পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯ58\ყ বিভূতি-রচনাবলী রাখলাম। প্রথম কথাটা আগে বলি। . ১৯১৩ সালে যখন আমি বনগায়ে বিধুবাবুর ওখানে থাকি, ফাস্ট ক্লাসের ছাত্র, তখন নতুন ‘ভারতবর্ষ বেরুল । মন্মথবাবু মোক্তার আমাকে তখন ‘ভারতবর্ষ পড়তে দিতেন। ‘ভারতবর্ষ-এ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামক একজন নতুন লেখকের গল্প পড়ে অল্প বয়সেই মোহিত হয়ে যাই । ভাবি, এমনধারা লেখক তো কখনো দেখি নি—কত তো গল্প পড়েছি। তারপর বহুদিন কেটে গিয়েচে, যাক্ । গত রবিবার সেই বনগয়ে সেই মন্মথ মোক্তারের বৈঠকখানায় বসে গল্প করচি অনেকে— এমন সময় অপূৰ্ব্বর ছেলে অরুণ একখানা অমৃতবাজার পত্রিক হাতে দিয়ে বল্লে—শরৎবাবু মারা গিয়েচেন, এই যে কাগজ । শরৎচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ কাগজখানায় বেরিয়েচে, রবিবারে তিনি বেলা দশটার সময় মারা গিয়েচেন । কি যোগাযোগ তাই ভাবি। কত জায়গায় বেড়ালুম, কত দেশে গেলুম, কত লোকের বৈঠকখানায় বসলুম-কিন্তু শরৎচন্দ্রের মৃত্যুসংবাদ কোথায় পেলুম—ন সেই বনগায়ে, সেই মন্মথ মোক্তারের বৈঠকখানায়, যে আমায় অত বছর আগে শরৎচন্দ্রের লেখার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় করে দিয়েছিল ! ভাববার কথা নয় ? এইবার অন্তটার কথা বলি। সেটা ঘটলো আজ এখুনি, এই সন্ধ্যার সময় । ১৯১৯ সালের জানুয়ারী মাসে আমি মীর্জাপুর স্ত্রীটের একটা উড়ে ঠাকুরের হোটেলে দিনকতক খেতুম। উড়ে ঠাকুরটার নাম মুন্দর ঠাকুর। সে এখনও আছে বেঁচে, তবে ওখানকার হোটেল সে আজ ১৫১৬ বছর উঠিয়ে দিয়েচে । মাঝে মাঝে তার সঙ্গে পথে-ঘাটে দেখাশোনা হয় । এখন এই ১৯১৯ সালের জানুয়ারী মাসে আমার জীবনে বড় শোকাবহ দুদিন—হাতে নেই পয়সা, মনেও যথেষ্ট অবসাদ ও হতাশা। গৌরী সেবার মারা গিয়েচে । সুন্দর ঠাকুরের দোকানে রাত্রে গিয়ে লুচি খেতুম—কোথা থেকে যে দাম দেব না ভেবে খেয়েই যাচ্ছি, খেয়েই যাচ্ছি। তারপর সুন্দর ঠাকুরের হোটেল উঠে গেল, সেখানে অন্ত কি দোকান হল । আমিও চলে গেলুম কলকাতার বাইরে। জাঙ্গিপাড়, হরিনাভি, চাটগাঁ, কুমিল্ল, ভাগলপুর, মুঙ্গের নানাস্থানে —কোথায় বা না গিয়েচি চাকরি নিয়ে ? বহুকাল পরে কলকাতায় ফিরে আবার যখন এইথানেই চাকরি নিলুম, মীর্জাপুর স্ট্রট দিয়ে যাবার সময় সুন্দর ঠাকুরের হোটেলের ঘরটা প্রায়ই চোখে পড়ত। ভাবতুম পুরোনো দুর্দিনের কথা। ওই ঘরটায় সেদিন আমার সেই মেঘাচ্ছন্ন দিনগুলির স্মৃতি ঘনিষ্ঠভাবে জড়ানো—না ভেবে পারিনে । - আজ একটা বালিশের থোলে তুলে ভৰ্ত্তি করার দরকার হল। পাটনায় বক্তৃতা আছে শনিবার, সেখানে যেতে হবে, অথচ বালিশ নেই। মীর্জাপুর স্ত্রীটে এক জায়গায় একটা তুলোর দোকান। দোকানে বসে তুলো ভৰ্ত্তি করে উঠতে যাচ্ছি এমন সময়ে নজর করে দেখলুম এটা সেই পুরোনো দিনের সুন্দর ঠাকুরের সেই হোটেলের ঘরটা। আজ সেখানে তুলোর দোকান হয়েচে । মনে পড়ল এও জানুয়ারী মাস এবং ১৯১৯ সালের পরে আজ এই প্রথম আবার সেই ঘরটাতে ঢুকে বসলুম। তারপর ফিরে আসচি হঠাৎ মনে পড়ল বালিশের খোলটা সুপ্রভা তৈরী করে পাঠিয়ে দিয়েছিল কিছুদিন আগে। কি অভাবনীয় যোগাযোগ।