পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ○8為 এই পাহাড়টার নামই গৃধ্ৰুকুট । গৃধ্ৰুকুটের ওপরে কাটগাছপালা ঠেলে অনেকটা উঠলুম। এক জায়গায় পাথর ঠেস দিয়ে যুৎ করে বসলুম । ঠিক দুপুর, নিৰ্ম্মেঘ, নীল আকাশ । দূরে প্রত্নতত্ত্ববিজ্ঞান দ্বারা খোদিত একটা স্তুপ বা চৈত্য দেখা যাচ্ছিল। পাহাড় থেকে নেমে আমি সেটা দেখতে পেলুম, কালী পাথরের কুড়ি কুড়তে লাগল। আমি চৈত্যটি দেখে ফিরবার সময় বাশবনের ছায়ায় ঝরণার স্রোতের ধারে খানিকক্ষণ বসলুম। ওরা ততক্ষণে চলে গিয়েচে । এখানেই সেই করন্ত বেণুবন, যেখানে বুদ্ধদেব মহানিৰ্ব্বাণ স্বত্র বিবৃত করেন আনন্দকে। কালের কুয়াসায় সব ঢেকে মুছে একাকার হয়ে গিয়েচে কোথায় কি আজ ! আড়াই হাজার বছর আগেকার মত বেণুবন কিন্তু রাজগীরের উপত্যকায় অজস্র। ব্রহ্মকুণ্ডের উষ্ণ জলে স্নান করে সারাদিনের ক্লাস্তি দূর হল । তারপর আমি একটা খাবারের দোকানে কিছু থেয়ে ছায়ায় বসে দূর পাহাড়ের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলুম—হঠাৎ মনে পড়ল আজ গোপালনগরের হাট, বেলা তিনটে, সাড়ে-তিনটে—এতক্ষণ বটতলা দিয়ে কত লোক হাটে চলেচে । ফিরবার পথে সন্ধ্যার ছায়া পড়ে এসেচে বড় বড় মাঠে । একজন চৈনিক লামা আর একজন লামাকে গাড়িতে তুলে দিতে এসে কি একটা বাজনা বাজাচে টাং ট্যাং করে, আর কেবল ঘাড নীচু করে প্রণাম করচে। সে ভারী সুন্দর দৃপ্ত ! ট্রেন ছেড়ে গেলেও অনেকদূর পর্যন্ত বাজাতে বাজাতে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে এল । বক্তিয়ারপুর পৌছে একটি ছোকরা তার কবিতা শোনাতে বসল। গাড়িতে তার লেখা কবিতা দু'তিনটা শোনালে । সাহিত্যপ্রীতি ওদের বেশ প্রশংসনীয়—তবে দূর বিহারের দেহাতে কে ওদের উৎসাহ দিচ্ছে আর কে-ই বা ওদের কবিতা ছাপাচ্ছে ! রাত্রের ট্রেনেই কলকাতা রওনা হলুম, দানাপুর এক্সপ্রেসে । সারা রাত্রি ঘুম এল না। একবার একটু তন্দ্ৰামত এসেছিল—উঠে দেখি জসিডি স্টেশন। তারপর আবার শুয়ে পড়লুম —ভাঙা কৃষ্ণপক্ষের চাদ উঠেচে, বেজায় ঠাণ্ড বাতাস হু হু করে বইচে, জানালা দিয়ে মুখ বার করলে মুখে যেন লক্ষ ছুচ ফোটে। কুয়ার্সা হয়েচে, বনগুলো যেন ঠিক ইসমাইলপুরের সেই বন—অনেক রাত্রে উঠে এই শীতের সময় ইসমাইলপুর কাছারীতে ঠিক যেমন বন দেখতুম, তেমনি দেখাচ্চে । পাটনা থেকে এসে মধ্যে অনেক ব্যাপার হয়ে গেল। মধ্যে সুপ্রভা কলকাতা এল ওর মাবাবার সঙ্গে। একদিন ওর সঙ্গে ‘মুক্তি দেখতে গেলুম "চিত্রা'তে। ভাল লাগল না করে, সেবা ও রবি ছিল সঙ্গে । তারপর আমার পড়ে গেল বনগ্রামে সাহিত্য-সম্মেলনের হুজুগ । বিশ্বনাথ এখানে খুব যাতায়ত করলে। খগেন মিত্র মহাশয় সভাপতি হয়ে গেলেন এখান থেকে, রমাপ্রসন্ন ও গৌর পাল গেল, খুব হৈ হৈ কাও হয়ে গেল সরস্বতী পূজোর সপ্তাহে। সাহিত্যসম্মেলন থেকে আমায় আবার দিলে একটা মানপত্র ও অভিনন্দন । - পরের সপ্তাহেই পড়ে গেল কৃষ্ণনগর সাহিত্য-সম্মেলন। আমি ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেলুম। চমৎকার জ্যোৎস্না উঠেচে, কোকিল ডাকচে, শীত যদিও বেশ, কিন্তু বসন্তের আমেজ দিয়েচে । বাড়ি গেলুম, পাড়ায় কেউই নেই এক ন'দি ছাড়া। নিজের খড়ের ঘরটিতে দুপুরে শুয়ে খুব ঘুম দিই। আগের রাত্রে যতীনকাকার মেয়ে উষার গিয়েচে বিয়ে । তখনও বরযাত্রীরা রয়েচে । যতীনকাকার মেয়ের বিয়ে দেখচি চিরকাল। ঐ একই চণ্ডীমণ্ডপে । 馨 বৈকালে কুঠার মাঠে গাছে গাছে পাকা কুল খেয়ে বেড়াই। ভূষণ জেলের ছেলের জমিতে খেজুর গাছটা ঠেস দিয়ে বসে আরণ্যক’ উপন্যাসের এক অধ্যায় লিখি। সন্ধ্যাবেলায় ইন্দুর