পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ \ව8° কাল হাওড়া স্টেশনে ট্রেন অত্যন্ত দেরিতে এল । রাত্রে ঘুম ভাল হয় নি। একে তো বেজায় শীত, তার ওপর কৃষ্ণপক্ষের ভাঙা চাদ উঠেছে দূর মাঠের মাথায়। ট্রেনের জানালা খুলে সেই শীতের মধ্যেও ই করে চেয়ে আছি। সৌভাগ্যের বিষয় একটা কামরা আমরা একেবারে খালি পেয়েছিলুম, অরবিন্দ গুপ্ত বলে এক ভদ্রলোক ( অত্যন্ত সুপুরুষ লোক, আমি অমন স্বপুরুষ খুব কমই দেখেচি) সপরিবারে পশ্চিমের দিকে যাচ্চেন, তারই কেবল ছিলেন আমার কামরাতে, আর কেউ নয়। একখানা পুরোনো ডায়েরী ছিল আমার কাছে বাবার, তাতে পড়ে দেখা যায় —বাবা ১২৮৭ সালের দিকে পশ্চিম ভ্রমণে বেরিয়ে এই পাটনা, মুঙ্গের, আগ্রাতে এসেছিলেন। ভোর হল শিমূলতলা স্টেশনে। আর বছর যথন পাটনা আসি, আমি, সজনী, নীরদ, ব্ৰজেনদা—ভোর হয়েছিল কিউল স্টেশনে। অরবিন্দবাবুটি অতি ভদ্রলোক, আমাকে খাবার খেতে দিয়ে বল্লেন—একটু মিষ্টিমুখ করুন। অথচ তিনি আমায় জানেন পর্যন্ত না । রৌদ্র উঠল কিউলে। বিহারের দূরবিপনী প্রান্তর, অড়রের ক্ষেত, সরিষার ক্ষেত, খোলার বাড়িওয়ালা গ্রাম, চালে চালে বসতি, ইদারা, ফণি-মনসার ঝোপ, মহিষের দল আরম্ভ হয়ে গিয়েচে । শিমূলতলায় পাহাড়ের শোভা যদিও তেমন কিছু দেখলুম না, তবুও শেষ রাত্রের জ্যোৎস্নায় সাওতাল পরগণার উচ্চবিচ প্রাস্তর ও ছোটখাটো পাহাড়রাজি দেখতে দেখতে এত বিভোর হয়ে গেলুম যে ঘুম কিছুতেই এল না। পাটনা স্টেশনে মণি ও কলেজের ছাত্রের নামিয়ে নিতে এসেচে। তার আগে বক্তিয়ারপুর স্টেশনে কাল ও পশুপতি প্ল্যাটফৰ্ম্মে দাড়িয়ে ছিল দেখা করবার জন্তে। অনেকদিন পরে ওদের সঙ্গে দেখা হল । মণিদের বাডি আসবার কালে মোটরটা বড় ঘুরে এল—কারণ এক জায়গায় রাস্তায় পিচ, দেওয়া হয়েচে নতুন । তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আজকাল পাটনাতেই রয়েচে, আমার সঙ্গে দেথা করতে এসে বল্লে, এ জায়গা ভাল লাগচে না, বাংলাদেশে ফিরতে চায়। তারাশঙ্কর একজন সত্যিকার ক্ষমতাবান লেখক, বাংলার মাটি থেকে ও প্রাণরস সঞ্চয় করেচে, ওর কি ভাল লাগে এসব জায়গা ? মণিদের ছাদের ওপরে দুপুরের নীল আকাশের তলায় বসে এই অংশ লিখচি। সুপ্রভাকে একটা চিঠি দেব। দূরে তালের সারির মাথায় অনেকটা দূর দেখা যাচ্চে, এই নিস্তব্ধ দুপুরে সুদূর বাংলার একটি সজনে ফুল বিছানো পল্লীপথের কথা মনে পড়চে, একটি সরল পল্লী বালিকা এ সময়ে কি করচে সে কথাও ভাবচি । ছাদের ওপর যোগীনবাবুর দুই নাতনী খেলতে এসেচে আর বলচে— চু কপাটি আইয়৷ যাকে পাবে ভাইয়া--- এ কি রকম খেলার ছড়া ? বাংলাদেশে তো এ ছড়া কোন ছেলেমেয়ের মুখে শুনিনি! . পাটনা কলেজের হলে মিটিং। সেখানে অনেকদিন পরে অমরবাবুকে দেখে বড় আনন্দ পেলুম। সেই ভাগলপুরের অমরবাবু ! ইনি শুনলুম এখন এখানে রেভিনিউ বোর্ডের সেক্রেটারী, কিছুদিন আগে এখানকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ছিলেন। তারাশঙ্করও উপস্থিত ছিল, ও আজকাল এখানেই থাকে মামার বাড়িতে। সভার টেবিলে বাবার পুরোনো ডায়েরখানা পড়ে দেখছিলুম তিনি পাটনায় এসেছিলেন কবে। ঠিক সাড়ে ছাঁটার সময়ে সভা থেকে উঠতে হল, তারাশঙ্করকে সভাপতির আসনে বসিয়ে চলে এলুম, সঙ্গে সঙ্গে এলেন অমরবাৰু। ডক্টর বিমানবিহারী মজুমদার পিছু পিছু এসে বল্পেন—একটা কথা বলতে সঙ্কোচ হচ্চে, আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ,