনে আবার । তারপর হেঁটে বনগীয় এলুম সন্ধ্যার পরে। আজই সকালে দেশ থেকে ফিরেচি। দেশে ভারী চমৎকার কাটুল, যদিও খুকু ছিল না, কেউ ছিল না। একাই পুটিদিদিদের ঘরে থাকতুম, সকালে বিকেলে নিজে খাবার তৈরী করে খেতুম, কঞ্চি কাটতুম, জল আনতুম, কাঠ ও বাশের শুকনো খোলা কুড়িয়ে আনতুম। আর রোয়াকে বসে আরণ্যক’ লিখতুম, খুকুদের বাড়ির দিকের নেবুতলার ঘাটে ফিরে সেই মেয়েটি